জাকার্তায় কুকুরের মাংস নিষিদ্ধের প্রস্তাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা শিগগিরই কুকুরের মাংস বিক্রি ও খাওয়া নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। সরকার জানাচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও প্রাণিকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। তবে এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুকুরের মাংস বিক্রেতা ও ক্রেতারা।
জাকার্তার এক রেস্তোরাঁ মালিক লাস্ত্রি বলেন, “আমরা বন্য কুকুর থেকে মাংস সংগ্রহ করি, গৃহপালিত নয়। আমি নিজেও কুকুর পুষি, কিন্তু তাদের কখনো খাবার হিসেবে ব্যবহার করি না।”
স্বাস্থ্যের যুক্তি ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস
কুকুরের মাংস খাওয়ার পক্ষে কিছু মানুষ দাবি করছেন, এটি রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায় এবং ডেঙ্গু রোগীদের জন্য উপকারী। জাকার্তার ওয়েটার লেক্সি টোবিং বলেন, “সরকার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর চাপে নিষেধাজ্ঞা আনছে, যা ন্যায়সংগত নয়। এই মাংস সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।”
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। জাকার্তা-ভিত্তিক অনলাইন চিকিৎসা প্ল্যাটফর্ম ‘ক্লিকডক্টর’-এর চিকিৎসক ড. থেরেসিয়া রিনা ইউনিতা সতর্ক করে বলেন, “কুকুরের মাংস খাওয়া জলাতঙ্ক ও সালমোনেলা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে জানায়, জলাতঙ্কে আক্রান্ত প্রাণীর মাংস কাটা বা খাওয়া মানবদেহে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিক্রেতা ও ভোক্তাদের বাস্তবতা
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার আগেই জাকার্তায় কুকুরের মাংস বিক্রি অনেক কমে গেছে। সামাজিক চাপ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো জনমত গড়ে তুলতে সফল হয়েছে।
তবে এই পরিস্থিতিতে লাস্ত্রির ব্যবসা বেড়েছে। তিনি বলেন, “এখন আমার ক্রেতা টাঙ্গেরাং ও বেকাসি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। খাবার পাঠানোর খরচ অনেক বেড়েছে, তবুও চাহিদা আছে, কারণ অনেক দোকান এখন আর কুকুরের মাংস বিক্রি করছে না।”
উত্তর সুমাত্রার বাতাক জনগোষ্ঠীর খাবারে কুকুরের মাংস বিশেষ পদ হিসেবে পরিচিত, যা স্থানীয় ভাষায় “বি১” নামে পরিচিত। তাদের জনপ্রিয় লাপো চেইন ‘নি তন্ডোংটা’ ২০২৩ সালে কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধ করেছে।
প্রশাসনের উদ্যোগ ও প্রাণী অধিকার আন্দোলন
২২ অক্টোবর জাকার্তার গভর্নর প্রামোনো আনুং জানান, “কুকুর ও বিড়ালের মাংস নিষিদ্ধের বিধিমালা আগামী এক মাসের মধ্যে জারি করা হবে।”
প্রাণী অধিকার সংগঠন ‘ডগ মিট ফ্রি ইন্দোনেশিয়া (DMFI)’ জানিয়েছে, জাকার্তায় প্রতি মাসে প্রায় ৮,০০০ কুকুর জবাই করা হয়, যা ২০২০ সালের ৯,৫০০ কুকুরের তুলনায় কিছুটা কম। সংগঠনটির মতে, পশ্চিম জাভার মতো জলাতঙ্কপ্রবণ এলাকা থেকে অবৈধভাবে কুকুর আনা হয় এবং অনেক সময় এগুলো চুরি করা পোষা প্রাণী।
জাকার্তা অ্যানিমেল এইড নেটওয়ার্কের প্রধান ভেটেরিনারিয়ান মেরি ফের্নান্ডেজ বলেন, “ইন্দোনেশিয়ার ৩৮টি প্রদেশের মধ্যে মাত্র ১১টি এখন জলাতঙ্কমুক্ত। যদি কুকুরের মাংস ব্যবসা বন্ধ না হয়, তবে কোনো প্রদেশই নিরাপদ থাকবে না।”

পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরায়ণ ও প্রজন্ম পরিবর্তনের কারণে শহুরে তরুণদের মধ্যে কুকুরকে পোষা প্রাণী হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়ছে, ফলে কুকুরের মাংসের চাহিদা কমছে। প্রাণী অধিকার কর্মীরা আশা করছেন, জাকার্তার সিদ্ধান্ত দেশের অন্যান্য প্রদেশেও প্রভাব ফেলবে।
ইন্দোনেশিয়ায় বর্তমানে মধ্য সুলাওসি, পূর্ব নুসা তেংগারা ও উত্তর সুমাত্রা প্রদেশে কুকুরের মাংস বিক্রির প্রবণতা বেশি। ইতিমধ্যে বালি, সেমারাং ও কারাংগানিয়ার প্রদেশে নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রাণী অধিকারকর্মীদের ভাষায়, “জাকার্তার উদ্যোগ যদি সফল হয়, তা হলে এটি গোটা ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণী কল্যাণে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে।”
# ইন্দোনেশিয়া,# জাকার্তা,# কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ, #জলাতঙ্ক, #প্রাণী অধিকার, #জনস্বাস্থ্য, #ডগ মিট ফ্রি #ইন্দোনেশিয়া, #প্রামোনো আনুং, #সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















