মানসিক অসুস্থতার জন্য MAID সম্প্রসারণ বিতর্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় ‘মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ডায়িং’ (MAID) আইনকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে—বিশেষত মানসিক অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই সুযোগ প্রয়োগ করা উচিত কি না তা নিয়ে।
এই আইনের সমর্থকরা দাবি করছেন, মানসিক অসুস্থদের মৃত্যুর সিদ্ধান্তকে অবাস্তব বা অযৌক্তিক ভাবা একধরনের কলঙ্ক ও ভুল ধারণা। তাদের মতে, শারীরিক অসুস্থদের মতো মানসিক রোগীরাও নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
অন্যদিকে বিরোধীদের মতে, আত্মহত্যার প্রবণতা ও MAID অনুরোধের মধ্যে পার্থক্য বোঝার জন্য আরও নিরাপত্তা ও মূল্যায়নব্যবস্থা প্রয়োজন। তাই ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সম্প্রসারণ বিলম্বিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রাদেশিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রস্তুতির সুযোগ পায়।
জীবন শেষ নয়, সহায়তার প্রসার প্রয়োজন
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অসুস্থতায় ভোগা মানুষদের জন্য মৃত্যুর সুযোগ দেওয়ার বদলে, কীভাবে তাদের মর্যাদাপূর্ণভাবে বাঁচতে সাহায্য করা যায়—এই প্রশ্নটাই হওয়া উচিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
![]()
কানাডার সেন্টার ফর অ্যাডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ (CAMH) জানায়, মানসিক অসুস্থতা দেশটির সর্বাধিক অক্ষমতাজনিত কারণ। অথচ চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে দিনদিন।
প্রতিটি রোগীর পেছনে রয়েছে এক বা একাধিক পরিবারের সদস্য—জৈবিক, আইনগত বা নির্বাচিত—যারা নীরবে সেই কষ্ট ভাগ করে নেন। কিন্তু এই পরিবারগুলো নিজেরা কোথায় সহায়তা পায়?
পরিবার-সহায়তা ব্যবস্থার অবক্ষয়
দীর্ঘ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ মানসিক রোগীর আরোগ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কানাডাজুড়ে পরিবারকেন্দ্রিক সহায়তা কার্যক্রম অনেক কমে গেছে।
বিশেষত অভিবাসী, দরিদ্র ও বর্ণভিত্তিক পরিবারগুলো আরও কম সহায়তা পাচ্ছে।
প্রমাণভিত্তিক যেসব উদ্যোগ পরিবারকে সহায়তা করতে পারে তার মধ্যে রয়েছে—পারিবারিক শিক্ষামূলক কর্মসূচি, সহকর্মী সমর্থন ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতিনির্ভর কমিউনিটি সেবা, যা পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে কাজ করে।
রোগী ও পরিবারের সমন্বিত সুরক্ষা
মানসিক অসুস্থতায় কষ্ট লাঘবের নামে মৃত্যুর ব্যবস্থা তৈরির পাশাপাশি সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত এমন এক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা মানুষ ও তাদের পরিবারের জীবনমান উন্নত করে।
বর্তমানে পরিবারগুলো মানসিক অসুস্থতা সামাল দিচ্ছে সমাজের অগোচরে—তাদের দুঃখ ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে দেখা হয়। অথচ বাস্তবতা বলছে, মানসিক কষ্ট কোনো ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক ইস্যু।
যেসব পরিবার সহায়তা পাচ্ছে না, তাদের চাপ গোটা সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
পরিবারগুলোর অভিজ্ঞতা ও বৈষম্য
অন্টারিও অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থা নেই। অনেক পরিবারই বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বে ভোগে।
যেসব পরিবার ঐতিহ্যগত সংজ্ঞার বাইরের, কিংবা যাদের আর্থসামাজিক অবস্থা দুর্বল—তারা আরও বড় বাধার মুখে পড়ে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, ভাষা ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য, সামাজিক বৈষম্য—সব মিলিয়ে সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এই ঘাটতি পূরণ না হলে, কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য সংকট আরও তীব্র হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি যত্ন ও শিক্ষার প্রয়োজন
মানসিক রোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার প্রয়োজন। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি—যাতে কেউ সাহায্য চাইতে লজ্জা না পায়।
‘ফ্যামিলি কেয়ারগিভিং প্রজেক্ট’-এর আওতায় অনলাইন শিক্ষামূলক উপকরণ তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, যা পরিবার ও চিকিৎসক উভয়ের জন্য সহায়ক হতে পারে।

তবে এসব প্রচেষ্টার পাশাপাশি সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তাও অপরিহার্য। গত বছর অন্টারিও সরকারকে ১,৫০০ নাগরিকের স্বাক্ষরসহ একটি পিটিশন জমা দেওয়া হয়, যেখানে পরিবারের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।
মৃত্যুর বদলে জীবনের সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরে চলা মানসিক অসুস্থতা ও বারবার চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার অভিজ্ঞতা পরিবারগুলোর জন্য গভীর যন্ত্রণা বয়ে আনে।
এই বাস্তবতায় MAID সম্পর্কিত আলোচনায় মানসিক রোগীদের অংশগ্রহণ জরুরি, কারণ তাদের কষ্ট প্রকৃতই গভীর। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মনোযোগ থাকা উচিত দীর্ঘমেয়াদি সহায়তায়—শুধু সংকটকালীন চিকিৎসা নয়।
মৃত্যুর অনুমোদনের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন এমন সেবা ও সম্পদ, যা দীর্ঘমেয়াদে রোগী ও পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ রক্ষা করে।
# মানসিক_স্বাস্থ্য, #কানাডা,# MAID, #পরিবার_সহায়তা, নীতি_#বিশ্লেষণ, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















