২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের কাঁচা তেলের মজুদের প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। আগের মাসের তুলনায় উদ্বৃত্ত তেলের পরিমাণ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এর মূল কারণ ছিল তেলের আমদানি হ্রাস ও রিফাইনারি কার্যক্রমে তীব্র বৃদ্ধি, যার ফলে মজুদের জন্য অতিরিক্ত সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
আমদানি ও উৎপাদনের পরিবর্তন
সেপ্টেম্বর মাসে চীনের কাঁচা তেল আমদানি দাঁড়ায় দৈনিক ১১.৫ মিলিয়ন ব্যারেল (ব্যারেল প্রতি দিন), যা জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। একই সময়ে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৪.৩২ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন। এই দুই উৎস মিলিয়ে মোট সরবরাহযোগ্য তেল দাঁড়ায় ১৫.৮২ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন।
অন্যদিকে, রিফাইনারিগুলো সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিদিন ১৫.২৫ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন তেল প্রক্রিয়াজাত করেছে — আগস্টের ১৪.৯৪ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন থেকে সামান্য বেশি। ফলে সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বৃত্ত তেল ছিল মাত্র ৫৭০ হাজার ব্যারেল প্রতি দিন, যেখানে আগস্টে তা ছিল ১.০১ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতি দিন।
উদ্বৃত্ত তেল ও মজুদের প্রবণতা
এই উদ্বৃত্ত তেলের পুরো অংশ যে মজুদে যুক্ত হয়েছে তা নয়, কিছু অংশ ছোট বা আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ডবিহীন রিফাইনারিতে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবুও সরকারি হিসাব অনুযায়ী মার্চ মাস থেকে চীন অভ্যন্তরীণ জ্বালানির চাহিদার তুলনায় বেশি তেল আমদানি করে আসছে।
বছরের প্রথম নয় মাসে গড় উদ্বৃত্ত তেলের পরিমাণ ছিল ৯৩০ হাজার ব্যারেল প্রতি দিন, যা আগস্ট পর্যন্ত ৯৯০ হাজার ব্যারেল প্রতি দিন ছিল। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরের পতন পুরো বছরের গড় পরিমাণকেও কমিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব
চীনের এই প্রবণতা বৈশ্বিক তেলবাজারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। জুন মাসে তেলের দাম সাময়িকভাবে বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮১,৪০ ডলার হয়েছিল, কিন্তু অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তা নেমে আসে প্রায় ৬১ ডলারে। দাম কমে যাওয়ায় চীনের রিফাইনারিগুলো আবারও মজুদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে পারে, কারণ নিম্নমূল্যের সময় অতিরিক্ত ক্রয় তাদের জন্য লাভজনক।
তবে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ রয়েছে যে চীন ও ভারত যেন রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণ কমায়। ফলে যদি বেইজিং রুশ তেল আমদানি সীমিত করে, তাহলে বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
তেলের বর্তমান নিম্নগতি এবং OPEC+ সদস্যদের উৎপাদন কাটছাঁটের পরিকল্পনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আসন্ন মাসগুলোতে তেলের দাম আরও নেমে যেতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে এমন পরিস্থিতিতে চীনের রিফাইনারিগুলো দ্রুত মজুদ বাড়িয়ে নেয় — যা বিশ্ববাজারে সরবরাহ ও দামের ভারসাম্যে বড় ভূমিকা রাখবে।
চীনের কাঁচা তেল মজুদের পতন শুধু দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় নয়, বৈশ্বিক তেলবাজারেও প্রতিফলিত হচ্ছে। তেলের দাম নিম্নমুখী থাকলে চীন আবারও মজুদ বৃদ্ধির দিকে যেতে পারে — যা আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন চাহিদার ধাক্কা তৈরি করতে পারে।
#চীন,# তেলবাজার,# কাঁচা_তেল,# রিফাইনারি,# বৈশ্বিক_অর্থনীতি, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















