দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে এপিইসি সম্মেলনের পার্শ্ববর্তী এক বৈঠকে মুখোমুখি বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই বৈঠককে বিনিয়োগকারীরা এই বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে দেখছেন।
শি জিনপিং বলেন, “ইতিহাস যেমন আমাদের শিখিয়েছে, বাস্তবতাও দাবি করে—চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব থাকা উচিত।” তিনি আরও যোগ করেন, “দুই দেশের সম্পর্কে মাঝে মাঝে কিছু ঘর্ষণ হওয়া স্বাভাবিক, তবে সামগ্রিকভাবে সম্পর্ক স্থিতিশীল।”
‘আমেরিকা গ্রেট আবার’ অভিযানে সহযোগিতার আহ্বান
শি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “চীনের উন্নয়ন আপনার ‘Make America Great Again’ স্বপ্নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। আমি চাই আমাদের দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠুক, যা উভয় দেশের অগ্রগতির জন্য সহায়ক হবে।”
তিনি ট্রাম্পের আঞ্চলিক সংকটসমূহে—যেমন গাজা ও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিরোধ—আগ্রহের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করলে বিশ্বের জন্য আরও বাস্তব ও উপকারী সাফল্য অর্জন সম্ভব।”

অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, “শি একজন মহান দেশের মহান নেতা। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও চমৎকার হবে।”
ছয় বছর পর মুখোমুখি দুই নেতা
সকাল ১১টার দিকে বৈঠকের সূচনা হয়। উভয় নেতা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ফটোগ্রাফারদের সামনে আসেন—এটি ছিল তাদের ছয় বছর পর প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। পরে তারা বৈঠক কক্ষে প্রবেশ করেন।
ভিডিও ফিডে দেখা যায়, ট্রাম্পের পাশে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক, অপরদিকে শির সঙ্গে ছিলেন চীনের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য চাই চি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও উপ–প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং।
বাণিজ্যযুদ্ধ: নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা
এপিইসি সম্মেলনের এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামী বছর শুরুর দিকে চীন সফর করবেন, এবং পরবর্তীতে শি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন।
তবে এই সময় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে—যার বিস্তৃতি এখন রেয়ার আর্থ, সয়াবিন, এআই চিপ ও টিকটক পর্যন্ত পৌঁছেছে। চীন সম্প্রতি বিরল খনিজ ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছে, যা ৮ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর জবাবে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১০০% নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। উভয় দেশ একে অপরের জাহাজে নতুন করে বন্দর ফি আরোপ করেছে।

কুয়ালালামপুরে প্রাথমিক সমঝোতা
গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মার্কিন ও চীনা প্রতিনিধিদের বৈঠকে “ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট” বা “প্রাথমিক ঐকমত্যে” পৌঁছানো হয়। যদিও বিস্তারিত ঘোষণা করা হয়নি, ট্রাম্প জানান যে, চীনের ওপর ফেন্টানাইল–সম্পর্কিত ২০% শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে, এনভিডিয়ার উন্নত ‘ব্ল্যাকওয়েল’ এআই চিপ চীনের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত করা হতে পারে। এনভিডিয়ার বাজারমূল্য বুধবার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে, এ তথ্য বাজারে আশাবাদ তৈরি করেছে।
রয়টার্স জানায়, এক চীনা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে মার্কিন সয়াবিনের একটি ক্ষুদ্র চালান ক্রয় করেছে—চলতি বছরের প্রথম। অনেকেই ধারণা করছেন, চলতি শুল্কবিরতি (যা ১০ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা) আবারও বাড়ানো হবে।
বাজারে আশাবাদ, কিন্তু সংশয়ও রয়ে গেছে
ট্রাম্প–শি বৈঠকের খবরে বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১০ বছরেরও সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। তবে বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই সাময়িক শান্তি আবারও ভঙ্গ হতে পারে।

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে সতর্কতা
এই বৈঠকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর প্রসঙ্গও নজরে রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সম্প্রতি বলেন, “বাণিজ্যে সুবিধা পেতে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ইস্যুতে ছাড় দেবে না।”
চীনের পরবর্তী পাঁচ–বছরের পরিকল্পনায় ‘জাতীয় পুনর্মিলন অগ্রসারণ’ ও ‘তাইওয়ান স্বাধীনতাবাদ দমন’-এর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “তাইওয়ান হলো তাইওয়ান—এ বিষয়ে বলার তেমন কিছু নেই।”
এশিয়া সফরের শেষ দিনগুলো
ট্রাম্প বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কোরিয়া সফর শেষে মালয়েশিয়া ও জাপান সফর সম্পন্ন করে দেশে ফিরবেন। অন্যদিকে শি জিনপিং শনিবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করবেন এবং শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা রয়েছে।
#চীন_মার্কিন_সম্পর্ক #বাণিজ্যযুদ্ধ #এপিইসি #ট্রাম্প_শি_বৈঠক #আন্তর্জাতিক_অর্থনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















