এআই–চালিত ডেটা সেন্টারের বাড়তি বিদ্যুৎচাহিদা, জলবায়ু প্রতিশ্রুতির শৈথিল্য এবং রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে তেল–গ্যাস শিল্পের পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্কিন ও ইউরোপীয় তেল–গ্যাস কোম্পানির শেয়ার রিটার্ন বাজারকে হারাতে পারেনি; দামের ওঠানামা ও অতিরিক্ত জোগানে আয়ের গতি মন্থর। ফলে বিনিয়োগ না বাড়িয়ে রেকর্ড হারে নগদ ফেরত, খরচ কমানো ও কর্মীসংকোচনেই ভরসা করছে শিল্পের বড় কোম্পানিগুলো।
উচ্চপর্যায়ের প্রেক্ষাপট
– ২২ অক্টোবর রুশ জ্বালানি কোম্পানির ওপর নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তেলের স্পট দাম লাফালেও ফিউচার দামে বড় প্রতিক্রিয়া আসেনি।
– ওভাল অফিসের তেল–অনুকূল নীতি, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি রূপান্তরের গতি কমে যাওয়া এবং শক্তি–খোর ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগ—সবই তেল–গ্যাসের পক্ষে যাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ছবিটা ভিন্ন।
বাজারদরের বাস্তবতা: শেয়ারে পিছিয়ে
– ২০২৪ সালের শুরু থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০–এর মোট রিটার্ন (ডিভিডেন্ডসহ) প্রায় ৪৮%।
– একই সময়ে মার্কিন তেল–গ্যাস বিক্রেতাদের (যেমন শেভরন, এক্সনমোবিল) রিটার্ন প্রায় ১৪%–এর কাছাকাছি; ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরাও পিছিয়ে।

দাম ও চাহিদা–জোগান: ইউক্রেন–পরবর্তী শিখর থেকে মন্দাভাব
– ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর দামের উল্লম্ফনে শিল্প চাঙা হয়েছিল; পরে দাম কমায় আয় মন্থর হয়।
– বৈশ্বিক অর্থনীতির মৃদু প্রবৃদ্ধি ও চীনা ইভির দ্রুত বিস্তারে তেলের চাহিদা নরম।
– আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাবে ১ জানুয়ারি–৩০ সেপ্টেম্বর গড়ে প্রতিদিন ১৯ লাখ ব্যারেল উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছে; ২০২৬ সালে উদ্বৃত্ত ৪০ লাখ ব্যারেল/দিনে পৌঁছাতে পারে—এমন পূর্বাভাস রয়েছে।
রাশিয়া–নিষেধাজ্ঞার সীমিত প্রভাব
– স্পট দাম বাড়লেও ফিউচার অপরিবর্তিত—মানে স্থায়ী উল্লম্ফনের ইঙ্গিত দুর্বল।
– রাশিয়ার ‘ডার্ক ফ্লিট’ ট্যাংকার–বহর দিয়ে ছাড়–দামে বিক্রি চলতেই পারে।
– শূন্যতা পূরণে অন্য যোগানদাতারাও প্রস্তুত; ঘোষণার পরদিন কুয়েতের তেলমন্ত্রী জানান, ওপেক বিশ্ববাজার স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত।
গ্যাসে এআই–চাহিদা: লাভ তুলছে ইউটিলিটি, গ্যাসবিক্রেতা নয়
– পশ্চিমা টেক জায়ান্টরা ডেটা সেন্টারের জন্য গ্যাস–ভিত্তিক বিদ্যুৎ নিচ্ছে, তবু যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসদাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি; বাড়তি চাহিদা স্থানীয় জোগানেই শোষিত হয়েছে।
– ফলে বিদ্যুৎ–সরবরাহকারী ইউটিলিটি কোম্পানির শেয়ার উড়লেও গ্যাস বিক্রেতাদের লাভ তুলনামূলক কম।
– সামনে ইউরোপসহ বৈশ্বিক বাজারে গ্যাসদাম কমার ঝুঁকি আছে—কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে।
নগদ ফেরত বনাম বিনিয়োগ: শেয়ারহোল্ডারের বছর
– শেভরন, এক্সন, বিপি, এনি, শেল ও টোটালএনার্জিস—এই ছয় কোম্পানি ২০২৪ সালে শেয়ারহোল্ডারদের হাতে দিয়েছে রেকর্ড ১২০ বিলিয়ন ডলার, যা সম্মিলিত অপারেটিং ক্যাশ–ফ্লোর প্রায় ৫৬% (পূর্ববর্তী দশকে ৩০–৪০%)।
– ৩০ অক্টোবর শেল জানায়, তিন মাসে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বাইব্যাক করবে।
– বার্তা স্পষ্ট: উৎপাদন বাড়ানোর বদলে নগদ ফেরতই অগ্রাধিকার—অর্থাৎ ভবিষ্যৎ বৃদ্ধিতে আস্থার ঘাটতি রয়েছে।

খরচ কমানো ও কর্মীসংকোচন
– এক্সনের সাম্প্রতিক ঘোষণায় কর্মী ৩–৪% কমানোর পরিকল্পনা।
– শেভরনের পুনর্গঠনে জনবল পঞ্চমাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
– কনোকোফিলিপস, বিপি ও শেলও ব্যয়ছাঁটাই–মুখী।
এআই–বুম শক্তি খায়, কিন্তু তেল–গ্যাসে বাড়তি মূল্য যোগ করছে না
ডেটা সেন্টারের উল্লম্ফিত বিদ্যুৎচাহিদা আপাতদৃষ্টিতে গ্যাসের জন্য ইতিবাচক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রাচুর্য–জোগান দামকে আটকে রেখেছে; ইউরোপে এলএনজি–ঢল দামের ওপর নিম্নমুখী চাপ তৈরি করছে। রাশিয়া–সংকটও টেকসই ঊর্ধ্বমূল্যের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। তাই ‘বিগ অয়েল’ আপাতত স্লিমিং–মোডে: কম বিনিয়োগ, বেশি ডিভিডেন্ড–বাইব্যাক, আর খরচ কাটছাঁট।
নীতিগত অনুকূলতা ও এআই–যুগের বিদ্যুৎতৃষ্ণা সত্ত্বেও তেল–গ্যাস কোম্পানির নিকটমেয়াদি চিত্র খুব উজ্জ্বল নয়। উদ্বৃত্ত জোগান, নরম চাহিদা ও দামের অস্থিরতার মধ্যে তারা শেয়ারহোল্ডার–রিটার্ন ও ব্যয়সংকোচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে—যা শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক সংকেতও বয়ে আনে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















