কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বদলে দিচ্ছে কর্মসংস্থানের চিত্র
২০২৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে কর্মী ছাঁটাই করছে। নিয়মিত ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজগুলো এখন দ্রুতগতিতে স্বয়ংক্রিয় হয়ে পড়ায়, বহু প্রতিষ্ঠান জনবল কমিয়ে কার্যক্রম পুনর্গঠন করছে।
অ্যামাজনে ১৪ হাজার করপোরেট চাকরি ছাঁটাই
অ্যামাজন ২৮ অক্টোবর ঘোষণা দেয়, তারা ১৪ হাজার করপোরেট কর্মী ছাঁটাই করবে। কোম্পানির মানবসম্পদ প্রধান বেথ গালেটি বলেন, এআই হলো ইন্টারনেটের পর সবচেয়ে “রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি”।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামাজন বৈশ্বিকভাবে ৩০ হাজার কর্মী পর্যন্ত ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।
প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি জুন মাসেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এআই টুল ও এজেন্টের ব্যবহার বাড়ায় প্রশাসনিক কাজগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে পড়ছে, যার ফলে করপোরেট পর্যায়ে ছাঁটাই অনিবার্য হয়ে উঠছে।
এই ছাঁটাই অ্যামাজনের ডিভাইস, বিজ্ঞাপন, প্রাইম ভিডিও, মানবসম্পদ, অপারেশন, অ্যালেক্সা এবং ক্লাউড ইউনিট অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসে ঘটবে। গত দুই বছর ধরে কোম্পানিটি বই, ডিভাইস ও ওয়ান্ডারি পডকাস্ট বিভাগেও ছোট পরিসরে কর্মী কমিয়ে আসছিল।

মেটায় প্রায় ৩,৬০০ জন কর্মী ছাঁটাই
২৩ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেটা তার “রিস্ক রিভিউ” বিভাগে ১০০–এর বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে এবং সেখানে ম্যানুয়াল রিভিউয়ের বদলে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম চালু করছে।
প্রধান প্রাইভেসি কর্মকর্তা মিশেল প্রোত্তি এক নোটে জানান, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী আরও নির্ভরযোগ্য ও সঠিকভাবে গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করবে।
এর আগে কোম্পানিটি তাদের এআই ইউনিট “সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবস” থেকে ৬০০ কর্মী ছাঁটাই করে। তিন বছরে দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে অতিরিক্ত প্রশাসনিক জটিলতা কমাতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ফাঁস হওয়া এক অভ্যন্তরীণ মেমোতে দেখা যায়, মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানেল গেইল জানিয়েছিলেন যে, প্রায় ৩,৬০০ কর্মী—অর্থাৎ কোম্পানির মোট জনবলের প্রায় ৫ শতাংশ—চাকরি হারাবেন।
সেলসফোর্সে ৪,০০০ কর্মী বাদ
সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী মার্ক বেনিওফ সেপ্টেম্বর মাসে জানান, কোম্পানিটি গ্রাহক সহায়তা বিভাগ থেকে ৪,০০০ কর্মী কমিয়েছে। এখন সেই জায়গা নিয়েছে এআই-চালিত ভার্চুয়াল এজেন্টরা, যারা প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক আলাপ পরিচালনা করছে।

জুনে বেনিওফ বলেছিলেন, তাদের কোম্পানির মোট কাজের অর্ধেকই এখন এআই দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে।
ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটি নতুন এআই পণ্য বিক্রির জন্য কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছিল। আগের বছরগুলোতেও (২০২৪ সালে) তারা ৭০০ এবং পরে আরও ৩০০ কর্মী কমিয়েছে।
মাইক্রোসফটে ১৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই
প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট জুলাই মাসে ৯,০০০ কর্মী ছাঁটাই করে, যা তাদের মোট জনবলের প্রায় ৪ শতাংশ। এর আগে মে মাসে তারা আরও ৬,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছিল, যার মাধ্যমে কোম্পানি “অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক স্তর” কমাতে চায়।
ছাঁটাইয়ের বড় অংশ পড়েছে গেমিং বিভাগে।
২০২৩ সালেও মাইক্রোসফট ১০,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছিল, মহামারি-পরবর্তী ধীরগতি ও এআই-কেন্দ্রিক কৌশল পরিবর্তনের কারণে।
গুগলে ৩০০ কর্মী ছাঁটাই

অক্টোবর মাসে সার্চ জায়ান্ট গুগল তাদের ক্লাউড ইউনিটে ডিজাইন সংক্রান্ত বিভাগ থেকে ১০০–এর বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে। এই বিভাগের কর্মীরা ডেটা ও জরিপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করে পণ্য উন্নয়ন ও ডিজাইনের দিকনির্দেশনা দেন।
কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনেক ডিজাইন টিমও অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
অক্টোবরে গুগল ঘোষণা দেয়, তারা আগামী পাঁচ বছরে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ভারতে একটি বিশাল এআই ডেটা সেন্টার স্থাপন করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হবে।
এর আগে মে মাসে গুগল তাদের গ্লোবাল বিজনেস ইউনিটে বিক্রয় ও অংশীদারিত্ব বিভাগ থেকে আরও ২০০ কর্মী ছাঁটাই করেছিল।
২০২৫ সালে প্রযুক্তি খাতজুড়ে এআই-চালিত পরিবর্তন ব্যাপক চাকরিচ্যুতি ডেকে এনেছে। অ্যামাজন, মেটা, সেলসফোর্স, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুতগতিতে এআই-নির্ভর অটোমেশনে ঝুঁকছে, যা মানবশক্তির উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার চাহিদা বাড়লেও, সাধারণ প্রশাসনিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ছে—যা ভবিষ্যতের কর্মবাজারে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















