১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত সামরিক শক্তি ব্যবহারে রাশিয়ার নিন্দা, ভেনেজুয়েলার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

রাশিয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা ক্যারিবীয় সাগরে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে অতিরিক্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করছে। শনিবার (১ নভেম্বর) মস্কো এক বিবৃতিতে জানায়, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইন উভয়েরই লঙ্ঘন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানাই। এটি মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করার স্পষ্ট উদাহরণ।”


যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ও বিতর্ক

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এসব মোতায়েন মূলত অবৈধ মাদকবাণিজ্য দমন অভিযানের অংশ।

তবে এই অভিযানের সময় অন্তত ১৪টি নৌযানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই ঘটনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রশ্ন উঠছে।


ভেনেজুয়েলার প্রতি রাশিয়ার সমর্থন

রাশিয়া তাদের বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলা সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাখারোভা বলেন, “আমরা ভেনেজুয়েলার জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটির নেতৃত্বের পাশে আছি এবং তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি।”

এ বছরের মে মাসে মস্কো সফরকালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার ঘোষণা দেয়।


মাদুরোর অভিযোগ ও উদ্বেগ

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছে। সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এই পরিস্থিতি দেশটির নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তবুও মস্কো লাতিন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, যার মধ্যে ভেনেজুয়েলা অন্যতম।

এই অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করছে, যেখানে রাশিয়া লাতিন আমেরিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রভাব থেকে বের করে আনতে চায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি শুধু মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ নয়— এটি মূলত রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর একটি কৌশল। অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভেনেজুয়েলাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

এই টানাপোড়েনকে অনেকেই নতুন শীতল যুদ্ধের প্রতিধ্বনি হিসেবে দেখছেন— যেখানে সংঘাতের কেন্দ্র ইউরোপ নয়, বরং লাতিন আমেরিকা হয়ে উঠছে।

রাশিয়ার এই নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আরেকটি প্রকাশ। ক্রেমলিন ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার উত্তেজনা এখন ইউরোপ ও এশিয়া ছাড়িয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপ, প্রতিটি কূটনৈতিক মন্তব্য এখন বৈশ্বিক রাজনীতির ভারসাম্যে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত সামরিক শক্তি ব্যবহারে রাশিয়ার নিন্দা, ভেনেজুয়েলার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

০৫:০৮:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

রাশিয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা ক্যারিবীয় সাগরে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে অতিরিক্ত সামরিক শক্তি ব্যবহার করছে। শনিবার (১ নভেম্বর) মস্কো এক বিবৃতিতে জানায়, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব আইন উভয়েরই লঙ্ঘন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানাই। এটি মাদকবিরোধী অভিযান নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করার স্পষ্ট উদাহরণ।”


যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি ও বিতর্ক

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এসব মোতায়েন মূলত অবৈধ মাদকবাণিজ্য দমন অভিযানের অংশ।

তবে এই অভিযানের সময় অন্তত ১৪টি নৌযানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই ঘটনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রশ্ন উঠছে।


ভেনেজুয়েলার প্রতি রাশিয়ার সমর্থন

রাশিয়া তাদের বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলা সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাখারোভা বলেন, “আমরা ভেনেজুয়েলার জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটির নেতৃত্বের পাশে আছি এবং তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি।”

এ বছরের মে মাসে মস্কো সফরকালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করার ঘোষণা দেয়।


মাদুরোর অভিযোগ ও উদ্বেগ

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছে। সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এই পরিস্থিতি দেশটির নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। তবুও মস্কো লাতিন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, যার মধ্যে ভেনেজুয়েলা অন্যতম।

এই অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করছে, যেখানে রাশিয়া লাতিন আমেরিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রভাব থেকে বের করে আনতে চায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি শুধু মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ নয়— এটি মূলত রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর একটি কৌশল। অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভেনেজুয়েলাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

এই টানাপোড়েনকে অনেকেই নতুন শীতল যুদ্ধের প্রতিধ্বনি হিসেবে দেখছেন— যেখানে সংঘাতের কেন্দ্র ইউরোপ নয়, বরং লাতিন আমেরিকা হয়ে উঠছে।

রাশিয়ার এই নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আরেকটি প্রকাশ। ক্রেমলিন ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার উত্তেজনা এখন ইউরোপ ও এশিয়া ছাড়িয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সামরিক পদক্ষেপ, প্রতিটি কূটনৈতিক মন্তব্য এখন বৈশ্বিক রাজনীতির ভারসাম্যে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।