১০:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ রণক্ষেত্রে (পর্ব-১১৬) পাকিস্তানে প্রথম চীনা নির্মিত সাবমেরিন- ২০২৬ সালে উদ্বোধন সরকার বলছে, নেত্র নিউজের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর প্রার্থী বাছাইয়ে নারীদের প্রতি অবহেলা: বিএনপির রাজনীতিতে অদৃশ্য অর্ধেক বাংলাদেশে এ শীতে ১০ দফা শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা: আবহাওয়া অধিদপ্তর ভ্যাটিকান মন্ত্রীর কক্সবাজার সফর: রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সংহতির বার্তা শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন, দুই বোরসের সূচক নিম্নমুখী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হলেন মাহমুদুল হাসান রাজধানীতে মঙ্গলবার সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সমাবেশ

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনেই ‘মেলিসা’-র মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি

মানবসৃষ্ট উষ্ণায়নে বিপর্যয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা প্রকাশিত এক দ্রুত বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিকেন মেলিসার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় চারগুণ বেশি সম্ভাবনায় ঘটেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে যে অতিরিক্ত উষ্ণতা তৈরি হয়েছে, সেটিই ঝড়টির তীব্রতা ও ঘনঘনতা উভয়ই বাড়িয়েছে।

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক রালফ টুমি বলেন, “জ্যামাইকা ঝড়ের প্রস্তুতিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হলেও, প্রস্তুতিরও সীমা আছে। অভিযোজন জরুরি হলেও, তা যথেষ্ট নয়—গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করতেই হবে।”

উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি

গবেষণায় ব্যবহৃত পিয়ার-রিভিউড মডেলটি বিভিন্ন জলবায়ু পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ সম্ভাব্য ঝড়ের পথের সিমুলেশন চালায়। এতে দেখা গেছে, যদি পৃথিবী শীতলতর অবস্থায় থাকত, তাহলে ‘মেলিসা’-র মতো ঘূর্ণিঝড় প্রতি ৮,১০০ বছরে একবার জ্যামাইকায় আঘাত হানত। কিন্তু বর্তমান উষ্ণতার প্রভাবে সেই সময়সীমা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় প্রতি ১,৭০০ বছরে একবার।

Satellite Images Show Hurricane Melissa Destruction in Jamaica

বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় প্রায় ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এটি ১.৫ ডিগ্রি সীমার বিপজ্জনক কাছাকাছি, যা অতিক্রম করলে জলবায়ু বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

উষ্ণ পৃথিবীতে আরও প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

গবেষণায় বলা হয়েছে, এমনকি যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা না-ও থাকত, তবুও মেলিসা ঘটতে পারত, তবে তা তুলনামূলক দুর্বল হতো। বর্তমান উষ্ণতা ঝড়ের বাতাসের গতি গড়ে ১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ৭%) বাড়িয়েছে। যদি পৃথিবী ২ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ হয়, সেই গতি বেড়ে ২৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছাবে।

‘মেলিসা’ ঘূর্ণিঝড় জ্যামাইকায় ৭৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি এবং ২৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগের স্থায়ী বাতাস নিয়ে আসে, যা দ্বীপটির অবকাঠামোকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব

রালফ টুমি আরও বলেন, “মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন মেলিসাকে স্পষ্টতই আরও শক্তিশালী ও বিধ্বংসী করেছে। যদি আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখি, ভবিষ্যতের ঝড়গুলো আরও ভয়াবহ হবে।” তবে বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়, দ্বীপটির ধ্বংস এতটাই ব্যাপক ছিল যে, অতিরিক্ত তীব্রতাও হয়তো ক্ষতির পরিমাণ খুব একটা বাড়াতে পারত না।

Melissa leaves 50 dead, toll expected to rise in Jamaica, Haiti

গবেষক দলটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারেনি, কারণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় প্রয়োজনীয় স্যাটেলাইট ডেটা পাওয়া যায়নি।

আর্থিক ক্ষতির ভয়াবহতা

এনকি রিসার্চের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্যামাইকার অবকাঠামো ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ৪০ শতাংশের সমান। সংস্থাটি জানিয়েছে, “এই ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে অন্তত এক দশক সময় লাগবে।”

এই পরিমাণে পর্যটন, নৌপরিবহন ও বাণিজ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষতিও যুক্ত নয়—যেগুলো যুক্ত হলে প্রকৃত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়বে।

গবেষণাটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা শুধু ঝড়ের ঘনঘনতা নয়, তার ধ্বংসক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—জলবায়ু অভিযোজনের পাশাপাশি এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কার্বন নিঃসরণ বন্ধ না করলে, ‘মেলিসা’-র মতো ঘূর্ণিঝড় ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ আকারে ফিরে আসবে।

সাঙ্গু নদী: পাহাড়ের কোলে জন্ম, জীবনের ধারায় প্রবাহ

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনেই ‘মেলিসা’-র মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি

১২:১৮:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মানবসৃষ্ট উষ্ণায়নে বিপর্যয়ের তীব্রতা বৃদ্ধি

ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা প্রকাশিত এক দ্রুত বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হারিকেন মেলিসার মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় চারগুণ বেশি সম্ভাবনায় ঘটেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে যে অতিরিক্ত উষ্ণতা তৈরি হয়েছে, সেটিই ঝড়টির তীব্রতা ও ঘনঘনতা উভয়ই বাড়িয়েছে।

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক রালফ টুমি বলেন, “জ্যামাইকা ঝড়ের প্রস্তুতিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হলেও, প্রস্তুতিরও সীমা আছে। অভিযোজন জরুরি হলেও, তা যথেষ্ট নয়—গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করতেই হবে।”

উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের পুনরাবৃত্তি বৃদ্ধি

গবেষণায় ব্যবহৃত পিয়ার-রিভিউড মডেলটি বিভিন্ন জলবায়ু পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ সম্ভাব্য ঝড়ের পথের সিমুলেশন চালায়। এতে দেখা গেছে, যদি পৃথিবী শীতলতর অবস্থায় থাকত, তাহলে ‘মেলিসা’-র মতো ঘূর্ণিঝড় প্রতি ৮,১০০ বছরে একবার জ্যামাইকায় আঘাত হানত। কিন্তু বর্তমান উষ্ণতার প্রভাবে সেই সময়সীমা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় প্রতি ১,৭০০ বছরে একবার।

Satellite Images Show Hurricane Melissa Destruction in Jamaica

বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় প্রায় ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এটি ১.৫ ডিগ্রি সীমার বিপজ্জনক কাছাকাছি, যা অতিক্রম করলে জলবায়ু বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

উষ্ণ পৃথিবীতে আরও প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

গবেষণায় বলা হয়েছে, এমনকি যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা না-ও থাকত, তবুও মেলিসা ঘটতে পারত, তবে তা তুলনামূলক দুর্বল হতো। বর্তমান উষ্ণতা ঝড়ের বাতাসের গতি গড়ে ১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (প্রায় ৭%) বাড়িয়েছে। যদি পৃথিবী ২ ডিগ্রি বেশি উষ্ণ হয়, সেই গতি বেড়ে ২৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছাবে।

‘মেলিসা’ ঘূর্ণিঝড় জ্যামাইকায় ৭৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি এবং ২৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগের স্থায়ী বাতাস নিয়ে আসে, যা দ্বীপটির অবকাঠামোকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব

রালফ টুমি আরও বলেন, “মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন মেলিসাকে স্পষ্টতই আরও শক্তিশালী ও বিধ্বংসী করেছে। যদি আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো অব্যাহত রাখি, ভবিষ্যতের ঝড়গুলো আরও ভয়াবহ হবে।” তবে বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়, দ্বীপটির ধ্বংস এতটাই ব্যাপক ছিল যে, অতিরিক্ত তীব্রতাও হয়তো ক্ষতির পরিমাণ খুব একটা বাড়াতে পারত না।

Melissa leaves 50 dead, toll expected to rise in Jamaica, Haiti

গবেষক দলটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারেনি, কারণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রম স্থগিত থাকায় প্রয়োজনীয় স্যাটেলাইট ডেটা পাওয়া যায়নি।

আর্থিক ক্ষতির ভয়াবহতা

এনকি রিসার্চের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জ্যামাইকার অবকাঠামো ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) প্রায় ৪০ শতাংশের সমান। সংস্থাটি জানিয়েছে, “এই ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধারে অন্তত এক দশক সময় লাগবে।”

এই পরিমাণে পর্যটন, নৌপরিবহন ও বাণিজ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের ক্ষতিও যুক্ত নয়—যেগুলো যুক্ত হলে প্রকৃত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বাড়বে।

গবেষণাটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা শুধু ঝড়ের ঘনঘনতা নয়, তার ধ্বংসক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—জলবায়ু অভিযোজনের পাশাপাশি এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কার্বন নিঃসরণ বন্ধ না করলে, ‘মেলিসা’-র মতো ঘূর্ণিঝড় ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ও ভয়াবহ আকারে ফিরে আসবে।