সোমবার ওয়াল স্ট্রিটে মিশ্র প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বিশাল করপোরেট অধিগ্রহণ ও নতুন এক বৃহৎ এআই-সম্পর্কিত চুক্তি বিনিয়োগকারীদের উচ্ছ্বাস জাগালেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ও সুদের হার নিয়ে অনিশ্চয়তা সেই আশাবাদকে প্রশমিত করেছে। অন্যদিকে, ডলার তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
এ কলামে আমি বিশ্লেষণ করেছি, বিগ টেক কোম্পানিগুলোর এআই-তে বিপুল ব্যয় কি সত্যিই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত বিশাল মুনাফা এনে দেবে? ভবিষ্যৎ অনুমান করা কঠিন, তবে বিনিয়োগের পরিমাণ যত বেশি, লাভজনক ফলাফল পাওয়ার মানদণ্ডও তত উঁচু হচ্ছে।
শেয়ারবাজার:
ওয়াল স্ট্রিটে মিশ্র লেনদেন। এশিয়ায় জোরদার বৃদ্ধি, কসপি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর্জেন্টিনার মেরভাল সূচক নতুন রেকর্ড গড়েছে, মিলে-র মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ের পর থেকে প্রায় ৫০% বৃদ্ধি। ব্রাজিলের বোভেসপা প্রথমবার ১,৫০,০০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে।
কোম্পানি ও খাত:
কেনভিউ +১২%, অ্যামাজন +৪%, কিম্বারলি-ক্লার্ক -১৪.৫%। ভোক্তা খাত +১.৭%, প্রযুক্তি +০.৪%; শক্তি, রিয়েল এস্টেট, প্রয়োজনীয় পণ্য -০.৫%।

মুদ্রা:
ডলার সূচক তিন মাসের সর্বোচ্চে, ১০০ অতিক্রমের পথে। আর্জেন্টাইন পেসো -২%, রেকর্ড নিম্নের দিকে, বিটকয়েন -৩%।
বন্ড:
মার্কিন দীর্ঘমেয়াদি ফলন +২ বেসিস পয়েন্ট; ইয়িল্ড কার্ভ আরও খাড়া।
পণ্য ও ধাতু:
স্বর্ণ ও তেল প্রায় অপরিবর্তিত, ওপেক+ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতি দেওয়া সত্ত্বেও।
আজকের আলোচনার বিষয়
১. প্রযুক্তি খাতে ঋণ বৃদ্ধি
সেপ্টেম্বরে ওরাকল ১৮ বিলিয়ন ডলারের বন্ড বিক্রি করেছে। গত সপ্তাহে মেটা ঘোষণা করেছে সর্ববৃহৎ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ইস্যু, এবং সোমবার গুগলের মালিক আলফাবেট জানিয়েছে তারা প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ তুলছে।
বিনিয়োগকারীরা এসব টেক জায়ান্টকে ঋণ দিতে আগ্রহী হলেও, প্রশ্ন উঠছে—এআই-ভিত্তিক মূলধনি ব্যয় (capex) কি তাদের নগদ প্রবাহকে প্রভাবিত করছে? যদি তারা ব্যাপকভাবে ঋণ নেয়, তা কি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা কমাবে?
২. চুক্তির উন্মাদনা
কিম্বারলি-ক্লার্ক প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে ব্যান্ড-এইড নির্মাতা কেনভিউ কিনতে যাচ্ছে—একটি অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ, প্রিমিয়াম মূল্য ও কেনভিউকে ঘিরে থাকা বিতর্ক সত্ত্বেও।

ওয়াল স্ট্রিটে চুক্তির জোয়ার চলছে—ফেড সুদের হার কমাচ্ছে, আর্থিক পরিবেশ আগের চেয়ে ঢিলেঢালা। এলএসইজি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে অধিগ্রহণের মোট পরিমাণ ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৩৬% বেশি এবং ১৯৭০ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৩. ফেডারেল রিজার্ভের অনিশ্চয়তা
ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। মঙ্গলবার মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা ৩৫ দিন পূর্ণ করবে, যা রেকর্ডের সমান। অনলাইন পূর্বাভাস বাজার ‘পলিমার্কেট’ বলছে, এই স্থবিরতা ডিসেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত চলতে পারে।
তথ্যপ্রকাশ বন্ধ থাকায়, অর্থনীতির গতিপথ অস্পষ্ট। ফেডের নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও মতভেদ বাড়ছে। ফলে ডিসেম্বর মাসে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৯০% থেকে নেমে ৬৫%-এ এসেছে। শিগগিরই এটি ৫০-৫০ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে।
বিগ টেকের বড় ব্যয়, কিন্তু ফল কত বড়?
“ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন” নামে পরিচিত বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক আয় প্রতিবেদন দেখাচ্ছে—এআই বুম এখনো শেষ হয়নি। তবে তাদের বিপুল এআই ব্যয় থেকে লাভজনক ফলাফল কতটা আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তৃতীয় প্রান্তিকের আয় বিশ্লেষণ বলছে, তারা এখনো বিপুল মুনাফা করছে। তবে অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তাদের শেয়ারের দাম অত্যধিক। তবুও, বর্তমান টেক জায়ান্টরা ৯০-এর দশকের ডটকম বুদবুদের তুলনায় স্থিতিশীল ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছে।
ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল গত সপ্তাহে বলেছেন, এই কোম্পানিগুলোর এআই বিনিয়োগই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি।

এ বছর শুধু চারটি “হাইপারস্কেলার”—মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, মেটা ও আলফাবেট—মিলিতভাবে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এআই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ পৌঁছাবে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে।
কিন্তু যত বেশি ব্যয়, তত বেশি প্রত্যাশা—এক সময়ে সেই প্রত্যাশা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ড্যানিয়েল কিউম বলেন, “মূল্য সৃষ্টি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই মূল্য কি এই বিনিয়োগকারীদের কাছে ফিরবে? আমার মতে, উত্তর হলো না।”
হিসাবের খাতা
এআই সুপারসাইকেলের শুরুতেই বিগ টেকের ব্যয় নগদ প্রবাহকে সংকুচিত করছে।
অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ টরস্টেন স্লক অনুমান করেছেন, অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা ও ওরাকলের সম্মিলিত মূলধনি ব্যয় তাদের অপারেটিং নগদ প্রবাহের প্রায় ৬০%—এটি ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
অ্যামাজন সম্প্রতি শক্তিশালী আয় প্রকাশ করেছে, তবে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে তাদের মুক্ত নগদ প্রবাহ প্রায় ৭০% হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষক রস হেনড্রিক্সের মতে, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে এসব কোম্পানির মুক্ত নগদ প্রবাহ এ বছরের তুলনায় ৪০% কমে যাবে।
বিশ্লেষক বব এলিয়ট বলেন, “গণিত সহজ—যদি আয় না বাড়ে, তাহলে বিগ টেক আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের প্রায় সব নগদ অর্থ ব্যয়ে ঢেলে দেবে।”
উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ প্রত্যাশা
এই মেগা কোম্পানিগুলোর ভাগ্য বৃহত্তর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। কারণ তাদের মূলধনি ব্যয় প্রবৃদ্ধি চালাচ্ছে, আর তাদের শেয়ারে প্রায় প্রত্যেক অবসরভাতা তহবিল বিনিয়োগ করা আছে।

উদাহরণস্বরূপ, এনভিডিয়ার এসঅ্যান্ডপি ৫০০-তে অংশ ৮%, আর “ম্যাগ ৭” কোম্পানির সম্মিলিত অংশ রেকর্ড ৩৭%।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তারা কি যত দ্রুত অর্থ ব্যয় করছে, তত দ্রুত আয়ও করতে পারবে?
উদাহরণ হিসেবে, মেটার ঘোষিত মূলধনি ব্যয় প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার, অথচ আয় মাত্র ৩–৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে—যা বিনিয়োগের জন্য খুবই সাধারণ ফলাফল।
জাকারবার্গ অবশ্য বলছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ—এখন ব্যয় না করলে ভবিষ্যতে সুযোগ হারাতে হতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য কতটা থাকবে, তা অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, ছোট ব্যবসাগুলো ভালো করছে। হোয়ারটন বিজনেস স্কুলের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৪% প্রতিষ্ঠান বলেছে—জেনারেটিভ এআই বিনিয়োগ ইতিমধ্যে ইতিবাচক ফল দিচ্ছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও আর্থিক খাতে।
আগামী দিনের বাজার সূচক
- • অস্ট্রেলিয়ার সুদের হার সিদ্ধান্ত
 - • জাপানের পিএমআই (অক্টোবর, চূড়ান্ত)
 - • জাপানের করপোরেট আয়
 - • ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দের বক্তব্য
 - • কানাডার বাণিজ্য (অক্টোবর)
 - • মার্কিন করপোরেট আয়: অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস, উবার, ফাইজার, স্পটিফাই
 
																			
																সারাক্ষণ রিপোর্ট								 



















