০৬:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রশাসনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে শেয়ারবাজারে টানা পতন: ডিএসই ও সিএসই-তে লেনদেন কমেছে অনলাইন জুয়া লেনদেন বন্ধে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কঠোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশের বিমান খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে এয়ারবাস: ফরাসি দূত তালেবানের ‘গ্রেটার আফগানিস্তান’ মানচিত্র: শক্তির নয়, হতাশার প্রতিফলন সিলেটে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ৩০ ঢাকায় এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার নোয়াখালীর কবিরহাটে ট্রাক-অটোর সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু কপ৩০ শুরুর আগেই নতুন জলবায়ু লক্ষ্য ঠিক করতে হুড়োহুড়ি ইইউর সিনেটরের অভিযোগে গুগলের জেমা এআই সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া

তেল উৎপাদনে বিরতি: রাশিয়ার অনুরোধে ‘ওপেক প্লাস’-এর সিদ্ধান্তে সৌদি আরবের সম্মতি

রাশিয়ার চাপেই ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত

ওপেক ও তাদের মিত্র দেশগুলোর জোট ‘ওপেক প্লাস’ আগামী বছরের প্রথম তিন মাসে (২০২৬ সালের জানুয়ারি-মার্চ) তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই বিরতির প্রস্তাব তোলা হয়, কারণ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি রপ্তানি বাড়াতে পারছে না বলে চারটি সূত্র জানিয়েছে।

সৌদি আরবের জন্যও সুবিধাজনক সময়

এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের জন্যও উপযোগী ছিল। কারণ, বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাধারণত তেলের চাহিদা কম থাকে। তাছাড়া, ২০২৬ সালে বাজারে তেলের অতিপ্রাচুর্য (glut) দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই। দুটি সূত্র জানিয়েছে, এই উদ্বেগই সৌদি আরবকে রাশিয়ার প্রস্তাবে সম্মত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারে উদ্বৃত্তের আশঙ্কা

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ওপেক প্লাস ধীরে ধীরে তেল উৎপাদন বাড়াতে শুরু করে—মোট প্রায় ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২.৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে তারা বাজারে অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল। তবে অক্টোবর থেকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনা হয়।

Russian push for OPEC+ action pause met no Saudi resistance, sources say |  Reuters

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নতুন নিষেধাজ্ঞা ওপেক প্লাসের জন্য নীতিনির্ধারণে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ রাশিয়ার উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাজার সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় রাশিয়ার অংশগ্রহণ সীমিত হচ্ছে।

রাশিয়ার নেতৃত্বে আলোচনার ফলাফল

রবিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতির প্রধান প্রবক্তা ছিলেন। এই বিরতি ওপেক প্লাসকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রাশিয়ার উৎপাদন কতটা প্রভাবিত হচ্ছে তা মূল্যায়নের জন্য সময় দেবে বলে একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

সৌদি আরবও এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, কারণ বছরের শুরুতে বাজারে তেলের চাহিদা কমে যায়। সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাননি।

ওপেক, সৌদি আরব ও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য দেয়নি।

উদ্বৃত্ত তেলের আশঙ্কা বড় কারণ

ওপেক প্লাসের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর বাজারে তেলের উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনাই এই সিদ্ধান্তের অন্যতম প্রধান কারণ। বৈঠকের পর সংগঠনটি জানিয়েছে, মৌসুমি কারণেই (seasonality) উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতি দেওয়া হয়েছে—প্রথম প্রান্তিকে সাধারণত তেলের মজুদ বেড়ে যায়, কারণ তখন চাহিদা কমে যায়।

Saudi OPEC strategy pulled by warring US, Russia interests | Reuters

একজন প্রতিনিধি বলেন, “বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাস্তব এবং তা রপ্তানি বাজারে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধের পূর্বাভাসও তেমন শক্তিশালী নয়।”

বিশেষজ্ঞ ও পূর্বের অভিজ্ঞতা

ওপেকের নিজস্ব পূর্বাভাসে বলা হলেও আগামী বছরে সরবরাহ ও চাহিদা প্রায় সমান থাকবে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) বলেছে, তখন প্রতিদিন প্রায় ৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উদ্বৃত্ত থাকতে পারে—যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ৪ শতাংশ। বেশিরভাগ বিশ্লেষকও একই ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

মর্গান স্ট্যানলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বছরের প্রথম প্রান্তিকে সতর্ক নীতি গ্রহণ করা ওপেকের জন্য অস্বাভাবিক নয়।”

এর আগেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ওপেক প্লাস উৎপাদন বৃদ্ধির সময় তিন মাস পিছিয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, উত্তর গোলার্ধে ভ্রমণ ও চাহিদা বাড়ার অপেক্ষায়।

বাস্তব উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম

এর আগে কয়েক বছর ওপেক প্লাস উৎপাদন হ্রাস করে বাজার থেকে প্রায় ৫.৮৫ মিলিয়ন ব্যারেল সরিয়ে নিয়েছিল। যদিও উৎপাদন বাড়ানোর সর্বশেষ সিদ্ধান্তে প্রতিদিন ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, বাস্তবে সেই বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। কারণ, সৌদি আরব ছাড়া অনেক দেশই ইতোমধ্যে তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় উৎপাদন করছে।

আরবিসি ক্যাপিটালের হেলিমা ক্রফট বলেন, “ডিসেম্বরে যে পরিমাণ অতিরিক্ত তেল বাজারে যোগ হবে, তা ঘোষিত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম হবে, কারণ সৌদি আরব ছাড়া অন্য প্রায় সব উৎপাদকই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রশাসনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে

তেল উৎপাদনে বিরতি: রাশিয়ার অনুরোধে ‘ওপেক প্লাস’-এর সিদ্ধান্তে সৌদি আরবের সম্মতি

১২:৫০:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

রাশিয়ার চাপেই ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্ত

ওপেক ও তাদের মিত্র দেশগুলোর জোট ‘ওপেক প্লাস’ আগামী বছরের প্রথম তিন মাসে (২০২৬ সালের জানুয়ারি-মার্চ) তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই বিরতির প্রস্তাব তোলা হয়, কারণ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি রপ্তানি বাড়াতে পারছে না বলে চারটি সূত্র জানিয়েছে।

সৌদি আরবের জন্যও সুবিধাজনক সময়

এই সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের জন্যও উপযোগী ছিল। কারণ, বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাধারণত তেলের চাহিদা কম থাকে। তাছাড়া, ২০২৬ সালে বাজারে তেলের অতিপ্রাচুর্য (glut) দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই। দুটি সূত্র জানিয়েছে, এই উদ্বেগই সৌদি আরবকে রাশিয়ার প্রস্তাবে সম্মত হতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজারে উদ্বৃত্তের আশঙ্কা

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ওপেক প্লাস ধীরে ধীরে তেল উৎপাদন বাড়াতে শুরু করে—মোট প্রায় ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন, যা বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২.৭ শতাংশ। এর মাধ্যমে তারা বাজারে অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল। তবে অক্টোবর থেকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির গতি কমিয়ে আনা হয়।

Russian push for OPEC+ action pause met no Saudi resistance, sources say |  Reuters

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নতুন নিষেধাজ্ঞা ওপেক প্লাসের জন্য নীতিনির্ধারণে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ রাশিয়ার উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাজার সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় রাশিয়ার অংশগ্রহণ সীমিত হচ্ছে।

রাশিয়ার নেতৃত্বে আলোচনার ফলাফল

রবিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতির প্রধান প্রবক্তা ছিলেন। এই বিরতি ওপেক প্লাসকে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রাশিয়ার উৎপাদন কতটা প্রভাবিত হচ্ছে তা মূল্যায়নের জন্য সময় দেবে বলে একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

সৌদি আরবও এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, কারণ বছরের শুরুতে বাজারে তেলের চাহিদা কমে যায়। সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাননি।

ওপেক, সৌদি আরব ও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য দেয়নি।

উদ্বৃত্ত তেলের আশঙ্কা বড় কারণ

ওপেক প্লাসের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর বাজারে তেলের উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনাই এই সিদ্ধান্তের অন্যতম প্রধান কারণ। বৈঠকের পর সংগঠনটি জানিয়েছে, মৌসুমি কারণেই (seasonality) উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিরতি দেওয়া হয়েছে—প্রথম প্রান্তিকে সাধারণত তেলের মজুদ বেড়ে যায়, কারণ তখন চাহিদা কমে যায়।

Saudi OPEC strategy pulled by warring US, Russia interests | Reuters

একজন প্রতিনিধি বলেন, “বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাস্তব এবং তা রপ্তানি বাজারে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আগামী বছরের প্রথমার্ধের পূর্বাভাসও তেমন শক্তিশালী নয়।”

বিশেষজ্ঞ ও পূর্বের অভিজ্ঞতা

ওপেকের নিজস্ব পূর্বাভাসে বলা হলেও আগামী বছরে সরবরাহ ও চাহিদা প্রায় সমান থাকবে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (IEA) বলেছে, তখন প্রতিদিন প্রায় ৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উদ্বৃত্ত থাকতে পারে—যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ৪ শতাংশ। বেশিরভাগ বিশ্লেষকও একই ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

মর্গান স্ট্যানলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বছরের প্রথম প্রান্তিকে সতর্ক নীতি গ্রহণ করা ওপেকের জন্য অস্বাভাবিক নয়।”

এর আগেও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ওপেক প্লাস উৎপাদন বৃদ্ধির সময় তিন মাস পিছিয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, উত্তর গোলার্ধে ভ্রমণ ও চাহিদা বাড়ার অপেক্ষায়।

বাস্তব উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম

এর আগে কয়েক বছর ওপেক প্লাস উৎপাদন হ্রাস করে বাজার থেকে প্রায় ৫.৮৫ মিলিয়ন ব্যারেল সরিয়ে নিয়েছিল। যদিও উৎপাদন বাড়ানোর সর্বশেষ সিদ্ধান্তে প্রতিদিন ২.৯ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, বাস্তবে সেই বৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। কারণ, সৌদি আরব ছাড়া অনেক দেশই ইতোমধ্যে তাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় উৎপাদন করছে।

আরবিসি ক্যাপিটালের হেলিমা ক্রফট বলেন, “ডিসেম্বরে যে পরিমাণ অতিরিক্ত তেল বাজারে যোগ হবে, তা ঘোষিত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম হবে, কারণ সৌদি আরব ছাড়া অন্য প্রায় সব উৎপাদকই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে।”