০৮:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন সীতাকুণ্ডে প্রার্থী ঘোষণাকে ঘিরে সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রশাসনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে শেয়ারবাজারে টানা পতন: ডিএসই ও সিএসই-তে লেনদেন কমেছে অনলাইন জুয়া লেনদেন বন্ধে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কঠোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশের বিমান খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে এয়ারবাস: ফরাসি দূত তালেবানের ‘গ্রেটার আফগানিস্তান’ মানচিত্র: শক্তির নয়, হতাশার প্রতিফলন সিলেটে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ৩০ ঢাকায় এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার নোয়াখালীর কবিরহাটে ট্রাক-অটোর সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু

রপ্তানিতে চাঙা চীন, কিন্তু দেশীয় বাজারে স্থবিরতা

বৈশ্বিক ক্রেতারা এগিয়ে, পিছিয়ে শুধু চীনারাই

বিশ্বজুড়ে ক্রেতারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চীনা পণ্য কিনছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শুল্ক বৃদ্ধির পরও চীনা পণ্যের চাহিদা কমেনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, চীনের নিজস্ব নাগরিকরাই খরচ করতে সবচেয়ে বেশি অনীহা দেখাচ্ছেন।

এই প্রবণতাই এখন চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের অস্থিরতার মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লড়াইয়ে। সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ বছর চীন রপ্তানিতে আমদানির চেয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার বেশি আয় করবে। ফলে আন্তর্জাতিক মহল চীনকে দেশীয় ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

ঘরোয়া চ্যালেঞ্জ: বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও বার্ধক্যজনিত চাপ

দেশের ভেতরে অর্থনীতির সামনে একাধিক বাধা রয়েছে — যুব বেকারত্ব, দুর্বল সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং দ্রুত বয়স্ক হয়ে পড়া জনসংখ্যা। অথচ সরকার এসব সমস্যার সমাধানে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং ক্ষুদ্র নীতিগত পরিবর্তন এবং রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতেই মনোযোগ দিচ্ছে।

গত মাসে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরবর্তী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে বৈঠক করে বলেছিলেন, তারা “জনগণের জীবিকা উন্নয়ন ও ভোগব্যয় বৃদ্ধিকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করবে।” কিন্তু কোনো বাস্তব নীতি বা দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা হয়নি।

সাধারণ মানুষের বাস্তবতা: আয়ের অনিশ্চয়তা ও জীবিকার সংকট

শাংহাইয়ের এক শপিং মলে দুই সন্তানের মা চেন ইলিং বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। চাকরি পাওয়া কঠিন আর পেলেও সহজেই বরখাস্ত করা হয়।” তার স্বামী অর্থ খাতে কাজ করেন, তবে স্থায়ী চাকরি নেই। পরিবারটি সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও আকস্মিক লকডাউন চীনের ভোক্তা আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকার ভেবেছিল, ২০২২ সালের শেষে কঠোর নীতি প্রত্যাহার করলে অন্য দেশের মতো “প্রতিশোধমূলক খরচ” শুরু হবে, কিন্তু তা হয়নি।

মহামারির পর আয়ের পতন ও রিয়েল এস্টেট ধস

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো মহামারির সময় চীনা সরকার নাগরিকদের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়নি। এর ফলে সাধারণ পরিবারগুলোর আয় মহামারির আগের তুলনায় কমে গেছে। চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। কোম্পানিগুলো বেতন কমিয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে।

২০২১ সালে শুরু হওয়া রিয়েল এস্টেট বাজারের ধসও বড় আঘাত এনেছে। অনেক পরিবার তাদের সঞ্চয় সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছিল। চেন ইলিং জানান, তার চারটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার একটি ভাড়া দেওয়া। কিন্তু ভাড়াটিয়া এখন ভাড়া কমানোর দাবি করছেন। “অনেকে ভাড়া ছেড়ে দিচ্ছেন,” বলেন তিনি। “ভাড়ার হার আগের মতো বেশি নেই, সবাই কমানোর চেষ্টা করছে।”

সরকারের প্রণোদনা: পুরোনো জিনিস বদলে নতুন কেনার প্রচার

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০২৪ সালে বেইজিং একটি প্রচারণা শুরু করে — পুরোনো গৃহস্থালি সামগ্রী, ও গাড়ি বদলে নতুন কেনায় ছাড় দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে এতে স্মার্টফোন ও ইলেকট্রনিকসও যুক্ত করা হয়।

এর ফলে কিছুদিন কেনাকাটার উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও তা দ্রুত থেমে গেছে। জাপানি ব্যাংক নোমুরার প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ টিং লু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এ কর্মসূচি বাড়ালে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

একজন ক্রেতা তাং ইং বলেন, “যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ভালো। কিন্তু কেবল ভর্তুকি পাওয়ার জন্য কিছু কেনার ইচ্ছে আমার নেই।” তিনি মেডিকেল যন্ত্রপাতি খাতে কাজ করেন, যেখানে ছাঁটাই চলছে। আগে তিনি বিলাসপণ্যে বছরে কয়েক হাজার ডলার ব্যয় করতেন, এখন অনেক কমিয়েছেন।

পেনশন সংকট: সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়াচ্ছে ভোক্তা অনীহা

অর্থনীতিবিদ টিং লুর মতে, চীনে ভোক্তা খরচ কমে যাওয়ার মূল কারণ পেনশন ব্যবস্থার দুর্বলতা। দেশের অর্ধেকেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক, দিনে গড়ে মাত্র ১ ডলার পেনশন পান। “বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যে না পড়তে চাইলে মানুষকে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় করতেই হয়,” তিনি বলেন।

যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাকরি হারিয়েছেন বা নতুন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তারা অনেকে খাবার বা প্যাকেজ ডেলিভারির মতো গিগ অর্থনীতিতে কাজ করছেন। বর্তমানে ২০ কোটিরও বেশি মানুষ এসব অনিশ্চিত চাকরিতে যুক্ত, যেখানে সামাজিক সুরক্ষা বা বীমা প্রায় অনুপস্থিত।

ছোটখাটো পরিবর্তন, কিন্তু বড় সমাধান অনুপস্থিত

সরকার এখন পর্যন্ত কিছু সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে — যেমন, সেপ্টেম্বর থেকে সব নিয়োগদাতাকে কর্মচারীদের সুবিধা দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং গত বছর ১৯৫০-এর দশকের পর প্রথমবারের মতো অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে।

যুব দম্পতিদের সন্তান নেওয়ায় উৎসাহ দিতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মধ্যবয়সী নারীরা এখন বয়স্ক পিতা-মাতা ও সন্তানদের খরচে চাপে পড়ছেন।

মধ্যবয়সীদের বোঝা: সন্তান ও পিতা-মাতার যত্ন

পূর্বাঞ্চলীয় শহর জিয়াশিংয়ে কমিউনিটি কেয়ার ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তার হুয়াং ওয়েইজিয়া (৪৫) ও জেনি উ (৪২) একদিন কাজের বিরতিতে আইসক্রিম খেতে খেতে বলেন, তাদের বেতন কিছুটা কমেছে, তবে সরকারি চাকরির কারণে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে হচ্ছে।

জেনি উ বলেন, “এখন খরচ অনেক বেড়ে গেছে, ফলে সঞ্চয় করা প্রায় অসম্ভব।” তার দুই কিশোর সন্তান আছে, যাদের পড়াশোনার জন্য বছরে প্রায় ৭ হাজার ডলার খরচ হয়।

হুয়াং ওয়েইজিয়া বলেন, “আমাদের প্রজন্মই এখন সবচেয়ে বেশি খরচ করছে। আমাদের সন্তানদের খরচ, আর বৃদ্ধ পিতা-মাতার যত্ন — সব মিলে সঞ্চয় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

চীনের অর্থনীতি এখন এক কঠিন দ্বিধার মুখে — রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও দেশীয় ভোক্তাদের আস্থা ফিরে আসছে না। যতক্ষণ না সাধারণ মানুষের আয়, চাকরির নিরাপত্তা এবং পেনশন ব্যবস্থার বাস্তব উন্নতি ঘটানো যায়, ততক্ষণ চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাঙাভাব ফিরবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন

রপ্তানিতে চাঙা চীন, কিন্তু দেশীয় বাজারে স্থবিরতা

০১:৪৬:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

বৈশ্বিক ক্রেতারা এগিয়ে, পিছিয়ে শুধু চীনারাই

বিশ্বজুড়ে ক্রেতারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চীনা পণ্য কিনছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শুল্ক বৃদ্ধির পরও চীনা পণ্যের চাহিদা কমেনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, চীনের নিজস্ব নাগরিকরাই খরচ করতে সবচেয়ে বেশি অনীহা দেখাচ্ছেন।

এই প্রবণতাই এখন চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের অস্থিরতার মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লড়াইয়ে। সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ বছর চীন রপ্তানিতে আমদানির চেয়ে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার বেশি আয় করবে। ফলে আন্তর্জাতিক মহল চীনকে দেশীয় ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

ঘরোয়া চ্যালেঞ্জ: বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও বার্ধক্যজনিত চাপ

দেশের ভেতরে অর্থনীতির সামনে একাধিক বাধা রয়েছে — যুব বেকারত্ব, দুর্বল সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং দ্রুত বয়স্ক হয়ে পড়া জনসংখ্যা। অথচ সরকার এসব সমস্যার সমাধানে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং ক্ষুদ্র নীতিগত পরিবর্তন এবং রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতেই মনোযোগ দিচ্ছে।

গত মাসে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরবর্তী পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে বৈঠক করে বলেছিলেন, তারা “জনগণের জীবিকা উন্নয়ন ও ভোগব্যয় বৃদ্ধিকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করবে।” কিন্তু কোনো বাস্তব নীতি বা দিকনির্দেশনা প্রকাশ করা হয়নি।

সাধারণ মানুষের বাস্তবতা: আয়ের অনিশ্চয়তা ও জীবিকার সংকট

শাংহাইয়ের এক শপিং মলে দুই সন্তানের মা চেন ইলিং বলেন, “বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। চাকরি পাওয়া কঠিন আর পেলেও সহজেই বরখাস্ত করা হয়।” তার স্বামী অর্থ খাতে কাজ করেন, তবে স্থায়ী চাকরি নেই। পরিবারটি সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও আকস্মিক লকডাউন চীনের ভোক্তা আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকার ভেবেছিল, ২০২২ সালের শেষে কঠোর নীতি প্রত্যাহার করলে অন্য দেশের মতো “প্রতিশোধমূলক খরচ” শুরু হবে, কিন্তু তা হয়নি।

মহামারির পর আয়ের পতন ও রিয়েল এস্টেট ধস

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো মহামারির সময় চীনা সরকার নাগরিকদের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়নি। এর ফলে সাধারণ পরিবারগুলোর আয় মহামারির আগের তুলনায় কমে গেছে। চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। কোম্পানিগুলো বেতন কমিয়ে কর্মী ছাঁটাই করছে।

২০২১ সালে শুরু হওয়া রিয়েল এস্টেট বাজারের ধসও বড় আঘাত এনেছে। অনেক পরিবার তাদের সঞ্চয় সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছিল। চেন ইলিং জানান, তার চারটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার একটি ভাড়া দেওয়া। কিন্তু ভাড়াটিয়া এখন ভাড়া কমানোর দাবি করছেন। “অনেকে ভাড়া ছেড়ে দিচ্ছেন,” বলেন তিনি। “ভাড়ার হার আগের মতো বেশি নেই, সবাই কমানোর চেষ্টা করছে।”

সরকারের প্রণোদনা: পুরোনো জিনিস বদলে নতুন কেনার প্রচার

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০২৪ সালে বেইজিং একটি প্রচারণা শুরু করে — পুরোনো গৃহস্থালি সামগ্রী, ও গাড়ি বদলে নতুন কেনায় ছাড় দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে এতে স্মার্টফোন ও ইলেকট্রনিকসও যুক্ত করা হয়।

এর ফলে কিছুদিন কেনাকাটার উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও তা দ্রুত থেমে গেছে। জাপানি ব্যাংক নোমুরার প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ টিং লু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এ কর্মসূচি বাড়ালে কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

একজন ক্রেতা তাং ইং বলেন, “যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ভালো। কিন্তু কেবল ভর্তুকি পাওয়ার জন্য কিছু কেনার ইচ্ছে আমার নেই।” তিনি মেডিকেল যন্ত্রপাতি খাতে কাজ করেন, যেখানে ছাঁটাই চলছে। আগে তিনি বিলাসপণ্যে বছরে কয়েক হাজার ডলার ব্যয় করতেন, এখন অনেক কমিয়েছেন।

পেনশন সংকট: সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়াচ্ছে ভোক্তা অনীহা

অর্থনীতিবিদ টিং লুর মতে, চীনে ভোক্তা খরচ কমে যাওয়ার মূল কারণ পেনশন ব্যবস্থার দুর্বলতা। দেশের অর্ধেকেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক, দিনে গড়ে মাত্র ১ ডলার পেনশন পান। “বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যে না পড়তে চাইলে মানুষকে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় করতেই হয়,” তিনি বলেন।

যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাকরি হারিয়েছেন বা নতুন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন, তারা অনেকে খাবার বা প্যাকেজ ডেলিভারির মতো গিগ অর্থনীতিতে কাজ করছেন। বর্তমানে ২০ কোটিরও বেশি মানুষ এসব অনিশ্চিত চাকরিতে যুক্ত, যেখানে সামাজিক সুরক্ষা বা বীমা প্রায় অনুপস্থিত।

ছোটখাটো পরিবর্তন, কিন্তু বড় সমাধান অনুপস্থিত

সরকার এখন পর্যন্ত কিছু সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে — যেমন, সেপ্টেম্বর থেকে সব নিয়োগদাতাকে কর্মচারীদের সুবিধা দিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং গত বছর ১৯৫০-এর দশকের পর প্রথমবারের মতো অবসরের বয়স বাড়ানো হয়েছে।

যুব দম্পতিদের সন্তান নেওয়ায় উৎসাহ দিতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মধ্যবয়সী নারীরা এখন বয়স্ক পিতা-মাতা ও সন্তানদের খরচে চাপে পড়ছেন।

মধ্যবয়সীদের বোঝা: সন্তান ও পিতা-মাতার যত্ন

পূর্বাঞ্চলীয় শহর জিয়াশিংয়ে কমিউনিটি কেয়ার ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তার হুয়াং ওয়েইজিয়া (৪৫) ও জেনি উ (৪২) একদিন কাজের বিরতিতে আইসক্রিম খেতে খেতে বলেন, তাদের বেতন কিছুটা কমেছে, তবে সরকারি চাকরির কারণে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে হচ্ছে।

জেনি উ বলেন, “এখন খরচ অনেক বেড়ে গেছে, ফলে সঞ্চয় করা প্রায় অসম্ভব।” তার দুই কিশোর সন্তান আছে, যাদের পড়াশোনার জন্য বছরে প্রায় ৭ হাজার ডলার খরচ হয়।

হুয়াং ওয়েইজিয়া বলেন, “আমাদের প্রজন্মই এখন সবচেয়ে বেশি খরচ করছে। আমাদের সন্তানদের খরচ, আর বৃদ্ধ পিতা-মাতার যত্ন — সব মিলে সঞ্চয় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”

চীনের অর্থনীতি এখন এক কঠিন দ্বিধার মুখে — রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও দেশীয় ভোক্তাদের আস্থা ফিরে আসছে না। যতক্ষণ না সাধারণ মানুষের আয়, চাকরির নিরাপত্তা এবং পেনশন ব্যবস্থার বাস্তব উন্নতি ঘটানো যায়, ততক্ষণ চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাঙাভাব ফিরবে না।