০৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন সীতাকুণ্ডে প্রার্থী ঘোষণাকে ঘিরে সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের প্রশাসনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে শেয়ারবাজারে টানা পতন: ডিএসই ও সিএসই-তে লেনদেন কমেছে অনলাইন জুয়া লেনদেন বন্ধে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কঠোর নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশের বিমান খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে এয়ারবাস: ফরাসি দূত তালেবানের ‘গ্রেটার আফগানিস্তান’ মানচিত্র: শক্তির নয়, হতাশার প্রতিফলন সিলেটে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ৩০ ঢাকায় এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার নোয়াখালীর কবিরহাটে ট্রাক-অটোর সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু

হারিকেন মেলিসার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত জ্যামাইকা: অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজ অনেকে

ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত পশ্চিম জ্যামাইকা

শক্তিশালী ক্যাটাগরি ৫ হারিকেন ‘মেলিসা’ গত মঙ্গলবার জ্যামাইকায় আঘাত হানার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট এলিজাবেথ পারিশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধ্বংসের পাশাপাশি দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, তবে আরও অনেক মৃত্যুর খবর যাচাই করা হচ্ছে।

প্রাণহানি ও উদ্ধার কার্যক্রমে বাধা

জ্যামাইকার তথ্যমন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিপর্যয় আমাদের কল্পনার বাইরে। পুরো জাতি একসঙ্গে পুনর্গঠনের কাজে নেমেছে।’

তবে এখনো বহু দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি। কিছু এলাকায় রাস্তা, সেতু ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় পানিবন্দী মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগে রয়েছেন।

A man stands outside wearing a white shirt.

প্রত্যক্ষদর্শীদের করুণ অভিজ্ঞতা

সেন্ট এলিজাবেথের নিউ রিভার এলাকায় কাঠমিস্ত্রি আইজাইয়া বেকের বাড়ি ঝড়ে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বেক বলেন, “জল সব দিক থেকে আসছে। পানিতে মৃত গরু আর শূকর ভাসছে। পানি এখন পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”

বেক ঝড়ের সময় স্থানীয় বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি কাজ করেন। তবে সেখানে আশ্রিত শতাধিক বৃদ্ধ ও রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুভয়ের রাত

বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক বিয়ানকা মিচেল-স্মিথ বলেন, “বৃষ্টি আর ঢেউ একসঙ্গে এসে দেয়াল ভেঙে ফেলেছিল; ছাদ উড়ে গিয়েছিল। তখন আমরা রোগীদের পিঠে করে নিরাপদ ভবনে নিয়ে যাই। আমি বারবার প্রার্থনা করছিলাম—ঈশ্বর, কাউকে যেন হারাতে না হয়।”

তবে ঝড় শেষে দেখা যায়, বৃদ্ধাশ্রমের রান্নাঘর, গুদাম ও প্রায় সব সরঞ্জামই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তারা দুই বোতল পানি ও অল্প কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াপারে দিন কাটাচ্ছেন।

Flooding Remains in Some of the Hardest Hit Areas in Jamaica

বন্যার পানি ও দুর্গন্ধে নাজেহাল মানুষ

৬৪ বছর বয়সী রেজিনাল্ড ক্যাম্পবেল নিজের ভেজা বিছানা ও আসবাব রোদে শুকানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “ড্রেনেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি কমছে না, বরং বাড়ছে। আমরা উদ্বিগ্ন।”

জ্যামাইকার পানি সরবরাহ সংস্থার কর্মকর্তা ডেলানো উইলিয়ামস জানান, সেন্ট এলিজাবেথসহ কয়েকটি এলাকায় তাদের অবকাঠামো সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে; ৯০ শতাংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে বেঁচে থাকার লড়াই

নিউ রিভারের রাস্তাজুড়ে পড়েছে গাছপালা ও ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি। কেউ করাত দিয়ে গাছ কাটছে, কেউ নিজের ভাঙা ছাদ ঠিক করার চেষ্টা করছে। আশপাশের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কিছু পরিবার শুকনো জায়গায় কাপড়চোপড় ও আসবাব রোদে দিয়েছে।

দুই ছোট ছেলে নিজেদের জিনিসপত্র মাথায় নিয়ে হাঁটুসমান পানির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে — তাদের গন্তব্য অনিশ্চিত।

A home in the middle of a wide flooded area.

মৃতদেহের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে

ফিউনারেল হোম কর্মী ওয়েস্টন ব্রাউন জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। অনেক ঘরে মৃতদেহ এখনো পড়ে আছে। এখন না হলে পরে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।”

ঝড়ে ছাদ উড়ে গেছে, খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে, এবং কর্তৃপক্ষ সতর্ক করছে — বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত সংক্রমণ ও অনাহারের ঝুঁকি বাড়বে।

হারিকেন মেলিসা শুধু জ্যামাইকা নয়, পার্শ্ববর্তী হাইতিতেও অন্তত ৩০ জনের প্রাণ কেড়েছে। সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে এটি ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঝড়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকেই নিখোঁজ; আর যারা বেঁচে আছেন, তারা সংগ্রাম করছেন বন্যা, ক্ষুধা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৃতদের আহ্বান: মেক্সিকোর মৃত্যু সংস্কৃতির পুনর্মূল্যায়ন

হারিকেন মেলিসার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত জ্যামাইকা: অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজ অনেকে

০১:৫২:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত পশ্চিম জ্যামাইকা

শক্তিশালী ক্যাটাগরি ৫ হারিকেন ‘মেলিসা’ গত মঙ্গলবার জ্যামাইকায় আঘাত হানার পর দেশজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট এলিজাবেথ পারিশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ধ্বংসের পাশাপাশি দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, তবে আরও অনেক মৃত্যুর খবর যাচাই করা হচ্ছে।

প্রাণহানি ও উদ্ধার কার্যক্রমে বাধা

জ্যামাইকার তথ্যমন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধার ও পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিপর্যয় আমাদের কল্পনার বাইরে। পুরো জাতি একসঙ্গে পুনর্গঠনের কাজে নেমেছে।’

তবে এখনো বহু দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেননি। কিছু এলাকায় রাস্তা, সেতু ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় পানিবন্দী মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগে রয়েছেন।

A man stands outside wearing a white shirt.

প্রত্যক্ষদর্শীদের করুণ অভিজ্ঞতা

সেন্ট এলিজাবেথের নিউ রিভার এলাকায় কাঠমিস্ত্রি আইজাইয়া বেকের বাড়ি ঝড়ে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বেক বলেন, “জল সব দিক থেকে আসছে। পানিতে মৃত গরু আর শূকর ভাসছে। পানি এখন পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”

বেক ঝড়ের সময় স্থানীয় বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি কাজ করেন। তবে সেখানে আশ্রিত শতাধিক বৃদ্ধ ও রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুভয়ের রাত

বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক বিয়ানকা মিচেল-স্মিথ বলেন, “বৃষ্টি আর ঢেউ একসঙ্গে এসে দেয়াল ভেঙে ফেলেছিল; ছাদ উড়ে গিয়েছিল। তখন আমরা রোগীদের পিঠে করে নিরাপদ ভবনে নিয়ে যাই। আমি বারবার প্রার্থনা করছিলাম—ঈশ্বর, কাউকে যেন হারাতে না হয়।”

তবে ঝড় শেষে দেখা যায়, বৃদ্ধাশ্রমের রান্নাঘর, গুদাম ও প্রায় সব সরঞ্জামই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তারা দুই বোতল পানি ও অল্প কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াপারে দিন কাটাচ্ছেন।

Flooding Remains in Some of the Hardest Hit Areas in Jamaica

বন্যার পানি ও দুর্গন্ধে নাজেহাল মানুষ

৬৪ বছর বয়সী রেজিনাল্ড ক্যাম্পবেল নিজের ভেজা বিছানা ও আসবাব রোদে শুকানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “ড্রেনেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি কমছে না, বরং বাড়ছে। আমরা উদ্বিগ্ন।”

জ্যামাইকার পানি সরবরাহ সংস্থার কর্মকর্তা ডেলানো উইলিয়ামস জানান, সেন্ট এলিজাবেথসহ কয়েকটি এলাকায় তাদের অবকাঠামো সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে; ৯০ শতাংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে বেঁচে থাকার লড়াই

নিউ রিভারের রাস্তাজুড়ে পড়েছে গাছপালা ও ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি। কেউ করাত দিয়ে গাছ কাটছে, কেউ নিজের ভাঙা ছাদ ঠিক করার চেষ্টা করছে। আশপাশের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কিছু পরিবার শুকনো জায়গায় কাপড়চোপড় ও আসবাব রোদে দিয়েছে।

দুই ছোট ছেলে নিজেদের জিনিসপত্র মাথায় নিয়ে হাঁটুসমান পানির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে — তাদের গন্তব্য অনিশ্চিত।

A home in the middle of a wide flooded area.

মৃতদেহের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে

ফিউনারেল হোম কর্মী ওয়েস্টন ব্রাউন জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। অনেক ঘরে মৃতদেহ এখনো পড়ে আছে। এখন না হলে পরে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।”

ঝড়ে ছাদ উড়ে গেছে, খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিয়েছে, এবং কর্তৃপক্ষ সতর্ক করছে — বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত সংক্রমণ ও অনাহারের ঝুঁকি বাড়বে।

হারিকেন মেলিসা শুধু জ্যামাইকা নয়, পার্শ্ববর্তী হাইতিতেও অন্তত ৩০ জনের প্রাণ কেড়েছে। সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে এটি ছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ঝড়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকেই নিখোঁজ; আর যারা বেঁচে আছেন, তারা সংগ্রাম করছেন বন্যা, ক্ষুধা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে।