আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার ড্যানিশ ওষুধ কোম্পানি নোভো নরডিস্ক-এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো মামলা দায়ের করেছে। ফাইজারের অভিযোগ, নোভো তাদের ৯ বিলিয়ন ডলারের ‘মেটসেরা’ অধিগ্রহণ প্রস্তাবটি এমনভাবে সাজিয়েছে, যাতে চুক্তি বিলম্বিত করে স্থূলতা-বিরোধী ওষুধের বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখা যায়।
মামলার পটভূমি
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফাইজার ঘোষণা করে যে তারা সর্বোচ্চ ৭.৩ বিলিয়ন ডলারে বায়োটেক কোম্পানি, মেটসেরা অধিগ্রহণ করবে। এর আগে নোভো নরডিস্কের সঙ্গে কয়েক মাসব্যাপী তীব্র দরকষাকষি চলে। মেটসেরা নোভোর প্রস্তাব ছয়বার প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ কোম্পানিটি ইতোমধ্যে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং প্রতিযোগিতা বিষয়ক (অ্যান্টিট্রাস্ট) ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
গত সপ্তাহে নোভোর প্রধান বিনিয়োগকারী বোর্ড পরিবর্তন করে নতুন প্রস্তাব পেশ করে — এটি ছিল বছরের শুরু থেকে তাদের সপ্তম প্রস্তাব। মেটসেরা এই প্রস্তাবকে “উত্তম” বলে ঘোষণা করে এবং ফাইজারকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেয় নতুন প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য।
এই ঘোষণার পর ফাইজার শুক্রবার ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের আদালতে মেটসেরা ও নোভোর বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর সোমবার তারা আরেকটি (অ্যান্টিট্রাস্ট) মামলা দায়ের করে, এবার ফেডারেল আদালতে।

আদালতের কার্যক্রম
এই মামলার দায়িত্ব পেয়েছেন ভাইস চ্যান্সেলর মরগান জার্ন, যিনি মঙ্গলবার সকালে শুনানির সময়সূচি নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মেটসেরা অভিযোগ করেছে যে ফাইজার ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে মামলা করেছে, যাতে অধিগ্রহণমূল্য কমানো যায়। কোম্পানিটি ফাইজারের অভিযোগকে “অর্থহীন” বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, তারা আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দেবে।
নোভো নরডিস্ক জানিয়েছে, তারা ফাইজারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি ও শর্ত মেনে চলেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তথ্য ও আইন — উভয়ই আমাদের পক্ষে। ফাইজারের অভিযোগ যে নোভো মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় — এটি বাস্তবতা ও বাজারনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন।”
স্থূলতা-বিরোধী ওষুধে প্রতিযোগিতা বাড়ছে
মেটসেরা একটি নতুন প্রজন্মের স্থূলতা-বিরোধী ওষুধ তৈরি করছে, যা মাসে একবার ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। বর্তমানে নোভোর উইগোভি, ইলি লিলির মাউনজারো, বা জেপবাউন্ড ওষুধ সপ্তাহে একবার ইনজেকশন নিতে হয়।
ফাইজার এই প্রযুক্তিকে স্থূলতা-বিরোধী বাজারে প্রবেশের বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে — একটি বাজার, যা বিশ্লেষকদের মতে অদূর ভবিষ্যতে বছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারে। মেটসেরার পরীক্ষামূলক থেরাপি থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে।

ফাইজারের দাবি: প্রতিযোগিতা বিলম্বের কৌশল
ফাইজারের সর্বশেষ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নোভো নরডিস্ক মেটসেরা অধিগ্রহণে ৩০ মাসের ‘বাইরের সীমা তারিখ’ নির্ধারণ করেছে — অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন না হলে উভয় পক্ষ তা বাতিল করতে পারবে।
ফাইজারের দাবি, এই দীর্ঘ সময়সীমা ইচ্ছাকৃতভাবে মেটসেরার নতুন ওষুধ বাজারে আনার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করবে।
ফাইজারের সঙ্গে মেটসেরার পূর্ববর্তী চুক্তির মেয়াদ ছিল মাত্র নয় মাস; এবং ৩১ অক্টোবর সেই চুক্তির অ্যান্টিট্রাস্ট পর্যালোচনা দ্রুত সম্পন্ন হয়েছিল।
ফাইজারের মতে, নোভোর প্রস্তাব আসলে একটি “কৌশলগত চাল” — এর মাধ্যমে তারা মেটসেরার ওষুধের উন্নয়ন রোধ করে উইগোভি ও ওজেমপিকের বাজার শেয়ার ধরে রাখতে চায়।

নোভোর প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক
মামলায় বলা হয়েছে, নোভো মেটসেরার শেয়ারহোল্ডারদের ৬.৫ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থের প্রস্তাব দিয়েছে — নিয়ন্ত্রক পর্যালোচনার আগেই — এবং কোম্পানিটিকে এমন শর্তে বেঁধে রেখেছে যা গবেষণা কার্যক্রম বিলম্বিত করতে পারে।
ফাইজার তাদের অভিযোগে শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের বিখ্যাত সংলাপ উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘ডেনমার্কে কিছু একটা পচে গেছে’ — নোভোর বোর্ড পুনর্গঠনের পর তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে।
বাজার প্রতিক্রিয়া
সোমবার মেটসেরার শেয়ারের দর ৩.৭ % কমে ৬০.৭৩ ডলারে নেমে আসে। ফাইজারের শেয়ার অপরিবর্তিত থাকে, আর নোভোর শেয়ার সামান্য কমে ১ %-এর নিচে।
স্থূলতা-বিরোধী ওষুধের বৈশ্বিক বাজারে আধিপত্যের জন্য ফাইজার ও নোভোর মধ্যে এই আইনি লড়াই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আদালতের রায় এখন এই বহুমূল্য শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা ও বাজার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















