দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেখিয়ে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আশার আলো
জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি ডেঙ্গু টিকা সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি থেকে সাত বছর পর্যন্ত শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করেছে। এটি বর্তমানে বিদ্যমান সব ডেঙ্গু টিকার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা বলে দাবি করা হয়েছে।
সাত বছরের গবেষণায় শক্তিশালী ফলাফল
সোমবার তাকেদা প্রকাশিত এই ফলাফলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় ধাপের (ফেজ-৩) গবেষণা থেকে এসেছে, যেখানে লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার আটটি ডেঙ্গুপ্রবণ দেশে ২০ হাজারেরও বেশি সুস্থ শিশু ও কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে। এই গবেষণার ফলাফল তাকেদার দুই ডোজের টিকা কার্যক্রমের প্রতি আস্থা আরও বাড়িয়েছে — বিশেষত এমন সময়ে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতিরিক্ত ডোজের প্রয়োজন নেই

তাকেদার গ্লোবাল ভ্যাকসিন ইউনিটের প্রেসিডেন্ট ডেরেক ওয়ালেস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার কার্যকারিতা বুস্টার ডোজের আগে ও পরে কার্যকারিতা প্রায় একই ছিল। ফলে ডেঙ্গুপ্রবণ অঞ্চলে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে ভাইরাসের সংস্পর্শ ঘটে, সেখানে অতিরিক্ত ডোজের প্রয়োজন নাও হতে পারে। এতে সরকারি টিকাদান কর্মসূচির ব্যয় কমবে এবং প্রক্রিয়াও সহজ হবে।
ওয়ালেস আরও জানান, এই সফলতা তাকেদাকে “জনস্বাস্থ্য অংশীদার” হিসেবে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। কোম্পানিটি ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করার আশা করছে। গত অর্থবছরে তাকেদার ডেঙ্গু টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ থেকে আয় হয়েছিল ৩৫.৬ বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ২৩১ মিলিয়ন ডলার)।
বর্তমানে একমাত্র অনুমোদিত টিকা
তাকেদার ‘কিউডেঙ্গা’ বর্তমানে ৪১টি দেশে অনুমোদিত এবং এটি একমাত্র ডেঙ্গু টিকা যা সাধারণ ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সানোফির তৈরি টিকা ২০১৭ সালে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কারণ গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা আগে কখনও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি, তাদের জন্য এই টিকা পরবর্তীতে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে।
বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর প্রভাব

যুক্তরাজ্যের কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় ৯ হাজার মানুষ মারা যায়। ব্রাজিল সেই বছর ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়, যেখানে প্রায় ৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা এমন অঞ্চলে বসবাস করে যেখানে ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এই ভাইরাসবাহী মশার বিস্তার আরও ত্বরান্বিত করছে।
টিকার জটিলতা
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি পৃথক স্ট্রেইন রয়েছে, তাই একটি কার্যকর টিকা তৈরির জন্য সবগুলো স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি যদি একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর ভিন্ন স্ট্রেইনে পুনরায় আক্রান্ত হন, তবে প্রথম সংক্রমণের সময় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে আরও সহজে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করতে পারে, যা রোগকে আরও মারাত্মক করে তোলে।
তাকেদার নতুন টিকা ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা ও কার্যকর ফলাফল বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন আশা জাগিয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















