সাক্ষাৎকারের পটভূমি
রবিবার রাতে সিবিএসের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘৬০ মিনিটস’-এ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপস্থিত হন। এটি ছিল তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার সেই একই অনুষ্ঠানের সঙ্গে, যার বিরুদ্ধে তিনি এক বছর আগে মামলা করেছিলেন কামালা হ্যারিসের সাক্ষাৎকার সম্পাদনা নিয়ে মামলাটি করেছিলেন। পুরো সাক্ষাৎকারটি চলে প্রায় ৯০ মিনিট।
ট্রাম্প জানতেন তাঁর বক্তব্যের অনেক অংশই সংক্ষেপে প্রচারিত হবে। তাই মাঝে মাঝে তিনি সাংবাদিক নোরা ও’ডনেলকে মজার ছলে বলেন, “এটা রাখার দরকার নেই,” কিংবা “এটা প্রচার কোরো না, আমি তোমাকে বিপাকে ফেলতে চাই না।” তবে সম্প্রচারে এই অংশগুলো বাদ দেওয়া হয়। সিবিএস সাক্ষাৎকারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টেলিভিশনে প্রচার করে, বাকি অংশ ইউটিউব ও অনলাইন ট্রান্সক্রিপ্টে প্রকাশ করে।
ও’ডনেলের কঠিন প্রশ্ন
নোরা ও’ডনেল সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে বেশ কিছু কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেন। বিষয়গুলো ছিল জীবনযাত্রার ব্যয়, বিদেশনীতি, সরকারি কার্যক্রম স্থগিত থাকা অবস্থা ও অভিবাসন নীতি নিয়ে।
তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেন:
- “আমরা কি ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছি?”
- “অভিবাসনে ‘মিশন সম্পন্ন’ ঘোষণা কবে দেবেন?”
- “আপনি কি আমেরিকার শহরগুলোতে সেনা পাঠাতে যাচ্ছেন?”
কিছু জায়গায় ও’ডনেল ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। যেমন, ট্রাম্প যখন বলেন অর্থনীতি ভালো চলছে, তিনি পাল্টা মন্তব্য করেন যে, স্টক মার্কেটের উন্নতি মানেই সব নাগরিকের জীবনমান উন্নতি নয়।
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
লিবারেল বিশ্লেষকরা অভিযোগ তুলেছেন যে, ও’ডনেল সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের ভুল তথ্য যথেষ্টভাবে প্রতিহত করেননি। “প্রাক্তন এমএসএনবিসি সঞ্চালক জয় রিড বলেন,” “নোরা ট্রাম্পকে একের পর এক মিথ্যা বলার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু সঠিক তথ্য দিয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেননি।”
তবে এই সাক্ষাৎকার যে সহজ ছিল না, তাতে কেউ দ্বিমত করেননি। ও’ডনেলের প্রশ্ন ও ট্রাম্পের উত্তরগুলো বেশ কয়েকটি সংবাদ তৈরি করে। এক ভাইরাল অংশে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের অভিবাসন অভিযান এখনও যথেষ্ট দূর পর্যন্ত যায়নি।”
আরেক অংশে, বাইন্যান্স প্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপেং ঝাও সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না উনি কে।”
জীবনযাত্রার ব্যয় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রশ্নে ট্রাম্প দোষ দেন জো বাইডেনকে। তিনি গ্যাসের দাম কমানো ও স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু ও’ডনেল পাল্টা বলেন, “আপনি তো ২০১৫ সাল থেকেই স্বাস্থ্যবীমা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।”
ট্রাম্পের জবাব, “হ্যাঁ, কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।”
সিবিএস ও এলিসন পরিবারের প্রশংসা
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে খুব কমই মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাই এই সাক্ষাৎকার বিশেষভাবে আলোচিত। সিবিএসের প্রতি তাঁর আগ্রহ দীর্ঘদিনের, তবে ২০২০ সালের পর এটাই তাঁর প্রথম সম্মত সাক্ষাৎকার।
এই সাক্ষাৎকারের দিনই ছিল সেই তারিখ। এক বছর আগে সেদিনই ট্রাম্প সিবিএসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন কামালা হ্যারিসের ‘বিকৃত সম্পাদিত’ সাক্ষাৎকার প্রচার নিয়ে। পরে প্যারামাউন্ট ১৬ মিলিয়ন ডলার (প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার) দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে, যা দেওয়া হয় ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির জন্য।
এই সমঝোতা নিয়ে সমালোচনা হয়। ‘দ্য লেট শো’-এর সঞ্চালক স্টিফেন কোলবেয়ার এটিকে “একটি মোটা অঙ্কের ঘুষ” বলে মন্তব্য করেন। পরে তাঁর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়, যা নেটওয়ার্ক ‘আর্থিক সিদ্ধান্ত’ বলে ব্যাখ্যা দেয়।
নতুন মালিকানা ও ট্রাম্পের আশা
সমঝোতার কিছুদিন পর ট্রাম্প প্রশাসন প্যারামাউন্ট ও স্কাইড্যান্স মিডিয়ার একীভবন অনুমোদন করে, যার ফলে ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের ছেলে ডেভিড এলিসন সিবিএসের নিয়ন্ত্রণ নেন।
ট্রাম্প বলেন, “ল্যারি এলিসন দারুণ একজন মানুষ, তাঁর ছেলে ডেভিডও তাই। তারা আমার বন্ধু এবং বড় সমর্থক। আমি বিশ্বাস করি তারা সিবিএসকে পুরনো গৌরবে ফিরিয়ে আনবে।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন মালিকানায় ‘৬০ মিনিটস’ ও সিবিএস আবার স্বাধীন ও নির্ভীক সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
নতুন সম্পাদক ও ভুল তথ্যের প্রসঙ্গ
ট্রাম্প সিবিএস নিউজের নতুন সম্পাদক ইন-চিফ ব্যারি ওয়েইসের নাম না বললেও তাঁকে প্রশংসা করেন, বলেন, “যে তরুণী এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি অসাধারণ—আমি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, কিন্তু ভালো কথা শুনেছি।”
তবে তিনি ভুল দাবি করেন যে, “‘৬০ মিনিটস’ আমাকে অনেক টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিল।” বাস্তবে এটি ছিল একটি কর্পোরেট সমঝোতা, যা আদালতে গেলে সিবিএস জয়ী হতে পারত।
আরও একটি ভুল দাবি করেন ট্রাম্প—যে হ্যারিস সাক্ষাৎকারটি “নির্বাচনের দুই রাত আগে প্রচারিত হয়েছিল,” অথচ বাস্তবে এটি প্রচারিত হয় নির্বাচনের এক মাস আগে।
সিবিএসের ব্যাখ্যা
সম্প্রচারের শুরুতেই নোরা ও’ডনেল দর্শকদের জানান, প্যারামাউন্ট ও ট্রাম্পের সমঝোতায় কোনো দুঃখপ্রকাশ বা ভুল স্বীকারের ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
৯০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকার ট্রাম্প ও সিবিএস উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প যেখানে নতুন মালিকদের প্রশংসা করে সংবাদমাধ্যমের প্রতি নরম সুরে কথা বলেন, সেখানে তাঁর অস্পষ্ট ও বিতর্কিত মন্তব্য আবারও রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় তোলে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















