আমিরাতের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. আনোয়ার গারগাশের মন্তব্য — ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান ছিল “গুরুতর ভুল”; দেশটি ঘোষণা করল নতুন মানবিক সহায়তা হিসেবে ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা।
সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক ব্যর্থতা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০২১ সালে সুদানে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকাতে সম্মিলিতভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর মতে, এই ব্যর্থতাই আজকের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মূল কারণ।
বাহরাইনে অনুষ্ঠিত মানামা ডায়ালগ সম্মেলনে ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহইয়ানের কূটনৈতিক উপদেষ্টা ড. আনোয়ার গারগাশ বলেন, “আজ যারা গৃহযুদ্ধে লড়ছে, সেই দুই জেনারেলই যখন বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করেছিল, আমরা সবাই তখন ভুল করেছিলাম। এখন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, সেটি ছিল একটি বড় ভুল।”
তিনি আরও বলেন, “সেই সময়ে আমাদের সবাইকে একযোগে দৃঢ় অবস্থান নিতে হতো। কিন্তু তখন সুদান আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা থেকে সদ্য মুক্ত হচ্ছিল, তাই আমরা ভাবলাম দেশটিকে আগে সেই নিষেধাজ্ঞা থেকে পুরোপুরি বের হতে দিই। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, দুই জেনারেলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটল, যা আজকের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছে।”

সংঘর্ষের ভয়াবহ মানবিক প্রভাব
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদানে সরকারি সেনাবাহিনী (SAF) ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই দুই বাহিনীই ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও জাতিগত সহিংসতা দেশটিকে চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
রয়টার্সের তথ্যমতে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কয়েক দশ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সুদানের কিছু অঞ্চল দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে, যা বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মানবিক সহায়তায় ইউএইর প্রতিশ্রুতি
ড. গারগাশ জানান, ইউএই সুদানে মানবিক সহায়তা জোরদার করতে নতুন করে ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। এই অর্থ আন্তর্জাতিক ও মানবিক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা সুদানে মানবিক কার্যক্রমে দ্বিগুণ উদ্যোগ নিচ্ছি। আমাদের সহায়তা দক্ষিণ সুদান ও চাদের হাসপাতালগুলোতেও পৌঁছে দেওয়া হবে।”
তিনি জানান, এই সহায়তা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেড ক্রিসেন্ট, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।

শান্তির পথে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ: ‘কোয়াড’ কাঠামো
ড. গারগাশ বলেন, ইউএই সুদানের জন্য গঠিত ‘কোয়াড’ জোটের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই জোটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর এবং ইউএই। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে গঠিত এই উদ্যোগে তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি, রাজনৈতিক শান্তি প্রক্রিয়া, এবং নয় মাসের মধ্যে একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
তিনি বলেন, “সব ধোঁয়াশা দূর করে মূল প্রশ্ন হলো — দুই জেনারেল কি সত্যিই ক্ষমতা বেসামরিক সরকারের কাছে হস্তান্তরে রাজি আছেন? এটাই আসল পরীক্ষা।”
তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান
ড. গারগাশ আরও বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে শুধু এল ফাশের নয়, পুরো সুদানের মানুষ সাহায্য পেতে পারে। এতে শুধু ইউএই নয়, আরও অনেক দেশ এগিয়ে আসবে।”
তিনি এল ফাশের শহরে সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এল ফাশেরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা যেমন নিন্দনীয়, তেমনি সুদানের অন্য যেকোনো স্থানের নৃশংসতাও নিন্দার যোগ্য। এখন যা সবচেয়ে জরুরি, তা হলো — অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও একটি বেসামরিক সরকারের দিকে অগ্রসর হওয়া।”
ড. গারগাশের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সুদানের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও গভীর হবে। ইউএইর নতুন সহায়তা ও কূটনৈতিক অবস্থান হয়তো শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে।
#সুদানসংকট #সংযুক্তআরবআমিরাত #আনোয়ারগারগাশ #মানবিকসহায়তা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















