জাপানের সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা ক্রমশ চাপের মুখে পড়ায়, প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে—যাতে বিদেশি নাগরিকরাও স্বাস্থ্য ও পেনশন সুবিধার বোঝা ন্যায্যভাবে বহন করে।
সংস্কারের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
তাকাইচি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। এর লক্ষ্য হলো সমাজে বেড়ে চলা বৈষম্য ও বৃদ্ধ জনসংখ্যার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়া কল্যাণব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।
মঙ্গলবার বিদেশি নাগরিকদের বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, জানুয়ারির মধ্যে কঠোর বাস্তবায়নের জন্য স্পষ্ট নীতিমালা প্রস্তুত করতে।
প্রথম ধাপে সরকার মনোযোগ দেবে সেই বিদেশি স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রতি যারা নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিমা প্রিমিয়াম বা পেনশন অবদান প্রদান করেননি। কর্মকর্তাদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যাজনিত চাপ সামাল দিতে সহায়ক হবে।
জাপানের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে বিদেশি বাসিন্দারা বাধ্যতামূলক পেনশন অবদানের মাত্র ৪৯.৭ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যবিমা প্রিমিয়ামের ৬৩ শতাংশ প্রদান করেছেন—যা সামগ্রিক গড় হার ৯৩ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।

তাকাইচির বক্তব্য
“কিছু বিদেশি নাগরিকের অবৈধ কার্যকলাপ ও নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে জনগণ উদ্বেগ ও বৈষম্যের অনুভূতি প্রকাশ করছে।” মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন তাকাইচি। তিনি অঙ্গীকার করেন “সুশৃঙ্খল সহাবস্থান” নিশ্চিত করতে, যাতে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সবাই জাপানের আইন ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করে।
এই সংস্কার তাকাইচির নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী অঙ্গীকারের অন্যতম মূল অংশ। ২১ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কিমি ওনোদাকে প্রথম, “বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে সুশৃঙ্খল সহাবস্থানের সমাজ” বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।
সমর্থন ও সমালোচনা
সমর্থকদের দাবি, এই পদক্ষেপ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। টোকিওর ব্যবসায়ী কেন কাতো বলেন, “এটি বিদেশ বিদ্বেষ বা বর্ণবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং সবাইকে একই নিয়ম মানতে বাধ্য করার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আগের সরকারগুলো বর্ণবাদের অভিযোগের ভয় পেয়ে কঠোর হয়নি, যার ফলে জাপানকে নরম ভাবা হয়েছে। যারা দেনা পরিশোধ করে না, তাদের জন্য বাকিদের অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হয়, যা অন্যায়।”
প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের প্রস্তুতি
সরকার এই কড়াকড়ি বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিবাসন ব্যুরোর সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগির একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করেছে, যা ২০২৭ সালে কার্যকর হবে।
এই ব্যবস্থার আওতায় যারা স্বাস্থ্যবিমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে না, তারা ভিসা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ হারাবে। পাশাপাশি, যারা চিকিৎসা বিল পরিশোধ করেনি, তাদের তথ্যও বাসস্থান অনুমোদনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

২০২৪ অর্থবছরে জাপানের হাসপাতালগুলোর ৮৩ শতাংশের বেশি লোকসান গুনেছে, মোট ৩৯৫ বিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ জমেছে।
হোক্কাইডো হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োকো সুকামোতো বলেন, “আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যে এই সমস্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে — হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাপানে এমনটি ঘটতে দেওয়া যাবে না।”
সমস্যার গভীরতা
সুকামোতো স্বীকার করেন, সমস্যা জটিল এবং কেবল বিদেশিদের ওপর দায় চাপানো ঠিক নয়। “জাপানের অনেক হাসপাতালেই শয্যা বেশি, অথচ জনসংখ্যা কমছে। ব্যয়ও বাড়ছে, ফলে আর্থিকভাবে হাসপাতাল চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। রোগীদের চিকিৎসা বিল পরিশোধ করা জরুরি হলেও, বিদেশিরা একমাত্র দায়ী নয় — জাপানিরাও অনেকে পরিশোধ করে না।”
জনমতের প্রতিক্রিয়া
রক্ষণশীল ইয়োমিউরি পত্রিকার পাঠকদের মধ্যে অনেকেই আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন। এক মন্তব্যে লেখা হয়, “তাকাইচি সরকার ক্ষমতায় এসেই বিদেশিদের বিমা না দেওয়ার বিষয়টি মোকাবিলা করছে। বিদেশির সংখ্যা বাড়ছে, তাই দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বামপন্থী দলগুলোর ‘মানবাধিকার’ বা ‘সমতার’ অজুহাতে যেন এই বিষয়টি চাপা না পড়ে, তাকাইচি যেন জাপানকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করেন।”

অন্যরা আরও কঠোর প্রস্তাব দিয়েছেন—বিদেশিদের বাধ্যতামূলক বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমা নেওয়া থেকে শুরু করে ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি অর্থ কেটে নেওয়া বা বিমানবন্দরে দেনাদারদের আটক করার মতো ব্যবস্থা পর্যন্ত।
একজন মন্তব্যকারী প্রশ্ন তুলেছেন, “জাপানের ব্যবস্থা এত শিথিল কেন? সরকার পদক্ষেপ নিতে এত দেরি করছে কেন? জাপানিদের প্রতি কর্তৃপক্ষ কঠোর, কিন্তু বিদেশিদের প্রতি নরম—তাই তারা সুযোগ নেয়।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















