আসন্ন নির্বাচনে ভারতের রাজনীতির নজর বিহারের দিকে
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া বিহার রাজ্যের কঠিন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ভোট শুধু বিহারের নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে না—এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জোট সরকারের স্থিতি এবং তার জনপ্রিয় প্রভাব কতটা টিকে আছে, তা-ও পরিষ্কার করবে।
দুই ধাপে ভোট, ফলাফল নির্ধারণে জাতীয় গুরুত্ব
বিহারের ভোট দুটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে—প্রথম ধাপ বৃহস্পতিবার এবং দ্বিতীয় ধাপ আগামী মঙ্গলবার। ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী শুক্রবার। এই নির্বাচনের প্রভাব শুধুমাত্র বিহারেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য নির্বাচনের জন্যও দিকনির্দেশক হতে পারে—যেমন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরি।
জোট রাজনীতিতে বিজেপির নির্ভরতা বেড়েছে
গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর এখন তাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে আঞ্চলিক মিত্রদের ওপর—বিশেষ করে বিহারের প্রভাবশালী জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর ওপর, যার নেতৃত্বে আছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
এই নির্বাচনে বিজেপি-জেডিইউ জোটের জয় মোদির রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে—দলীয় পর্যায়ে যেমন, তেমনি তার আদর্শিক ভিত্তি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর মধ্যেও। বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় মোদিকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।

প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে তেজস্বী যাদবের উত্থান
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি), যার নেতৃত্বে আছেন তরুণ নেতা তেজস্বী যাদব। এই জোটে যুক্ত রয়েছে জাতীয় কংগ্রেস দলও। ফলে, এই নির্বাচন মূলত হয়ে উঠেছে দুই জোটের মধ্যে শক্তির লড়াই—একদিকে মোদি ও নীতীশের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, অন্যদিকে তেজস্বী যাদবের তরুণ উদ্যম এবং বিরোধী ঐক্য।
জাতীয় রাজনীতির পরীক্ষার মঞ্চ
বিহারের এই নির্বাচন শুধু আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রশ্ন নয়, এটি মোদির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক পরীক্ষা। আগামী বছরের রাজ্য নির্বাচনের আগে এটি হবে তার দলের প্রভাব ও জোট কাঠামোর বাস্তব মূল্যায়নের ক্ষেত্র।
বিজেপি যদি এখানে জয় পায়, তাহলে তা মোদির নেতৃত্বে দলের জন্য আত্মবিশ্বাসের জোগান হবে। কিন্তু পরাজয় ঘটলে, তা ইঙ্গিত দেবে যে ভারতের রাজনীতিতে মোদির প্রভাব ধীরে ধীরে সীমিত হতে শুরু করেছে।
বিহারের ভোট তাই এখন ভারতের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এই লড়াই শুধু একটি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন নয়, বরং এটি ঠিক করে দেবে—২০২৬ সালের পথে মোদির বিজেপি কতটা দৃঢ়ভাবে এগোতে পারবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















