প্রথমবারের মতো মে মাসের সংঘর্ষের পর সীমান্ত অতিক্রম
পাকিস্তান মঙ্গলবার ভারতীয় শিখ তীর্থযাত্রীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এটি ছিল মে মাসের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রথম বড় ধরনের সীমান্ত পারাপার। পাকিস্তানে ভারতের ২,১০০-রও বেশি শিখ তীর্থযাত্রী প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন, গুরু নানকের ৫৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হওয়া ১০ দিনের উৎসবে যোগ দিতে। এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের নয়াদিল্লিস্থ হাইকমিশন।
মে মাসের সংঘর্ষের পটভূমি
চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৯৯ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়, যাতে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। সেই ঘটনার পর থেকেই দুই দেশের একমাত্র সক্রিয় স্থলসীমান্ত, ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত, সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ ছিল। এবার উৎসব উপলক্ষে তা বিশেষভাবে খোলা হয়।
তীর্থযাত্রীদের উচ্ছ্বাস ও আন্তরিক অভ্যর্থনা
এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত শত তীর্থযাত্রী নিজেদের মালপত্র নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এবং গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আনন্দে উচ্ছ্বসিত অনেক তীর্থযাত্রী গলায় মালা পরে উল্লাসধ্বনি দেন।

তীর্থযাত্রী পারভিন্দর কৌর বলেন, “আমাদের যুদ্ধের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বহুদিন ধরে এই তীর্থস্থানগুলোর ভিডিও দেখেছি এবং স্বপ্ন দেখেছি এখানে আসার। আজ অবশেষে তা সত্যি হয়েছে।”
অন্য এক তীর্থযাত্রী, বালেতি সিংহ বলেন, “এটা অন্য কোনো দেশ বলে মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমরা আমাদেরই মানুষের মাঝে আছি। আমরা প্রার্থনা করি, যেন একদিন পাকিস্তানের মানুষও আমাদের দেশে এসে একই উষ্ণতা ও ভালোবাসা পান।”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা
পাকিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাসির মুসতাক জানান, মঙ্গলবার প্রায় ২,০০০ তীর্থযাত্রী গুরু নানকের জন্মদিনের আগের দিন পাকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, “আমরা ভারত থেকে আগত সব শিখ তীর্থযাত্রীকে অতীতের তুলনায় আরও বেশি সম্মান, মর্যাদা ও আতিথেয়তার সঙ্গে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা চাই, তারা পাকিস্তান থেকে ভালোবাসা, শান্তি ও শ্রদ্ধার সুন্দর স্মৃতি নিয়ে ফিরে যাক।”
তীর্থস্থান পরিদর্শন ও আধ্যাত্মিক যাত্রা
তীর্থযাত্রীরা বুধবার নানকানা সাহিবে সমবেত হন—এটি গুরু নানকের জন্মস্থান, যা লাহোরের পশ্চিমে অবস্থিত। পরে তারা পাকিস্তানের আরও কয়েকটি পবিত্র স্থানে যাবেন, যার মধ্যে রয়েছে করতরপুর, যেখানে গুরু নানককে সমাহিত করা হয়েছে।
ধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ
পাকিস্তানের হাইকমিশন জানিয়েছে, এই তীর্থযাত্রার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশটির আন্তঃধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি জোরদারের প্রচেষ্টারই অংশ।

করতরপুর করিডোর এখনো বন্ধ
২০১৯ সালে চালু হওয়া করতরপুর করিডোর, যা ভিসা ছাড়াই ভারতীয় শিখদের গুরুদ্বার পরিদর্শনের সুযোগ দিত, মে মাসের সংঘর্ষের পর থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে।
সংঘর্ষের কারণ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
মে মাসের চার দিনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল যখন ভারত অভিযোগ তোলে যে পাকিস্তান কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলায় জড়িত। পাকিস্তান অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
শিখ ধর্ম ১৫শ শতকে পাঞ্জাবে জন্ম নেয়—একটি অঞ্চল যা বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই বিভক্ত। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ভারত ও পাকিস্তান পৃথক হওয়ার সময় অধিকাংশ শিখ ভারতে চলে যান। তবে তাদের সবচেয়ে পবিত্র দুটি তীর্থস্থান—নানকানা সাহিব ও করতরপুর—রয়ে যায় পাকিস্তানের ভূখণ্ডে।
এই ঐতিহাসিক ভ্রমণ তাই কেবল ধর্মীয় নয়, বরং সীমান্তে শান্তি, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার এক প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















