০৫:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতীফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে নির্বাচনের আগের পরিবেশ এখনো নাজুক: আইআরআই টাইফুন কালমায়গির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে ১১৪ জনের মৃত্যু, ঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর মৃত্যুর হিসাব এখনো চলছে: টাইফুন ‘টিনো’-র তাণ্ডব পেঁয়াজের দাম: দশ দিনেই দ্বিগুণ বাড়ার কারণ কী? আলাস্কায় টাইফুনে বিধ্বস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা এআই যুগে নতুন প্রেমের খোঁজ: ডেটিং অ্যাপের রূপান্তর খারাপ রাষ্ট্রে ভালো নাগরিক হওয়ার সাহস: নৈতিক দায়িত্ব ও বিবেকের লড়াই মধ্যবয়সী নারীর শরীর ও মনকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য: ‘বিগ ওয়েলনেস’-এর উত্থান

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে

গত বছর ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এ আমি দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতির একটি কাঠামো তুলে ধরেছিলাম, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অনুসৃত “শক্তির মাধ্যমে শান্তি” নীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। এই “আমেরিকা প্রথম” দৃষ্টিভঙ্গি ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের নীতি এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদদের প্রস্তাবিত নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল।

এই ডেমোক্র্যাটিক চিন্তাধারায় বিশ্বাস করা হয় যে যুক্তরাষ্ট্র অবনতির পথে, এবং এই প্রক্রিয়াকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত—

  • সামরিক ব্যয়ের ধীরে ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য কাটছাঁটের মাধ্যমে একতরফা নিরস্ত্রীকরণ,
  • আমেরিকার অতীত “অতিরিক্ততা” বা “ভুলের” জন্য ক্ষমা চাওয়া,
  • প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে আংশিকভাবে মেনে নেওয়া, যেমন ইরানের কাছে গোপনে মুক্তিপণ হিসেবে “মানবিক সহায়তা” প্রদান,
  • এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মতো কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দায় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা।

কিন্তু ২০২৪ সালে, এই নীতির বারো বছরের অভিজ্ঞতার বিপরীতে ট্রাম্পের চার বছরের “আমেরিকা প্রথম” পররাষ্ট্রনীতি দেখে, আমেরিকান জনগণ স্পষ্টভাবে শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করছেন— এবং প্রমাণ করেছেন যে শক্তিই শান্তি ও নিরাপত্তা বয়ে আনে।

সামরিক পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের এক প্রজন্মব্যাপী পরিকল্পনা শুরু করেছেন, যা ২০২৬ অর্থবছরের নিয়মিত বাজেটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নে চালিত হচ্ছে।
তিনি মিত্র দেশগুলোকে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দ দিতে রাজি করিয়েছেন, যাতে তারা বৈশ্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে পারে।

ট্রাম্প দক্ষিণ সীমান্তের অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, হামাসের কাছে নতি স্বীকার না করে ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থন জানিয়েছেন, এবং ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপের নীতি পুনরায় চালু করেছেন— এমনকি তাদের পারমাণবিক স্থাপনাতেও হামলা চালিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধও ধীরে ধীরে সমাধানের পথে, যদিও পুতিনের অনমনীয়তার কারণে অগ্রগতি ধীর। এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে এবং স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা করেছে।

ইউরোপ ও ন্যাটোতে শক্তির নতুন অধ্যায়

সমালোচকরা দাবি করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জোট দুর্বল করেছেন; কিন্তু বাস্তবে তিনি তা আরও মজবুত করেছেন। তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপে সবচেয়ে বড় পুনরায় অস্ত্রায়ন কার্যক্রম চলছে।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলো এখন ৫ শতাংশ জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যয় করতে রাজি হয়েছে, যার মধ্যে ৩.৫ শতাংশ মূল সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হবে। জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে।

২০২৫ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউক্রেন সহায়তা ত্রৈমাসিকে গড়ে ১৮.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাইডেন প্রশাসনের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ট্রাম্প শর্ত দিয়েছেন— যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবে, তবে অর্থায়ন করবে ইউরোপ। এতে ন্যাটো আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং আমেরিকান করদাতাদের বোঝাও কমেছে।

সামরিক বিনিয়োগে ঐতিহাসিক বৃদ্ধি

পরবর্তী অর্থবছরে ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেস ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর সাইবার প্রতিরক্ষা, ড্রোন প্রযুক্তি, চীনের মোকাবিলায় নৌযান নির্মাণ, এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অগ্রাধিকারকে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে এবং নিশ্চিত করবে যে আমেরিকান সামরিক বাহিনী বিশ্বে সর্বাধিক শক্তিশালী থাকে।

ট্রাম্প ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একইভাবে মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছেন। তাইওয়ান ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে HIMARS রকেট ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে। এমনকি ভিয়েতনামও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে F-16 যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে— যা রাশিয়ার প্রভাব থেকে এক বড় কৌশলগত সরে আসা।

পারমাণবিক প্রতিরোধ ও গোল্ডেন ডোম” উদ্যোগ

ট্রাম্প ‘গোল্ডেন ডোম’ মিসাইল প্রতিরক্ষা প্রকল্প চালু করেছেন, যা স্থলভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও মহাকাশভিত্তিক সেন্সর নিয়ে গঠিত। এছাড়া তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক প্রদর্শনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও সমান ভিত্তিতে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করবে।
এর লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষকে বোঝানো— যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনে প্রস্তুত এবং যে কোনো হুমকির জবাব দিতে সক্ষম।

মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির কূটনীতি

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থন এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় দেশটির সক্ষমতা বিপর্যস্ত হয়েছে। সর্বোচ্চ চাপের ফলে ইরান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, হামাস ও হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়েছে, এবং অঞ্চলটিতে আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা ফিরেছে।

এছাড়া ট্রাম্প নিজেকে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজানসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী বিরোধে সমাধান আনতে ভূমিকা রেখেছেন।
তার কৌশল স্পষ্ট— অর্থনৈতিক শক্তি ও বাণিজ্য নীতিকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে শান্তি আনয়ন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া নিরাপত্তা ও পাশ্চাত্য গোলার্ধে নিয়ন্ত্রণ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ট্রাম্প নিরাপত্তা জোরদার করেছেন এবং মেক্সিকো ও কানাডাকে নিজ নিজ সীমান্তে মাদক ও মানবপাচার দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদকবাহী জাহাজে মার্কিন হামলায় ভেনেজুয়েলার কার্টেল কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে।

গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি ডেনমার্ককে ঐ অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যা রাশিয়া ও চীনের জন্য স্পষ্ট বার্তা। পানামা খালে চীনের প্রভাব নিয়েও তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সঙ্কট কমেছে, মানবপাচার হ্রাস পেয়েছে, আর্কটিকে রাশিয়ার প্রভাব কমেছে, এবং আমেরিকা আরও নিরাপদ হয়েছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র আবারও প্রমাণ করছে— শক্তি ও দৃঢ় নেতৃত্বই শান্তি ও নিরাপত্তার ভিত্তি। এক শক্তিশালী আমেরিকা এবং দায়িত্বশীল মিত্ররা একসঙ্গে দাঁড়ালে তারা স্বৈরশাসক, সন্ত্রাসী ও প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে।
“শক্তির মাধ্যমে শান্তি”— এই নীতিতেই ট্রাম্প নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক নতুন বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার যুগে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতীফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে

০২:৫৪:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

গত বছর ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এ আমি দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতির একটি কাঠামো তুলে ধরেছিলাম, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অনুসৃত “শক্তির মাধ্যমে শান্তি” নীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। এই “আমেরিকা প্রথম” দৃষ্টিভঙ্গি ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের নীতি এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদদের প্রস্তাবিত নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল।

এই ডেমোক্র্যাটিক চিন্তাধারায় বিশ্বাস করা হয় যে যুক্তরাষ্ট্র অবনতির পথে, এবং এই প্রক্রিয়াকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত—

  • সামরিক ব্যয়ের ধীরে ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য কাটছাঁটের মাধ্যমে একতরফা নিরস্ত্রীকরণ,
  • আমেরিকার অতীত “অতিরিক্ততা” বা “ভুলের” জন্য ক্ষমা চাওয়া,
  • প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রের ইচ্ছাকে আংশিকভাবে মেনে নেওয়া, যেমন ইরানের কাছে গোপনে মুক্তিপণ হিসেবে “মানবিক সহায়তা” প্রদান,
  • এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মতো কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দায় নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা।

কিন্তু ২০২৪ সালে, এই নীতির বারো বছরের অভিজ্ঞতার বিপরীতে ট্রাম্পের চার বছরের “আমেরিকা প্রথম” পররাষ্ট্রনীতি দেখে, আমেরিকান জনগণ স্পষ্টভাবে শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর থেকেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করছেন— এবং প্রমাণ করেছেন যে শক্তিই শান্তি ও নিরাপত্তা বয়ে আনে।

সামরিক পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা

দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের এক প্রজন্মব্যাপী পরিকল্পনা শুরু করেছেন, যা ২০২৬ অর্থবছরের নিয়মিত বাজেটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নে চালিত হচ্ছে।
তিনি মিত্র দেশগুলোকে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দ দিতে রাজি করিয়েছেন, যাতে তারা বৈশ্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে পারে।

ট্রাম্প দক্ষিণ সীমান্তের অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, হামাসের কাছে নতি স্বীকার না করে ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থন জানিয়েছেন, এবং ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপের নীতি পুনরায় চালু করেছেন— এমনকি তাদের পারমাণবিক স্থাপনাতেও হামলা চালিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধও ধীরে ধীরে সমাধানের পথে, যদিও পুতিনের অনমনীয়তার কারণে অগ্রগতি ধীর। এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে এবং স্থিতিশীলতার নতুন যুগের সূচনা করেছে।

ইউরোপ ও ন্যাটোতে শক্তির নতুন অধ্যায়

সমালোচকরা দাবি করেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জোট দুর্বল করেছেন; কিন্তু বাস্তবে তিনি তা আরও মজবুত করেছেন। তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপে সবচেয়ে বড় পুনরায় অস্ত্রায়ন কার্যক্রম চলছে।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলো এখন ৫ শতাংশ জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ব্যয় করতে রাজি হয়েছে, যার মধ্যে ৩.৫ শতাংশ মূল সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হবে। জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে।

২০২৫ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউক্রেন সহায়তা ত্রৈমাসিকে গড়ে ১৮.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বাইডেন প্রশাসনের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ট্রাম্প শর্ত দিয়েছেন— যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবে, তবে অর্থায়ন করবে ইউরোপ। এতে ন্যাটো আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং আমেরিকান করদাতাদের বোঝাও কমেছে।

সামরিক বিনিয়োগে ঐতিহাসিক বৃদ্ধি

পরবর্তী অর্থবছরে ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেস ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর সাইবার প্রতিরক্ষা, ড্রোন প্রযুক্তি, চীনের মোকাবিলায় নৌযান নির্মাণ, এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অগ্রাধিকারকে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে এবং নিশ্চিত করবে যে আমেরিকান সামরিক বাহিনী বিশ্বে সর্বাধিক শক্তিশালী থাকে।

ট্রাম্প ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও একইভাবে মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছেন। তাইওয়ান ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয়ে পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে HIMARS রকেট ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে। এমনকি ভিয়েতনামও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে F-16 যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে— যা রাশিয়ার প্রভাব থেকে এক বড় কৌশলগত সরে আসা।

পারমাণবিক প্রতিরোধ ও গোল্ডেন ডোম” উদ্যোগ

ট্রাম্প ‘গোল্ডেন ডোম’ মিসাইল প্রতিরক্ষা প্রকল্প চালু করেছেন, যা স্থলভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও মহাকাশভিত্তিক সেন্সর নিয়ে গঠিত। এছাড়া তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক প্রদর্শনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও সমান ভিত্তিতে পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করবে।
এর লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষকে বোঝানো— যুক্তরাষ্ট্র তার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা পুনর্গঠনে প্রস্তুত এবং যে কোনো হুমকির জবাব দিতে সক্ষম।

মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির কূটনীতি

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থন এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় দেশটির সক্ষমতা বিপর্যস্ত হয়েছে। সর্বোচ্চ চাপের ফলে ইরান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, হামাস ও হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়েছে, এবং অঞ্চলটিতে আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা ফিরেছে।

এছাড়া ট্রাম্প নিজেকে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি, ভারত-পাকিস্তান সংঘাত, রুয়ান্ডা-কঙ্গো, এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজানসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী বিরোধে সমাধান আনতে ভূমিকা রেখেছেন।
তার কৌশল স্পষ্ট— অর্থনৈতিক শক্তি ও বাণিজ্য নীতিকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে শান্তি আনয়ন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া নিরাপত্তা ও পাশ্চাত্য গোলার্ধে নিয়ন্ত্রণ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ট্রাম্প নিরাপত্তা জোরদার করেছেন এবং মেক্সিকো ও কানাডাকে নিজ নিজ সীমান্তে মাদক ও মানবপাচার দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদকবাহী জাহাজে মার্কিন হামলায় ভেনেজুয়েলার কার্টেল কার্যক্রম ভেঙে পড়ছে।

গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি ডেনমার্ককে ঐ অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যা রাশিয়া ও চীনের জন্য স্পষ্ট বার্তা। পানামা খালে চীনের প্রভাব নিয়েও তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সঙ্কট কমেছে, মানবপাচার হ্রাস পেয়েছে, আর্কটিকে রাশিয়ার প্রভাব কমেছে, এবং আমেরিকা আরও নিরাপদ হয়েছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র আবারও প্রমাণ করছে— শক্তি ও দৃঢ় নেতৃত্বই শান্তি ও নিরাপত্তার ভিত্তি। এক শক্তিশালী আমেরিকা এবং দায়িত্বশীল মিত্ররা একসঙ্গে দাঁড়ালে তারা স্বৈরশাসক, সন্ত্রাসী ও প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে।
“শক্তির মাধ্যমে শান্তি”— এই নীতিতেই ট্রাম্প নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক নতুন বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার যুগে।