নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে করা আপিলের নবম দিনের শুনানি শেষে মামলার কার্যক্রম আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দেন।
শুনানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ মামলার নবম দিনের শুনানি শেষে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করে। এদিন রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পেছনে আপিল বিভাগের যুক্তি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই রায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তিকে নষ্ট করেছে, সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি মৃত ব্যক্তিরাও ভোটাধিকার পেয়েছিল।”
বিচারপতির মন্তব্য ও রাষ্ট্রের অবস্থান
শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আপিল বিভাগ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি কার্যকর সমাধান দিতে চায়।
অন্যদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, গত দেড় দশকে জনগণ শাসিত নয়, বরং শোষিত হয়েছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন বেড়েছে বলেও তিনি আদালতকে অবহিত করেন।
আবেদনের পটভূমি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
এটি মূলত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের পরবর্তী ধাপ হিসেবে গৃহীত হয়।
বিভিন্ন পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন
শুনানিতে বিএনপির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
জামায়াতে ইসলামী পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূইয়া।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাস
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দেয়।
পরে, ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়।
এরপর ৩ জুলাই প্রকাশিত গেজেটে তা কার্যকর হয়।
বর্তমান আইনি প্রক্রিয়া
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তি আবেদন করেন।
এই রিভিউ আবেদনের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর করে এবং ২১ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করে।
সাম্প্রতিক রায়
গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয় যে,
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















