চেন জির, যিনি কেপাম্বোডিয়া থেকে লন্ডন পর্যন্ত একটি বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অপরাধী চক্রের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ চেন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তাদের আন্তঃদেশীয় অপরাধী রিং চালানোর অভিযোগ এনেছেন। এই চক্রটি স্ক্যাম সেন্টার পরিচালনা করত, যেখানে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহৃত হত এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হত।
ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্থান:
চেনের প্রিন্স গ্রুপ, যা এখন একাধিক দেশের মধ্যে বিস্তৃত, এক সময় বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করেছিল। চেনের প্রতিষ্ঠানে বিলাসবহুল হোটেল, বিনোদন প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি একটি এয়ারলাইনের উপস্থিতি ছিল। তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং ক্ষমতাশালী নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব চেনের প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের প্রধান চালিকা শক্তি ছিল।
বিশ্বব্যাপী প্রতারণা চক্র:
চেনের গ্রুপ কেপাম্বোডিয়া, মিয়ানমার এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে তাদের স্ক্যাম সেন্টার পরিচালনা করত। এখানকার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু বিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়েছে। এই স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহৃত হত, যা অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অবৈধ কার্যক্রমের অংশ ছিল।

বিশ্বনেতাদের সাথে সম্পর্ক:
চেনের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য, তিনি বিভিন্ন বিশ্বনেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। কুয়ালালামপুরে এক সামিটে, তিনি বিভিন্ন দেশের নেতাদের জন্য বিলাসবহুল ঘড়ি উপহার দেন। এই ঘড়িগুলি প্রিন্স গ্রুপের নিজস্ব নির্মিত এবং ডিজাইন করা ছিল, যা চেনের বৈধতা ও দানশীলতার প্রতি তার কৌশলী চিত্র তৈরি করেছিল।
এম্পায়ার ধসে পড়া:
অক্টোবর মাসে, চেন এবং তার নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি ব্যাপক তদন্ত শুরু করে। ইউএস ট্রেজারি তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং তাদের ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিটকয়েন জব্দ করে। এই পদক্ষেপ চেনের সাম্রাজ্যের পতন শুরু করেছে, যেটি এখন দ্রুত ধ্বংসের পথে।
কেপাম্বোডিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম:
চেনের পরিবারের অফিস সিঙ্গাপুরে অবস্থিত এবং সেখানে তিনি বিলাসবহুল সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন। ২০১৭ সালে, তিনি সিঙ্গাপুরে প্রায় ৪০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার ব্যয় করে বিলাসবহুল পেন্টহাউস কিনেছিলেন। তবে তার অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে সিঙ্গাপুরের পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিমাণ বেড়েছে।
লন্ডনে সম্পত্তি এবং অন্যান্য দেশে অর্থায়ন:
চেন এবং তার সহযোগীরা লন্ডনে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলারের অফিস বিল্ডিংসহ একাধিক বিলাসবহুল সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তারা তাইওয়ান এবং হংকংয়ে বড় আকারের বিনিয়োগ করেছিল, যেখানে তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল।

অপরাধী চক্রের প্রতিবন্ধকতা:
চেনের গ্রুপ এবং তার সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির বাইরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, এবং হংকংয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তবে প্রশ্ন উঠছে, কিভাবে এই গ্রুপ এতদিন আইনপ্রয়োগকারীদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল।
চেনের বিচারের প্রক্রিয়া:
এখন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চেনের অপরাধী কার্যক্রমের তদন্ত শুরু করেছে। এসব তদন্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে, চেনের সাম্রাজ্য ধ্বংস হতে চলেছে, এবং আইনপ্রয়োগকারীরা তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
#চেনজি #অপরাধীচক্র #বিশ্বব্যাপীপ্রতারণা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















