০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
‘ঢাকা লকডাউনে’র দিনে সকাল থেকে যে পরিস্থিতি দেখা গেল ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা ২: টিজার ফিরল — পুরনো রাগ, নতুন অবস্থা হুট করে যাওয়ার সংস্কার — শেষ মুহূর্তের ভ্রমণে বাজার বদল এবারও থেমে গেল আসন্ন সোপ — অস্ট্রেলিয়ার COP বার্তা অনিশ্চিতে জুলাই সনদ থেকে নিজেই সরে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা—বললেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে মহাকাশে উড়ে গেল মারিও: ‘সুপার মারিও গ্যালাক্সি’ ছবিতে রোজালিনার ভূমিকায় ব্রি লারসন হ্যারিকেন মেলিসায় বিধ্বস্ত দ্বীপে ‘জামাইকা স্ট্রং’ কনসার্টে এগিয়ে শ্যাগি–শন পল ফসিল জ্বালানির নির্গমন আবারও বেড়েছে, COP৩০ আলোচনায় চাপ বাড়ল ব্ল্যাক ফ্রাইডে–সাইবার মানডে ধরে সুইচ বিক্রির আরেক দফা জোর দিচ্ছে নিন্টেন্ডো

ফায়ার টিভি স্টিকে পাইরেসি ঠেকাতে অ্যাপ ব্লক করছে অ্যামাজন

ডিভাইস পর্যায়ে অবৈধ স্ট্রিমিং নিয়ন্ত্রণ
অ্যামাজন তার জনপ্রিয় ফায়ার টিভি স্টিক ডিভাইসে অবৈধ স্ট্রিমিং রোধে নতুন কড়াকড়ি শুরু করেছে, যা পাইরেসি–নির্ভর দর্শক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথম ধাপে ফ্রান্স ও জার্মানিতে এমন সব অ্যাপ ব্লক করা হচ্ছে, যেগুলো অনুমতি ছাড়া কনটেন্ট স্ট্রিম করার সুযোগ দেয়; পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থা আরও দেশে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন নীতি কার্যকর হলে অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর বাইপাস করে সাইড–লোড করা বহু থার্ড–পার্টি অ্যাপ আর চালু হবে না, এমনকি পুরোনো ডিভাইসেও। দীর্ঘদিন ধরে সস্তা দামে লাইভ স্পোর্টস ও পে–টিভি চ্যানেল দেখাতে এসব হ্যাকড ডিভাইস ব্যবহৃত হওয়ায় কপিরাইট মালিক ও সম্প্রচার সংস্থাগুলো এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

বহু বছর ধরে অনলাইনে এবং কিছু দেশে সরাসরি দোকানেও “ফুলি লোডেড” ফায়ার টিভি স্টিক বিক্রি হয়েছে, যেখানে আগেই ইনস্টল করা থাকে অসংখ্য পাইরেসি অ্যাপ। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সন্দেহজনক ইন্টারনেট টিভি ফিড ও লাইসেন্সহীন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ভরসা করতেন এবং নিজের পরিচয় ও অবস্থান গোপন রাখতে ব্যবহার করতেন ভিপিএন। নতুন ব্যবস্থায় অ্যামাজন শুধু অ্যাপ স্টোর নয়, অপারেটিং সিস্টেম স্তর থেকেই এসব অননুমোদিত অ্যাপ শনাক্ত ও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। কোম্পানির ধারণা, এতে দীর্ঘদিনের নানা “ওয়ার্কারাউন্ড” নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং প্ল্যাটফর্মকে পাইরেসির কেন্দ্র হিসেবে দেখার প্রবণতা কমবে।

দর্শক, বিক্রেতা ও ডিজিটাল অধিকারের টানাপোড়েন
এই পরিবর্তনের প্রথম ধাক্কা পড়বে সেইসব দর্শকের ওপর, যারা আইনি সাবস্ক্রিপশন বাদ দিয়ে এ ধরনের হ্যাকড ডিভাইসের ওপর ভরসা করেছিলেন। ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফুটবলসহ নানা খেলার সম্প্রচারাধিকার ভেঙে ভেঙে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই একাধিক সাবস্ক্রিপশনের বদলে অবৈধ স্ট্রিমিংকে সস্তা বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন অ্যাপ ব্লক হয়ে গেলে কেউ হয়তো আবার বৈধ পরিষেবায় ফিরতে বাধ্য হবেন, আবার কেউ হয়তো নতুন ডিভাইস, অ্যাপ ও টুলের দিকে ঝুঁকবেন—যেখানে নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক কম। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে “ফুলি লোডেড” স্টিক বিক্রেতাদের ব্যবসাও সংকটে পড়বে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে নিজেদের পণ্য প্রচার করে আসছিলেন।

তবে প্রশ্ন উঠছে, ব্যবহারকারীরা যেসব ডিভাইস কিনে ফেলেছেন, সেগুলোর ওপর এতটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার নৈতিক ও আইনি সীমা কোথায়। ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা বলছেন, পাইরেসি রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সাইড–লোড করা সব অ্যাপের পথ বন্ধ করে দেওয়া ভবিষ্যতে আরও কঠোর গেটকিপিংয়ের নজির তৈরি করতে পারে। অ্যামাজন দাবি করছে, তাদের পদক্ষেপ খুবই লক্ষ্যভিত্তিক; কেবল স্পষ্ট কপিরাইট লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেই এসব ব্লক করা হচ্ছে, সাধারণ টিঙ্কারিং বা বিকল্প স্টোরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান নয়। তবু, পাইরেসি–নির্ভর অফার থেকে পরোক্ষভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ থেকে বের হতে চাইলে কোম্পানিকে যে শক্ত বার্তা দেখাতে হতো, এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতিযোগিতা যত তীব্র হচ্ছে, ততই পরিষেবা, দাম ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতার ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। ফায়ার টিভি স্টিকে এই কঠোরতা হয়তো কিছু দর্শককে বৈধ পথে ফেরাবে, আবার কেউ হয়তো অন্য হ্যাকড ডিভাইসের দিকে চলে যাবেন। তবে অ্যামাজনের বার্তা স্পষ্ট: অন্তত নিজেদের হার্ডওয়্যারে তারা এখন পাইরেসিকে আর “গ্রে এরিয়া” হিসেবে রেখে দিতে চাইছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘ঢাকা লকডাউনে’র দিনে সকাল থেকে যে পরিস্থিতি দেখা গেল

ফায়ার টিভি স্টিকে পাইরেসি ঠেকাতে অ্যাপ ব্লক করছে অ্যামাজন

০২:৪৮:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

ডিভাইস পর্যায়ে অবৈধ স্ট্রিমিং নিয়ন্ত্রণ
অ্যামাজন তার জনপ্রিয় ফায়ার টিভি স্টিক ডিভাইসে অবৈধ স্ট্রিমিং রোধে নতুন কড়াকড়ি শুরু করেছে, যা পাইরেসি–নির্ভর দর্শক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথম ধাপে ফ্রান্স ও জার্মানিতে এমন সব অ্যাপ ব্লক করা হচ্ছে, যেগুলো অনুমতি ছাড়া কনটেন্ট স্ট্রিম করার সুযোগ দেয়; পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থা আরও দেশে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন নীতি কার্যকর হলে অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর বাইপাস করে সাইড–লোড করা বহু থার্ড–পার্টি অ্যাপ আর চালু হবে না, এমনকি পুরোনো ডিভাইসেও। দীর্ঘদিন ধরে সস্তা দামে লাইভ স্পোর্টস ও পে–টিভি চ্যানেল দেখাতে এসব হ্যাকড ডিভাইস ব্যবহৃত হওয়ায় কপিরাইট মালিক ও সম্প্রচার সংস্থাগুলো এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

বহু বছর ধরে অনলাইনে এবং কিছু দেশে সরাসরি দোকানেও “ফুলি লোডেড” ফায়ার টিভি স্টিক বিক্রি হয়েছে, যেখানে আগেই ইনস্টল করা থাকে অসংখ্য পাইরেসি অ্যাপ। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সন্দেহজনক ইন্টারনেট টিভি ফিড ও লাইসেন্সহীন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ভরসা করতেন এবং নিজের পরিচয় ও অবস্থান গোপন রাখতে ব্যবহার করতেন ভিপিএন। নতুন ব্যবস্থায় অ্যামাজন শুধু অ্যাপ স্টোর নয়, অপারেটিং সিস্টেম স্তর থেকেই এসব অননুমোদিত অ্যাপ শনাক্ত ও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। কোম্পানির ধারণা, এতে দীর্ঘদিনের নানা “ওয়ার্কারাউন্ড” নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং প্ল্যাটফর্মকে পাইরেসির কেন্দ্র হিসেবে দেখার প্রবণতা কমবে।

দর্শক, বিক্রেতা ও ডিজিটাল অধিকারের টানাপোড়েন
এই পরিবর্তনের প্রথম ধাক্কা পড়বে সেইসব দর্শকের ওপর, যারা আইনি সাবস্ক্রিপশন বাদ দিয়ে এ ধরনের হ্যাকড ডিভাইসের ওপর ভরসা করেছিলেন। ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফুটবলসহ নানা খেলার সম্প্রচারাধিকার ভেঙে ভেঙে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই একাধিক সাবস্ক্রিপশনের বদলে অবৈধ স্ট্রিমিংকে সস্তা বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন অ্যাপ ব্লক হয়ে গেলে কেউ হয়তো আবার বৈধ পরিষেবায় ফিরতে বাধ্য হবেন, আবার কেউ হয়তো নতুন ডিভাইস, অ্যাপ ও টুলের দিকে ঝুঁকবেন—যেখানে নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক কম। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে “ফুলি লোডেড” স্টিক বিক্রেতাদের ব্যবসাও সংকটে পড়বে, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে নিজেদের পণ্য প্রচার করে আসছিলেন।

তবে প্রশ্ন উঠছে, ব্যবহারকারীরা যেসব ডিভাইস কিনে ফেলেছেন, সেগুলোর ওপর এতটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার নৈতিক ও আইনি সীমা কোথায়। ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা বলছেন, পাইরেসি রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সাইড–লোড করা সব অ্যাপের পথ বন্ধ করে দেওয়া ভবিষ্যতে আরও কঠোর গেটকিপিংয়ের নজির তৈরি করতে পারে। অ্যামাজন দাবি করছে, তাদের পদক্ষেপ খুবই লক্ষ্যভিত্তিক; কেবল স্পষ্ট কপিরাইট লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেই এসব ব্লক করা হচ্ছে, সাধারণ টিঙ্কারিং বা বিকল্প স্টোরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান নয়। তবু, পাইরেসি–নির্ভর অফার থেকে পরোক্ষভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ থেকে বের হতে চাইলে কোম্পানিকে যে শক্ত বার্তা দেখাতে হতো, এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতিযোগিতা যত তীব্র হচ্ছে, ততই পরিষেবা, দাম ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতার ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। ফায়ার টিভি স্টিকে এই কঠোরতা হয়তো কিছু দর্শককে বৈধ পথে ফেরাবে, আবার কেউ হয়তো অন্য হ্যাকড ডিভাইসের দিকে চলে যাবেন। তবে অ্যামাজনের বার্তা স্পষ্ট: অন্তত নিজেদের হার্ডওয়্যারে তারা এখন পাইরেসিকে আর “গ্রে এরিয়া” হিসেবে রেখে দিতে চাইছে না।