সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া মৃত্যুদণ্ডকে “গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ” ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডবহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলছে, পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় অনুপস্থিতিতে বিচার, আইনজীবী বাছাইয়ের সীমাবদ্ধতা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়ার মতো গুরুতর অনিয়ম রয়েছে—যা রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
প্রেক্ষাপট: ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন ও সহিংস দমন
জুলাই–আগস্ট ২০২৪ সালের তিন সপ্তাহে সংঘটিত বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। জাতিসংঘ জানায়, অধিকাংশ নিহতই ছিলেন নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী। সহিংসতা ও দমন–পীড়নের পর শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে।
অভিযোগের সারসংক্ষেপ
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়—
- বিক্ষোভকারীদের ওপর পরিকল্পিত হামলার নির্দেশ
- ড্রোন, হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন
- নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থতা
এ ছাড়া অডিও রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনাকে প্রাণঘাতী হামলার অনুমোদন দিতে শোনা যায় বলে দাবি করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আপত্তি: বিচার অস্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডবহির্ভূত
সংস্থাটির মতে—
- অভিযুক্তরা নিজেদের পছন্দমতো আইনজীবী নিতে পারেননি
- অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে
- আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়নি
- মৃত্যুদণ্ডের মতো চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটিও বলছে, অনুপস্থিতিতে বিচার ন্যায্য বিচারের আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করে।
ট্রাইব্যুনালের ব্যাখ্যা
৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের যুক্তি—
- রোম সংবিধির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত
- ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য অপরাধ প্রমাণে মুখ্য
- শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে নেতৃত্বগত দায় স্বীকার করেছেন বলে উল্লেখ
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পক্ষপাত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ব্যবহার—এই অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস; তার আমলেও বিচারক্ষমতা বাড়ানো ও দল ভাঙার সুযোগ তৈরি করা সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক বাড়ে।
মৃত্যুদণ্ড ও অধিকার সীমাবদ্ধতা
সংবিধানের ৪৭(৩) ও ৪৭এ ধারা অভিযুক্তদের ন্যায়বিচারের অধিকার, আইনের সুরক্ষা এবং সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ সীমিত করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

আওয়ামী লীগ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও নিরাপত্তা
ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করেছে। তবে আওয়ামী লীগ ভেঙে দেওয়ার প্রশ্নে রায়ে কিছু বলা হয়নি। সহিংসতা এড়াতে দলটির নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যর্পণ
রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশ ভারতকে শেখ হাসিনা ও কামালকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে প্রত্যর্পণের আগে নিশ্চিত করতে হয়—
- অভিযুক্তরা ন্যায্য বিচার পাবেন
- মৃত্যুদণ্ড ঝুঁকি থাকবে না
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে—২০২৪ সালের সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার জরুরি, তবে সেটি এমন বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে হতে হবে, যেখানে অভিযুক্তের মৌলিক অধিকারও সুরক্ষিত থাকে। অন্যথায় বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগই আরও জোরালো হবে।
#শেখহাসিনা #হিউম্যানরাইটসওয়াচ #বিচারেরঅনিয়ম #বাংলাদেশরাজনীতি #মানবাধিকার #আন্তর্জাতিকবিচার #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















