মঙ্গলে জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি (এনওয়াইইউএডি)-এর বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায় জানিয়েছেন—মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠের নিচে একসময় পানি প্রবাহিত হতো। তাদের মতে, এই তথ্য মঙ্গলে দীর্ঘ সময় জীবনের সম্ভাবনাকে আরও শক্ত ভিত্তি দেয়।
গবেষণার মূল প্রমাণ: ভূগর্ভে পানির প্রবাহ
এনওয়াইইউএডির স্পেস এক্সপ্লোরেশন ল্যাবরেটরির প্রধান গবেষক দিমিত্রা আত্রি জানান, মঙ্গল একদিনে ভেজা থেকে শুকিয়ে যায়নি। পৃষ্ঠের নদী ও হ্রদ শুকিয়ে গেলেও, ভূগর্ভে অল্প পরিমাণ পানি প্রবাহিত হতো। এই স্যাঁতসেঁতে ভূগর্ভস্থ পরিবেশ ক্ষুদ্রজীবনের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হতে পারত।
ক্ষুদ্রজীবন বলতে ব্যাকটেরিয়ার মতো অতি ক্ষুদ্র জীব বোঝানো হয়েছে, যাদের দেখা যায় কেবল মাইক্রোস্কোপে।
গবেষণা কোথায় প্রকাশিত হয়েছে
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব জিওফিজিক্যাল রিসার্চ–প্ল্যানেটস-এ। এতে বলা হয়েছে—মঙ্গলের গেইল ক্রেটারের প্রাচীন বালিয়াড়িগুলো কোটি কোটি বছর আগে ভূগর্ভস্থ পানির প্রভাবে কঠিন শিলায় পরিণত হয়েছিল। নাসার কিউরিওসিটি রোভার ২০১২ সাল থেকে এই অঞ্চলটি অনুসন্ধান করছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুভূমির সঙ্গে তুলনা
দিমিত্রা আত্রি, গবেষণা সহকারী ভিগনেশ কৃষ্ণমূর্তিসহ এনওয়াইইউএডির দল কিউরিওসিটি রোভারের সংগৃহীত তথ্যের সঙ্গে লিওয়া, আল ওয়াথবা ও হাট্টা মরুভূমির শিলা-গঠনের তুলনা করেছেন। পৃথিবীর এই মরুভূমিগুলো একই ধরনের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ায় মঙ্গলের গঠনের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়—মঙ্গলের নিকটবর্তী এক পর্বত থেকে পানি বালিয়াড়ির ভেতর ছোট ফাটলে ঢুকে বালুকে ভেজাত। এতে জিপসামের মতো খনিজ জমা হতো, ঠিক যেমনটা পৃথিবীর মরুভূমিতেও দেখা যায়। জিপসমের মতো খনিজ অতীতের জীবের জৈব চিহ্ন সংরক্ষণ করতে সক্ষম—যা ভবিষ্যতের অনুসন্ধান মিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার প্রধান বক্তব্য
গবেষকদের মতে, বালিয়াড়ির সঙ্গে পানির মিথস্ক্রিয়া—মঙ্গলে অতীতের জীবনের প্রমাণ খোঁজার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
মঙ্গলের অতীত ও বর্তমান পরিবেশ
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—মঙ্গলের প্রাচীন সময়ে প্রচুর তরল পানি ও স্থিতিশীল পরিবেশ ছিল। কিন্তু বায়ুমণ্ডল ক্ষয় হওয়ার পর গ্রহটি ধীরে ধীরে রুক্ষ, শীতল ও শুকনো ভূদৃশ্যে রূপ নেয়।
কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলের ভেজা-শুকনা পরিবেশের পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। গেইল ক্রেটারের স্টিমসন গঠনের বালিয়াড়ির কঠিন হওয়া পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন—ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়বীয় বালুর পরিবেশ একসময় পরস্পরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করত।
প্রমাণ নিশ্চিত করতে মরুভূমিতে পরীক্ষা
দিমিত্রা আত্রি জানান—তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুভূমিতে একই ধরনের প্রক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন এবং গবেষণাগারেও এ প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে, তার পরীক্ষা চালিয়েছেন।

জীবনের সম্ভাবনা: এখনো কি মঙ্গলে কিছু আছে?
দিমিত্রা আত্রির মতে—মঙ্গলের পৃষ্ঠের নিচে এখনো জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। বিশেষ করে ‘এক্সট্রিমোফাইল’ নামে পরিচিত জীবাণুরা চরম তাপমাত্রা ও প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে সক্ষম। তার মতে, মঙ্গলের ভূগর্ভে এই ধরনের জীবের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে।
কেন এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি
এখনো পর্যন্ত কোনো মঙ্গল মিশনে পৃষ্ঠের গভীরে ড্রিল করে পরীক্ষা করা হয়নি। সেই কারণে ভূগর্ভের প্রকৃত অবস্থা এখনো অজানা।
আসন্ন মিশন: ২০২৮ সালে বড় অগ্রগতি
ইউরোপের ‘এক্সোমার্স’ মিশন এবং চীনের ‘তিয়ানওয়েন–৩’ মিশন—উভয়ই মঙ্গলের ভূগর্ভ অনুসন্ধানের লক্ষ্য নিয়ে ২০২৮ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে।

এই নতুন গবেষণা মঙ্গলে জীবনের অতীত ও বর্তমান সম্ভাবনা নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত মঙ্গলের নিচে দীর্ঘদিন ধরে পানির প্রবাহের প্রমাণ—লাল গ্রহে জীবনের সন্ধানে এক বড় অগ্রগতি।
#মঙ্গল #বিজ্ঞান #মহাকাশ #পানি #সংযুক্তআরবআমিরাত #গবেষণা #নাসা #রোভার #জীবন #অ্যাস্ট্রোবায়োলজি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















