চীনের সতর্কবার্তা
চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি তাইওয়ান সম্পর্কিত তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে বেইজিং “আরও কঠোর ব্যবস্থা” নিতে বাধ্য হবে। বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, তাকাইচির বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং চীনের প্রতিক্রিয়া জানানোর “পূর্ণ অধিকার” রয়েছে।
মাও বলেন, “চীন গুরুতর ও কঠোর পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে, এবং এর সব পরিণতি জাপানকেই বহন করতে হবে। ভুল বক্তব্য প্রত্যাহার করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি রক্ষায় জাপানকে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে চীন আরও ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”
জাপানি সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি ফের স্থগিতের ইঙ্গিত
জাপানি সংবাদমাধ্যম কিয়োদো জানিয়েছে, চীন আবারও জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত টোকিওকে জানিয়ে দিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই এই আমদানি আবার শুরু হয়েছিল।
এবার নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে তাকাইচির ৭ নভেম্বর সংসদে দেওয়া মন্তব্য—যেখানে তিনি বলেন, তাইওয়ানের ওপর হামলা জাপানের জন্য “বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ পরিস্থিতি” তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জাপানের আত্মরক্ষাবাহিনী মোতায়েনের যৌক্তিকতা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০২২ সালের সরকারি তথ্যমতে, আগের নিষেধাজ্ঞার আগে শুধুমাত্র চীন ও হংকং-ই জাপানের মোট সামুদ্রিক রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি গ্রহণ করত।

চীনের অভিযোগ: জাপান প্রতিশ্রুত তথ্য দেয়নি
নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাও নিং বলেন, জাপান প্রতিশ্রুত কারিগরি নথিপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এখন পণ্য চীনে রপ্তানি করা হলেও বাজার নেই।” তবে তিনি সরাসরি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
এই মাসের শুরুতে জাপান ছয় টন হিমায়িত স্ক্যালপ চীনে রপ্তানি করে—২০২৩ সালের পর এটাই প্রথম চালান ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে ভবিষ্যৎ রপ্তানির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।
বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি: অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ
তাইওয়ান প্রসঙ্গে তাকাইচির বক্তব্যকে চীন তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে এবং মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানালেও জাপান তা মানেনি। চীন তাইওয়ানকে তার অংশ হিসেবে গণ্য করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে পুনরায় একত্রিত করার কথা বলে আসছে।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ, যেমন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র, আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে এবং শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটি দখলের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।
সম্ভাব্য আরও পাল্টা ব্যবস্থা
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভির সংশ্লিষ্ট একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ‘ইউইউয়ান তানতিয়ান’ জানিয়েছে, “বাস্তবসম্মত পাল্টা ব্যবস্থা” ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে “অবিশ্বস্ত সত্তার তালিকা”-তে অন্তর্ভুক্ত করা বা অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক কিংবা সামরিক ক্ষেত্রে সরকার-পর্যায়ের যোগাযোগ স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্ত থাকতে পারে।
চীন ইতিমধ্যে তার নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ এড়াতে সতর্ক করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও চীনা শিক্ষার্থীদের জাপানে পড়াশোনার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে।
চীন জাপানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং জাপানি বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান গন্তব্যও।
কূটনৈতিক বৈঠকে অসন্তোষ
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক বিভাগপ্রধান লিউ জিনসঙ তাঁর জাপানি সমকক্ষ মাসায়াকি কানাইকে জানান যে তাকাইচিকে অবশ্যই মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আলোচনায় তিনি “খুবই অসন্তুষ্ট” বলেও মন্তব্য করেন।
চীনের সরকারি বার্তা
বুধবার প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি লেখে—জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড প্রত্যাহার করাই “একমাত্র সঠিক পথ”।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















