০৭:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
কেরানীগঞ্জে সাম্প্রতিক রাতে পৃথক আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ মাধবদীর ভূমিকম্পে নিহত ৬; দ্রুত সহায়তায় এগিয়ে এলো ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল পল্লবী যুবদল নেতা হত্যাকাণ্ড: গ্রেপ্তারের ঘণ্টাখানেক পর সন্দেহভাজনের মৃত্যু শক্তিশালী ভূমিকম্পে সারা দেশে ছয়জনের মৃত্যু, বহু আহত ভূমিকম্পে বদলে যাবার পরে কোনটা পুরানো ব্রহ্মপুত্র আর কোনটা নতুন ব্রহ্মপুত্র ভূমিকম্পে বৈদ্যুতিক তারের ঘর্ষণে নারায়ণগঞ্জে তুলা কারখানায় ভয়াবহ আগুন ব্রহ্মপুত্রের পথ বদলে দেওয়া ভূমিকম্প: ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা দুই শতকের কম্পন: বাংলাদেশের বড় ভূমিকম্প ও তার ফলে যা ঘটেছিলো  যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত ৯৩ মিলিয়ন ডলারের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক সিস্টেম ও এক্সক্যালিবার গোলাবারুদ কিনছে বাংলাদেশের নতুন সিসমিক মানচিত্রে উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাঁশখালী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, নাটোরসহ বহু জেলা

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বেড়েছে

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থার ফলে সাত সপ্তাহ দেরিতে প্রকাশিত সেপ্টেম্বর মাসের চাকরির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে একই সময়ে বেকারত্বের হার চার বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোয় ফেডের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা গভীর হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের চাকরির চিত্রে দেখা যায় যে সরকারি অচলাবস্থার কারণে দেরিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ১৯ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদরা মাত্র ৫০ হাজার নতুন চাকরির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। চাকরিগুলোর বড় অংশ সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, অবসর ও আতিথেয়তা খাতে।

বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা অক্টোবর ২০২১-এর পর সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ ছিল প্রায় পাঁচ লাখ নতুন মানুষের শ্রমশক্তিতে প্রবেশ করা। অর্থাৎ কাজ করছেন বা সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন—এমন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

সেপ্টেম্বরের ইতিবাচক সংখ্যা সত্ত্বেও উদ্বেগের দিক হলো জুলাই ও আগস্টের তথ্য সংশোধন করে চাকরি কম দেখানো হয়েছে। আগস্টে চাকরির সংখ্যা ৪ হাজার কম দেখানো হয় এবং জুলাই মাসের তথ্য কমিয়ে ৭২ হাজার চাকরি বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে দুই মাস মিলিয়ে ৩৩ হাজার চাকরি বাস্তবে কমে গেছে।

চাকরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারের প্রাথমিক উত্থান থেমে যায়। ডিসেম্বর সভায় সুদের হার কমানো হবে কি না তা নিয়ে ফেডের ভিতরে মতভেদ বাড়ছে। এক পক্ষের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, চাকরি বাড়ায় এখনই শিথিলতার দরকার নেই। অন্যদিকে আরেক পক্ষ বলছে যে বেকারত্ব বাড়া এবং চাকরি সৃষ্টির নিম্নগতি উদ্বেগজনক। বর্তমানে ডিসেম্বর সভায় সুদের হার এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ বলে হিসাব করা হচ্ছে।

সরকারি অচলাবস্থা ১ অক্টোবর শুরু হয়ে গত সপ্তাহে শেষ হয়। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা সংগ্রহ ও প্রকাশ বন্ধ থাকায় অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্যই সেপ্টেম্বর মাসের রিপোর্ট অক্টোবরেই প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সেপ্টেম্বরে খুচরা বাজার, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ও আতিথেয়তা, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকার খাতে চাকরি বেড়েছে। বিপরীতে পরিবহন ও গুদামজাতকরণ এবং সাময়িক কর্মী সরবরাহ খাতে চাকরি কমেছে। সাধারণত অর্থনৈতিক মন্থরতা শুরু হলে এই খাতগুলোই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভিবাসন নীতির প্রভাবও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেখা গেছে দেশীয় জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে, আর বিদেশে জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন কঠোরতার ফলে শ্রমবাজারে এমন পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব কিছুটা কমেছে। ২৭ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে বেকার থাকা মানুষের সংখ্যা আগস্টের ১৯ লাখ থেকে কমে সেপ্টেম্বরের ১৮ লাখে পৌঁছেছে। তবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাঁটাই এবং ভোক্তাদের অনিশ্চয়তা বাজারে চাপ তৈরি করছে। অ্যামাজন ও টার্গেট ইতোমধ্যে হাজার হাজার করপোরেট কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ পরিবারের ধারণা আগামী এক বছরে বেকারত্ব আরও বাড়বে।

অর্থনীতির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসে বাড়ি বিক্রি আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কোম্পানিগুলোর মুনাফা গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে এবং মোট বিক্রিও বেড়েছে ৮ শতাংশ। প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা খাত সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। তবে কিছু কোম্পানির মতে নিম্ন আয়ের এবং তরুণ ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে, ফলে তারা ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।

সর্বশেষ হিসেবে সরকারি অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির পূর্ণ চিত্র বোঝা এখনও কঠিন। সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও বেকারত্ব বৃদ্ধি, করপোরেট ছাঁটাই আর ভোক্তাদের উদ্বেগ মিলিয়ে শ্রমবাজার কতটা স্থিতিশীল আছে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। ডিসেম্বরের ফেড বৈঠকে সুদের হার কমানো হবে কি না—এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি সেই সিদ্ধান্তে বড় প্রভাব ফেলবে।


জনপ্রিয় সংবাদ

কেরানীগঞ্জে সাম্প্রতিক রাতে পৃথক আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বেড়েছে

০৬:৩৫:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থার ফলে সাত সপ্তাহ দেরিতে প্রকাশিত সেপ্টেম্বর মাসের চাকরির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে কর্মসংস্থান বেড়েছে। তবে একই সময়ে বেকারত্বের হার চার বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোয় ফেডের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা গভীর হয়েছে।

সেপ্টেম্বরের চাকরির চিত্রে দেখা যায় যে সরকারি অচলাবস্থার কারণে দেরিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ১৯ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বৃদ্ধি। অর্থনীতিবিদরা মাত্র ৫০ হাজার নতুন চাকরির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। চাকরিগুলোর বড় অংশ সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, অবসর ও আতিথেয়তা খাতে।

বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে ৪.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা অক্টোবর ২০২১-এর পর সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ ছিল প্রায় পাঁচ লাখ নতুন মানুষের শ্রমশক্তিতে প্রবেশ করা। অর্থাৎ কাজ করছেন বা সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন—এমন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

সেপ্টেম্বরের ইতিবাচক সংখ্যা সত্ত্বেও উদ্বেগের দিক হলো জুলাই ও আগস্টের তথ্য সংশোধন করে চাকরি কম দেখানো হয়েছে। আগস্টে চাকরির সংখ্যা ৪ হাজার কম দেখানো হয় এবং জুলাই মাসের তথ্য কমিয়ে ৭২ হাজার চাকরি বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে দুই মাস মিলিয়ে ৩৩ হাজার চাকরি বাস্তবে কমে গেছে।

চাকরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারের প্রাথমিক উত্থান থেমে যায়। ডিসেম্বর সভায় সুদের হার কমানো হবে কি না তা নিয়ে ফেডের ভিতরে মতভেদ বাড়ছে। এক পক্ষের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, চাকরি বাড়ায় এখনই শিথিলতার দরকার নেই। অন্যদিকে আরেক পক্ষ বলছে যে বেকারত্ব বাড়া এবং চাকরি সৃষ্টির নিম্নগতি উদ্বেগজনক। বর্তমানে ডিসেম্বর সভায় সুদের হার এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ বলে হিসাব করা হচ্ছে।

সরকারি অচলাবস্থা ১ অক্টোবর শুরু হয়ে গত সপ্তাহে শেষ হয়। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা সংগ্রহ ও প্রকাশ বন্ধ থাকায় অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্যই সেপ্টেম্বর মাসের রিপোর্ট অক্টোবরেই প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সেপ্টেম্বরে খুচরা বাজার, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ও আতিথেয়তা, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকার খাতে চাকরি বেড়েছে। বিপরীতে পরিবহন ও গুদামজাতকরণ এবং সাময়িক কর্মী সরবরাহ খাতে চাকরি কমেছে। সাধারণত অর্থনৈতিক মন্থরতা শুরু হলে এই খাতগুলোই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভিবাসন নীতির প্রভাবও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেখা গেছে দেশীয় জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে, আর বিদেশে জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকের সংখ্যা কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন কঠোরতার ফলে শ্রমবাজারে এমন পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব কিছুটা কমেছে। ২৭ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে বেকার থাকা মানুষের সংখ্যা আগস্টের ১৯ লাখ থেকে কমে সেপ্টেম্বরের ১৮ লাখে পৌঁছেছে। তবে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাঁটাই এবং ভোক্তাদের অনিশ্চয়তা বাজারে চাপ তৈরি করছে। অ্যামাজন ও টার্গেট ইতোমধ্যে হাজার হাজার করপোরেট কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ পরিবারের ধারণা আগামী এক বছরে বেকারত্ব আরও বাড়বে।

অর্থনীতির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসে বাড়ি বিক্রি আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কোম্পানিগুলোর মুনাফা গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে এবং মোট বিক্রিও বেড়েছে ৮ শতাংশ। প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা খাত সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। তবে কিছু কোম্পানির মতে নিম্ন আয়ের এবং তরুণ ভোক্তাদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে, ফলে তারা ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।

সর্বশেষ হিসেবে সরকারি অচলাবস্থার কারণে অর্থনীতির পূর্ণ চিত্র বোঝা এখনও কঠিন। সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও বেকারত্ব বৃদ্ধি, করপোরেট ছাঁটাই আর ভোক্তাদের উদ্বেগ মিলিয়ে শ্রমবাজার কতটা স্থিতিশীল আছে তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। ডিসেম্বরের ফেড বৈঠকে সুদের হার কমানো হবে কি না—এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি সেই সিদ্ধান্তে বড় প্রভাব ফেলবে।