দুই ভিন্ন সময়ের গল্পকে একত্র করে তৈরি হয়েছে টম হ্যাংকস অভিনীত নতুন নাটক দিস ওয়ার্ল্ড অফ টুমরো। ভবিষ্যৎ থেকে ১৯৩৯ সালের নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার–এ বারবার ফিরে যাওয়ার কাহিনি নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নাট্যরূপ, যেখানে সংলাপ, স্মৃতি, আবেগ এবং সময় ভ্রমণ মিলেমিশে তৈরি করেছে এক রোমান্টিক বিজ্ঞানকল্পের আবহ।
নাটকটি তৈরি হয়েছে হ্যাংকসের নিজের ছোটগল্প অবলম্বনে, আর মঞ্চ অভিযোজন করেছেন তিনি নিজেই জেমস গ্লসম্যানের সঙ্গে। পরিচালনা করেছেন কেনি লিওন। সহ-অভিনয়ে রয়েছেন কেলি ও’হারা, কাইলি কার্টার, কেরি বিশে, ডোনাল্ড ওয়েবার জুনিয়র, রুবেন স্যান্টিয়াগো-হাডসন এবং অন্যরা।
উৎপত্তি ও গল্পের ভিত্তি
নাটকটি মূলত হ্যাংকসের ২০১৭ সালের ছোটগল্প সংকলন আনকমন টাইপ–এর তিনটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে শুরু হয়েছিল। পরে অভিযোজন সংকুচিত হয়ে দাঁড়ায় একটি গল্পে—“দ্য পাস্ট ইজ ইম্পরট্যান্ট টু আস”—যেখানে এক ধনী টেক উদ্যোক্তা বার্ট অ্যালেনবেরি ২০৮৯ সাল থেকে ফিরে যায় ১৯৩৯ সালের ৮ জুনে। তাঁর কোম্পানি M-Dash অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মতো অতীতে যাতায়াতের সুযোগ দেয়।
বার্টের পছন্দের এই নির্দিষ্ট দিনটি বেছে নেওয়ার কারণও আছে—সেদিনই নিউইয়র্কের কুইন্সে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার, যা সেই সময়ের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যত–চিন্তার প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচিত।
প্রথম ভ্রমণ ও কারমেনের সঙ্গে দেখা
কোম্পানির সহকর্মী সিন্ডি প্রথমবার বার্টকে নিয়ে যান অতীতে। বিশাল ব্যয়—দুইশ পঁচিশ মিলিয়ন ডলার—তবুও বার্ট মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়ে যান। সিন্ডির তেমন ভালো লাগে না; বিশেষ করে সেই সময়ের অস্বস্তিকর জুতো।
এক ফাঁকে বার্টের আলাপ হয় কারমেন পেরির সঙ্গে। কারমেন একদিনের ছুটি নিয়ে তার কিশোরী ভাগ্নি ভার্জিনিয়াকে নিয়ে এসেছে মেলায় ঘোরা ও নানা রাইড উপভোগ করতে। এই প্রথম দেখা থেকেই বার্ট মুগ্ধ হয়ে পড়েন অতীতের সরলতা, মানুষের স্বাভাবিক আচরণ এবং কারমেনের ব্যক্তিত্বে।
ভবিষ্যতের জটিলতা বনাম অতীতের টান
অল্পক্ষণই অতীতে থাকার সুযোগ মেলে। বর্তমান বা ২০৮৯–এ ফিরে এসে বার্টকে মোকাবিলা করতে হয় নানা জটিল টেক–সমস্যার—নিউরা–লিংক, ভক্স–প্যাক, ইমপাল্স কোডিং—যা গল্পে অসংলগ্ন প্রযুক্তি–জার্গনে ভরপুর। এই ক্লান্তিকর ভবিষ্যৎ বাস্তবতা তাকে আরও তীব্রভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ১৯৩৯–এর জগতে।
বারবার অতীতে ফিরে গিয়ে বার্ট কারমেনের কাছাকাছি আসেন, যদিও কাহিনিতে সেই প্রশ্নই থেকে যায়—কারমেন ও ভার্জিনিয়া কেন বার্টকে মনে রাখে না প্রতিবারই? হঠাৎ এক পর্যায়ে কারমেন তার স্মৃতি ফিরে পাওয়ার মতো একটি মুহূর্ত তৈরি হয়, তবে ব্যাখ্যা থাকে অস্পষ্ট।

চরিত্রগুলোর আবেগ ও সম্পর্ক
টম হ্যাংকস তার স্বাভাবিক উষ্ণতা, সরলতা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে বার্টকে জীবন্ত করে তুলেছেন। তবে চরিত্রটি খুব গভীর বা জটিল নয়। তার মূল আকর্ষণ ভবিষ্যতের যান্ত্রিক জীবন থেকে পালিয়ে অতীতের মানবিক আবহে আশ্রয় নেওয়া।
কারমেনের ভূমিকায় কেলি ও’হারা অধিক শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করেছেন। তাঁর অভিনয়ে আছে সংযত আবেগ, জীবনের সীমাবদ্ধতার প্রতি এক নীরব উপলব্ধি এবং অচিন্তিত ভবিষ্যতকে প্রশ্ন করার এক বাস্তবসম্মত শঙ্কা। তার পরিবারের সদস্য—ভাই ম্যাক্স, ভাবি সিলভিয়া এবং প্রাণোচ্ছল ভাগ্নি ভার্জিনিয়া—গল্পে অতীত জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
নাটকের দুর্বলতা ও পুনরাবৃত্তি
নাটকটি দুটি অঙ্কে বিস্তৃত। সময়–ভ্রমণের মোহনীয় ধারণা থাকলেও মঞ্চায়নে গতি কখনও ধীর হয়ে পড়ে। বারবার একই দৃশ্য—ওয়ার্ল্ডস ফেয়ারের আবহ, একই আলাপচারিতা—দেখতে দেখতে গতি কমে যায়। ভবিষ্যতের দৃশ্যগুলো আবার ভরপুর জটিল ও শুষ্ক প্রযুক্তিগত কথায়, যা নাটকের আবেগঘন অংশগুলিকে দুর্বল করে দেয়।

পরিচালনার দিক থেকেও গতি বা দৃশ্যগত নৈপুণ্যের অভাব চোখে পড়ে। বিশেষ করে ২০৮৯ সালের দৃশ্যগুলোর প্রজেকশন মাঝে মাঝে বিঘ্ন ঘটায়। তবুও নাটকের সামগ্রিক আবহে আছে এক হালকা, উষ্ণ, নস্টালজিক অনুভূতি—যা দর্শককে অনেকটা পুরনো দিনের সিনেমার মতো অভিজ্ঞতা দেয়।
সমালোচনার সারাংশ
দিস ওয়ার্ল্ড অফ টুমরো এমন এক নাটক, যা সময় ভ্রমণ, রোমান্স ও স্মৃতির মিশ্রণ নিয়ে তৈরি হলেও মাঝে মাঝে একঘেয়েমি তৈরি করে। এর গল্প এমন—যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের নির্দোষ সময়ে তৈরি একটি কাহিনি। তবে টম হ্যাংকস ও কেলি ও’হারার অভিনয় নাটকটির আকর্ষণ ধরে রাখে।
মঞ্চস্থ হচ্ছে শেডে—৫৪৫ ওয়েস্ট ৩০তম স্ট্রিট, নিউইয়র্ক। প্রদর্শনী চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
#টমহ্যাংকস #দিসওয়ার্ল্ডঅফটুমরো #থিয়েটাররিভিউ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















