জার্মানির একটি ভেড়া খামার, একটি ডেটিং অ্যাপ ও একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হলো এক অভিনব ফ্যাশন শো। সমকামী ভেড়ার উল দিয়ে তৈরি পোশাককে কেন্দ্র করে এই আয়োজন শুধু নতুনত্বের জন্য নয়; এটি প্রাণীর সুরক্ষা, অধিকার ও সম্মানের বার্তাও বহন করে।
ডিজাইনার মাইকেল শ্মিট এবং উলের প্রতি তার আগ্রহ
মাইকেল শ্মিট মূলত ধাতব শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত। তিনি চেইন মেইল গাউন, গহনা ও ধাতব পোশাক ডিজাইন করে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি দক্ষ বয়নশিল্পীও। সমকামী ভেড়ার উল দিয়ে সম্পূর্ণ একটি সংগ্রহ তৈরি করার সুযোগ পেয়ে তিনি দ্রুত রাজি হয়ে যান।
সমকামী ভেড়া এবং তাদের সমস্যা
প্রতি ১২টি পুরুষ ভেড়ার মধ্যে একটি প্রজননে অক্ষম এবং অন্য পুরুষ ভেড়ার প্রতি আকর্ষণ দেখায়। এই ভেড়াগুলো অন্যদের মতোই যত্ন ও খাবার চায়, কিন্তু তারা সন্তান উৎপাদন না করায় অনেক খামারে তাদের আর্থিকভাবে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয় এবং হত্যার ঝুঁকিতে পড়ে।
মাইকেল স্টুকে ও তার রেইনবো উল উদ্যোগ
১৯৯৫ সাল থেকে মাইকেল স্টুকে জার্মানির ১০০ একরের বেশি জায়গায় তার ভেড়া খামার পরিচালনা করছেন। তার খামারে পাঁচশোর বেশি ভেড়া রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি সমকামী ভেড়া উদ্ধার করা। তিনি মনে করেন, প্রতিটি প্রাণী মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার রাখে।
এই ভেড়াগুলোর নামও রাখা হয় সৃজনশীলভাবে—যেমন মারভিন গে এবং জ্যাঁ উল গলতিয়ে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষ একটি ভেড়ার দেখভাল স্পনসরও করতে পারে।
স্টুকের জীবনের সংগ্রাম
ল্যোনে শহরের এই খামারে স্টুকে তার স্বামী ইয়োখেন ক্লিঙ্গারের সঙ্গে কাজ করেন। ক্লিঙ্গার ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন, যা স্টুকে অত্যন্ত কষ্টের বিষয় বলে মনে করেন। তিনি তার কাজকে শুধু কৃষিশ্রম নয়—একটি মানবিক দায়িত্ব হিসেবেও দেখেন।
স্টুকে বলেন, মানুষের সঙ্গে ভেড়ার সম্পর্ক হাজার বছরের। উল মানুষকে রক্ষা করেছে, মানুষ ভেড়াকে রক্ষা করেছে। তাই তাদের পরিত্যাগ করা ভুল।
গ্রাইন্ডারের সঙ্গে পরিচয় ও সহযোগিতা
রেইনবো উল প্রকল্পের সমন্বয়ক নাদিয়া লেইটেস ২০২৪ সালের আগস্টে গ্রাইন্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্টুকে আগে অ্যাপটির নামই শোনেননি। গ্রাইন্ডারের ব্র্যান্ড মার্কেটিং বিভাগ তৎক্ষণাত আগ্রহ দেখায়।
প্রথমে ভেড়া স্পনসরশিপ বা বিজ্ঞাপনভিত্তিক সহযোগিতা নিয়ে ভাবা হলেও গ্রাইন্ডারের পক্ষ থেকে আরও বড় একটি ধারণা আসে—সমকামী ভেড়ার উল দিয়ে তৈরি ফ্যাশন শো, নাম “আই উল সারভাইভ”।
ফ্যাশন শোর পরিকল্পনা
গ্রাইন্ডারের সাম্প্রতিক প্রচারণা—খ্যাতনামা শিল্পী ও ড্র্যাগ পারফর্মারদের সঙ্গে কাজ—এই প্রকল্পের সঙ্গে সহজেই মিলে যায়। তারা একজন সমকামী ডিজাইনার খুঁজছিলেন এবং সেই মাধ্যমেই মাইকেল শ্মিটকে পান।
শ্মিট একটি সংগ্রহ তৈরি করেন যেখানে পুল বয়, নাবিক, কাঠুরে—এমন নানা চরিত্রের পোশাক থাকে, সবই উল দিয়ে বোনা। এমনকি পিজা, কুঠার বা ব্যাজ পর্যন্ত উল দিয়ে তৈরি করা হয়।
স্পেনের একটি কারখানায় উল সুতো তৈরি করে লস অ্যাঞ্জেলেসে পাঠানো হয়। মাত্র দুই মাসে ৭০০ পাউন্ড উল দিয়ে ৩৭টি পোশাক বানানো হয়।
ব্যাকস্টেজ প্রস্তুতি ও শোয়ের পরিবেশ
শো শুরু হওয়ার আগে শ্মিট নিজ হাতে মডেলদের পোশাক ঠিক করছিলেন। এক ড্র্যাগ পারফর্মারকে তিনি বেগুনি উলের লেজ সেলাই করে দেন।
মডেলরা পুশ-আপ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আর মেকআপ টিম ত্বকে লোশন লাগিয়ে দিচ্ছিল।
শোতে উপস্থিত ছিলেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব আনা ডেলভেয়, সুজান বার্চসহ আরও অনেকে।
স্টুকে শোতে উপস্থিত থাকতে না পারলেও শ্মিট তার খামারে এসে ভেড়াদের সঙ্গে সময় কাটান। তার কথায়—ভেড়াগুলো মানুষের ডাকেই এগিয়ে আসে, যেন ছোট কুকুরছানা।
উলের গুণমান ও খামারের পরিবেশ
স্ট্রেস কম থাকলে ভেড়ার উল ঘন ও সুন্দর হয়। তাই খামারের শান্ত পরিবেশ উলের মান আরও উন্নত করে।
শ্মিট বলেন, উলটির বুনন ও স্পর্শ অত্যন্ত উৎকৃষ্ট। মজা করে যোগ করেন—এটি তো সমকামী ভেড়ার উল, ভালো তো হবেই।
এই প্রকল্প শুধু অভিনব ফ্যাশন নয়—বরং প্রাণীর প্রতি সম্মান, বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি এবং অবহেলিতদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা বহন করে।
সমকামী ভেড়ার উল থেকে তৈরি পোশাক তাই হয়ে উঠেছে অন্যরকম মানবিকতার প্রতীক।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















