০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬২) দ্য ইকোনমিস্ট -এ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎকার কাবুলের ইন্টারকনটিনেন্টাল হোটেল এবং আফগানিস্তানের ইতিহাস জার্মান খামারের সমকামী ভেড়ার উল দিয়ে অভিনব ফ্যাশন শো ১৭০ বছরের পুরনো টেলিগ্রাফ মিডিয়া গ্রুপ কিনতে আলোচনায় ডেইলি মেইল প্রকাশক টাকার বিনিময়ে ইউজারনেম বিক্রি শুরু করল এক্স, বাড়ল ডিজিটাল পরিচয়ের দাম দি ডনের সম্পাদকীয়ঃ শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা মাধবদীতে ভূমিকম্পে দুলল ভবন, আতঙ্কে নরসিংদী পাঁচ বছরের বেশি সময় পর চীনা নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী ভিসা চালু করল ভারত দুবাই এয়ারশোতে তেজস দুর্ঘটনা: কে ছিলেন আইএএফ পাইলট নমনশ সৈয়াল

দ্য ইকোনমিস্ট -এ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎকার

পাঁচ মাস আগে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, দেশটির পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা কি আবার শুরু হতে পারে? ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুনরায় আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প পূর্বেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এক ধরনের সমঝোতা সম্ভব হতে পারে।

আরাঘচি বলেন, তাঁর সরকার একটি “ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি” চায় এবং আরও একবার ইসরায়েলের আক্রমণ এড়াতে আগ্রহী। তিনি ১৯ নভেম্বর তেহরানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুঃখ প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প জুনে আলোচনা থেকে সরে যান এবং এরপরের ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের একটি ভালো অভিজ্ঞতাও নেই।” তবুও তিনি জানান, দরজা খোলা রয়েছে—“আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নির্দেশ মানার জন্য নয়।”

ইরান এখনো ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী তার ঘরোয়া উন্নত পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে রাজি নয়। তবে আরাঘচি ইঙ্গিত দেন যে, পশ্চিমকে আশ্বস্ত করার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা হতে পারে—যাতে নিশ্চিত করা যায় যে ইরান তার কর্মসূচিকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করবে না। তিনি বলেন, “শূন্য সমৃদ্ধকরণ অসম্ভব, কিন্তু শূন্য পারমাণবিক অস্ত্র সম্ভব।” ইরানি কূটনীতিকরা এখনো সেই সমঝোতার প্রস্তাবের কথা বলেন, যা বছরের শুরুর দিকে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় তোলা হয়েছিল। তাদের প্রস্তাব—আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত ৩.৬৭% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের ভেতরেই করা যেতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর একটি যৌথ কনসোর্টিয়াম তার তদারকি করবে—যার মধ্যে আমেরিকাও থাকতে পারে।

আরাঘচি দাবি করেন যে ইসরায়েল ও আমেরিকার হামলায় মারাত্মক ক্ষতির কারণে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম “এখন বন্ধ রয়েছে”। তবে প্রায় ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ভাগ্য সম্পর্কে তিনি অস্পষ্ট মন্তব্য করেন। নাতাঞ্জ ও ফোরদোতে হামলার পর ইউরেনিয়াম ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে তিনি দাবি করেন; বোমা হামলার আগে এগুলো গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে—এই রিপোর্ট তিনি নাকচ করেন। তবে তিনি জানান, কোনো চুক্তি না হলে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। ইরানের পূর্বের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ায় পশ্চিমাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও কঠিন হয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যেকোনো সম্ভাব্য আলোচনার আগে—বা ইসরায়েলের নতুন সামরিক হুমকির মুখে—আরাঘচি ইরানের কূটনৈতিক সুবিধা সর্বাধিক করতে চাইছেন। ইরানের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে, এই বছর তাদের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। লেবাননে হিজবুল্লাহসহ ইরানের মিত্রদের ওপর ইসরায়েলের হামলায় বহু যোদ্ধা নিহত ও কয়েকজন নেতা হত্যা করা হয়েছে। সিরিয়ার একসময়ের মিত্রতাও ইরান হারিয়েছে। এক বছর আগে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া এখন তুরস্ক ও ইসরায়েলের দিকে বেশি ঝুঁকে আছে।

জুনের হামলা ইরানকে পারমাণবিক সীমার কাছাকাছি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথ থেকে আরও দূরে সরিয়েছে। নতুন ইসরায়েলি হামলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরাঘচি বলেন, ইরান “আগের যুদ্ধের চেয়েও বেশি প্রস্তুত”। তিনি জানান, ইরানের “মিসাইলগুলো এখন আরও ভালো অবস্থায় আছে”—সংখ্যা ও গুণগত মান উভয় দিক থেকেই। তিনি আরও জানান, রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের “কৌশলগত অংশীদারিত্ব”ও এগোচ্ছে।

বিদেশে আলোচনার পাশাপাশি দেশে কঠোরপন্থীদেরও সন্তুষ্ট রাখতে হচ্ছে আরাঘচিকে। এরা আগের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের দাবি—আমেরিকার প্রচেষ্টা আন্তরিক নয়, বরং ভুয়া নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে। উইটকফ ১৫ জুন ষষ্ঠ দফা আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দুই দিন আগে—ট্রাম্পের নীরব সম্মতি পেয়েই—ইসরায়েল হঠাৎ তেহরানে আক্রমণ চালায়।

কঠোরপন্থীরা সতর্ক করেছেন যে, আলোচনার নতুন প্রস্তাব আসলে এমন এক ফাঁদ হতে পারে, যা ইসরায়েলের সামরিক হামলার সম্ভাবনা আরও বাড়াবে। ইরানি কূটনীতিকরা এখনো “স্টিভ”—উইটকফকে সেই নামে ডাকেন—এর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও করমর্দনের স্মৃতি হাসিমুখে মনে করেন। কিন্তু তারাও স্বীকার করেন, দেশের ভেতরে পুনরায় অস্ত্রসংগ্রহের চাপ বাড়ছে। আরাঘচি বলেন, “যুদ্ধ ঠেকানোর সেরা উপায় হলো তার জন্য প্রস্তুত থাকা। আর আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।”

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬২)

দ্য ইকোনমিস্ট -এ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাক্ষাৎকার

০২:০০:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

পাঁচ মাস আগে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বোমা হামলায় ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, দেশটির পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা কি আবার শুরু হতে পারে? ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুনরায় আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প পূর্বেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এক ধরনের সমঝোতা সম্ভব হতে পারে।

আরাঘচি বলেন, তাঁর সরকার একটি “ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি” চায় এবং আরও একবার ইসরায়েলের আক্রমণ এড়াতে আগ্রহী। তিনি ১৯ নভেম্বর তেহরানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুঃখ প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প জুনে আলোচনা থেকে সরে যান এবং এরপরের ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের একটি ভালো অভিজ্ঞতাও নেই।” তবুও তিনি জানান, দরজা খোলা রয়েছে—“আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নির্দেশ মানার জন্য নয়।”

ইরান এখনো ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী তার ঘরোয়া উন্নত পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে রাজি নয়। তবে আরাঘচি ইঙ্গিত দেন যে, পশ্চিমকে আশ্বস্ত করার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা হতে পারে—যাতে নিশ্চিত করা যায় যে ইরান তার কর্মসূচিকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করবে না। তিনি বলেন, “শূন্য সমৃদ্ধকরণ অসম্ভব, কিন্তু শূন্য পারমাণবিক অস্ত্র সম্ভব।” ইরানি কূটনীতিকরা এখনো সেই সমঝোতার প্রস্তাবের কথা বলেন, যা বছরের শুরুর দিকে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় তোলা হয়েছিল। তাদের প্রস্তাব—আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত ৩.৬৭% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের ভেতরেই করা যেতে পারে, তবে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর একটি যৌথ কনসোর্টিয়াম তার তদারকি করবে—যার মধ্যে আমেরিকাও থাকতে পারে।

আরাঘচি দাবি করেন যে ইসরায়েল ও আমেরিকার হামলায় মারাত্মক ক্ষতির কারণে ইরানের সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম “এখন বন্ধ রয়েছে”। তবে প্রায় ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ভাগ্য সম্পর্কে তিনি অস্পষ্ট মন্তব্য করেন। নাতাঞ্জ ও ফোরদোতে হামলার পর ইউরেনিয়াম ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে তিনি দাবি করেন; বোমা হামলার আগে এগুলো গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে—এই রিপোর্ট তিনি নাকচ করেন। তবে তিনি জানান, কোনো চুক্তি না হলে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। ইরানের পূর্বের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ায় পশ্চিমাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও কঠিন হয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যেকোনো সম্ভাব্য আলোচনার আগে—বা ইসরায়েলের নতুন সামরিক হুমকির মুখে—আরাঘচি ইরানের কূটনৈতিক সুবিধা সর্বাধিক করতে চাইছেন। ইরানের কর্মকর্তারা স্বীকার করেন যে, এই বছর তাদের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। লেবাননে হিজবুল্লাহসহ ইরানের মিত্রদের ওপর ইসরায়েলের হামলায় বহু যোদ্ধা নিহত ও কয়েকজন নেতা হত্যা করা হয়েছে। সিরিয়ার একসময়ের মিত্রতাও ইরান হারিয়েছে। এক বছর আগে স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া এখন তুরস্ক ও ইসরায়েলের দিকে বেশি ঝুঁকে আছে।

জুনের হামলা ইরানকে পারমাণবিক সীমার কাছাকাছি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথ থেকে আরও দূরে সরিয়েছে। নতুন ইসরায়েলি হামলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরাঘচি বলেন, ইরান “আগের যুদ্ধের চেয়েও বেশি প্রস্তুত”। তিনি জানান, ইরানের “মিসাইলগুলো এখন আরও ভালো অবস্থায় আছে”—সংখ্যা ও গুণগত মান উভয় দিক থেকেই। তিনি আরও জানান, রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের “কৌশলগত অংশীদারিত্ব”ও এগোচ্ছে।

বিদেশে আলোচনার পাশাপাশি দেশে কঠোরপন্থীদেরও সন্তুষ্ট রাখতে হচ্ছে আরাঘচিকে। এরা আগের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের দাবি—আমেরিকার প্রচেষ্টা আন্তরিক নয়, বরং ভুয়া নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে। উইটকফ ১৫ জুন ষষ্ঠ দফা আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দুই দিন আগে—ট্রাম্পের নীরব সম্মতি পেয়েই—ইসরায়েল হঠাৎ তেহরানে আক্রমণ চালায়।

কঠোরপন্থীরা সতর্ক করেছেন যে, আলোচনার নতুন প্রস্তাব আসলে এমন এক ফাঁদ হতে পারে, যা ইসরায়েলের সামরিক হামলার সম্ভাবনা আরও বাড়াবে। ইরানি কূটনীতিকরা এখনো “স্টিভ”—উইটকফকে সেই নামে ডাকেন—এর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া ও করমর্দনের স্মৃতি হাসিমুখে মনে করেন। কিন্তু তারাও স্বীকার করেন, দেশের ভেতরে পুনরায় অস্ত্রসংগ্রহের চাপ বাড়ছে। আরাঘচি বলেন, “যুদ্ধ ঠেকানোর সেরা উপায় হলো তার জন্য প্রস্তুত থাকা। আর আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।”