ভূমিকম্পের পর বাড়ি-ঘরের ছাদ বা দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়া সাধারণ ঘটনা। কম্পনের মাত্রা অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতি ছোট দাগ থেকে বড় ফাটল পর্যন্ত হতে পারে। কম্পন থেমে যাওয়ার পরও এসব ফাটল থেকে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়ে যায়। অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না কোন ফাটল বিপজ্জনক, আর কোনটি নয়। তাই ভূমিকম্প-পরবর্তী বিভিন্ন ধরনের ফাটল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
যেগুলো সাধারণত উদ্বেগের কারণ নয়
বসতবাড়ি বা কর্মস্থলে ভূমিকম্পে হওয়া সব ফাটলই বিপজ্জনক নয়। কিছু ফাটল খুবই স্বাভাবিক কারণে দেখা যেতে পারে।
হেয়ারলাইন ফাটল
- এগুলো সূক্ষ্ম, কলমের আঁচড় বা মাকড়সার জালের মতো পাতলা দাগ।
- সাধারণত প্লাস্টার বা রঙে দেখা যায়।
- ভূমিকম্পে দেয়ালের উপরের প্লাস্টার নরম হয়ে নড়াচড়া করলে এগুলো তৈরি হয়।
- এগুলো কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না এবং সহজেই মেরামত করা যায়।
- বাড়ির স্বাভাবিক বসতি-ধরা, তাপমাত্রা বদল বা আর্দ্রতার কারণেও এমন দাগ হতে পারে।
গাঁথুনি বা জোড়ায় সামান্য ফাটল
- ছাদ ও দেয়ালের সংযোগস্থলে দুর্বল জায়গায় ছোট ফাটল দেখা যেতে পারে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো কাঠামোগত সমস্যার কারণে হয় না।
ইনটেরিয়র বা ভেতরের দেয়ালে চাপের দাগ
- ভেতরের পার্টিশন দেয়ালগুলো সাধারণত ভার বহন করে না।
- তাই এসব দেয়ালে ফাটল দেখা দিলেও তা ভবনের স্থায়িত্বে তেমন প্রভাব ফেলে না।
যেসব ফাটল নিয়ে গুরুত্বসহকারে ভাবা প্রয়োজন
কিছু ফাটল ভবনের কাঠামোতে বড় ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। সেগুলো উপেক্ষা করলে বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বড় এলাকায় বিস্তৃত ফাটল
- ৩ মিলিমিটারের বেশি চওড়া ফাটল সবচেয়ে উদ্বেগজনক।
- এগুলো সাধারণত ভূমিকম্পের পরপরই দেখা দেয় এবং ভবনে আড়াআড়ি চাপের (transverse stress) ইঙ্গিত দেয়।
তির্যক বা আড়াআড়ি কোণে ফাটল
- জানালা বা দরজার কোনা থেকে তির্যকভাবে দেয়ালে ফাটল ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- দেখলে মনে হতে পারে পুরো ফ্রেমটাই বাঁকা হয়ে গেছে।
- ভূমিকম্প ছাড়াও পানি ঢোকা বা ভিত্তি বসে যাওয়ার কারণেও এমন ফাটল হতে পারে।
সিঁড়ির ধাপের মতো ইটের দেয়ালে ফাটল
- ইটের তৈরি বাড়িতে দেয়ালে সিঁড়ির ধাপের মতো (stair-step) ফাটল দেখা যেতে পারে।
- এসব ভবন ভূমিকম্পে অসামঞ্জস্যভাবে নড়াচড়া করে, তাই এমন ফাটল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
দেয়াল ভেদ করে গভীর ফাটল
- এগুলো শুধু প্লাস্টার নয়, দেয়ালের গভীর অংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
- গভীর ফাটল ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
দরজা-জানালার ফ্রেমের চারপাশে চাপের রেখা
- ভূমিকম্পের পর দরজা-জানালা ঠিকভাবে বন্ধ না হলে বুঝতে হবে ফ্রেম সরেছে।
- দৃশ্যমান ফাটল না থাকলেও এটি বিপদের ইঙ্গিত।
যেসব ক্ষতির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি
ভূমিকম্প-পরবর্তী কিছু অবস্থায় অবশ্যই প্রকৌশলী বা বিশেষজ্ঞকে ডাকা প্রয়োজন।
- ফাটল ৩ থেকে ৫ মিলিমিটারের বেশি চওড়া হলে
- ফাটল সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকলে
- দেয়াল বাইরে দিকে ফোলা দেখা দিলে
- দেয়াল-ছাদ বা দেয়াল-মেঝের সংযোগস্থলে বড় ফাটল হলে
- ভূমিকম্পের পর মেঝের সমতল ঠিক না থাকলে
ভূমিকম্পের পর বাড়িতে দেখা দেওয়া ফাটলের ঝুঁকি নির্ভর করে ফাটলের ধরন ও গভীরতার ওপর। সূক্ষ্ম ও উপরের দাগ সাধারণত সমস্যা নয় এবং এগুলো বড় ক্ষতির দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়। তাই গভীর, তির্যক এবং ৩ মিলিমিটারের বেশি চওড়া ফাটলকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি ছাদ-দেয়ালের ফুলে যাওয়া, মেঝে বেঁকে যাওয়া বা ফাটল বাড়তে থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















