৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময় পিছিয়ে ‘যৌক্তিক প্রস্তুতির সুযোগ’ দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেছেন। রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবরোধ চলায় ঢাকা-ময়মনসিংহসহ পাঁচ জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ আটকে পড়ে, ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও রেলপথ অবরোধ
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিভিন্ন হল থেকে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা আবদুল জব্বার মোড়ে জড়ো হন। এরপর পাশের রেললাইনে অবস্থান নেন এবং বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস আটকে দেন।
এতে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহুয়া কমিউটার, অগ্নিবিনা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, বলাকা কমিউটার ও দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান বজায় রাখেন।
যাত্রী-শিক্ষার্থী উত্তেজনা ও সাময়িক ট্রেন চলাচল
দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা শুধু ওই ট্রেনটিকে ছেড়ে দেন। তবে অবরোধ অব্যাহত থাকে, ফলে অন্যান্য ট্রেন আটকে থাকে।

শিক্ষার্থীদের দাবি
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের অন্তত দুই মাস পর পরীক্ষা নেওয়া উচিত।
এক শিক্ষার্থী মেহরাজ হাসান বলেন, পিএসসি লিখিত পরীক্ষার জন্য ‘ন্যূনতম প্রস্তুতির সময়’ দিতে হবে। দাবি মানা না হলে অবরোধ চলবে।
আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, যে পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হবে, রেলের চাকা ঘুরবে না।
যাত্রীদের ভোগান্তি ও ক্ষোভ
অনেক যাত্রী জরুরি প্রয়োজন, অসুস্থ ব্যক্তি, নারী-শিশু নিয়ে আটকে পড়েন।
যাত্রী সোহেল রানা বলেন, প্রস্তুতির দাবিতে আন্দোলন যৌক্তিক হলেও ট্রেন বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়।
আরেক যাত্রী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সামান্য বিষয়েই অবরোধ করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অন্যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও রেলওয়ে প্রশাসনের অবস্থান
প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল আলীম ও ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা সরেননি।
রেলওয়ে থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, আটকে থাকা সব ট্রেনে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চরম দুর্ভোগে আছেন।
স্টেশন সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন—পরীক্ষা পিছিয়ে প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধই থাকবে।
প্রশাসনের প্রচেষ্টা
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বোঝানোর চেষ্টা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের সরানো যায়নি, জোর করে তোলা সম্ভবও নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন পিএসসির সঙ্গে কথা বলবে। তবে ছাত্রদের জনভোগান্তি না বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আগের দিনের আন্দোলন
শনিবারও একই স্থানে একই দাবিতে রেল অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
তখনও তিস্তা, মহুয়া, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকে পড়ে।
রাত ৮টায় পরীক্ষার প্রবেশপত্র পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে তারা অবরোধ তুলে নেন।
পরে রাত ১১টায় ফের অবরোধ করে যমুনা এক্সপ্রেস আটকান।
রাত ১২টায় প্রশাসনের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও রোববার তারা আর সরতে রাজি হননি।
চূড়ান্ত অবস্থান
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন—৪৭তম বিসিএসের সময়সূচি সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ চলবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















