জ্বালানিখরচ ও বাজারচাপে টিকে থাকতে কড়া সিদ্ধান্ত
নরওয়েজিয়ান অ্যালুমিনিয়াম জায়ান্ট হাইড্রো ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে ইউরোপে তাদের পাঁচটি এক্সট্রুশন প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে প্রায় ৭৩০ জন কর্মীর চাকরি সরাসরি ঝুঁকিতে পড়বে। কোম্পানি জানিয়েছে, এর পরও তারা ইউরোপে ২৮টি এক্সট্রুশন প্ল্যান্ট ও পাঁচটি রিসাইক্লিং সুবিধা চালু রাখবে, তবে কম কর্মী ও বেশি দক্ষতার ওপর জোর দেবে। ব্যবস্থাপনা বলছে, উচ্চ জ্বালানিখরচ, দুর্বল চাহিদা ও প্রতিযোগিতার পরিস্থিতিতে পুরোনো ও কম দক্ষ কারখানা ধরে রাখলে পুরো ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কঠিন হলেও এই পুনর্গঠন ভবিষ্যতে বছরে ৫০ কোটির বেশি নরওয়েজিয়ান ক্রোন সাশ্রয় করতে পারে বলে তাদের ধারণা।
এই রূপান্তরের জন্য কোম্পানিকে প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ক্রোন পুনর্গঠন ব্যয় ও অবচয় হিসাব করতে হবে, যা চলতি ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফলে প্রভাব ফেলবে। ইউরোপে অ্যালুমিনিয়ামসহ ভারী শিল্প এখন একসঙ্গে কয়েকটি চাপে আছে—নির্মাণ খাতে মন্দা, সস্তা আমদানি পণ্য, আর জলবায়ু নীতির কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া বদলে ফেলার চাপ। অ্যালুমিনিয়াম তৈরিতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে; ফলে কার্বন নির্গমন কমাতে গেলে উৎপাদনের খরচও আবার বাড়ে। হাইড্রো এখন তুলনামূলক আধুনিক প্ল্যান্টে উৎপাদন কনসেন্ট্রেট করতে ও স্ক্র্যাপ রিসাইক্লিং বাড়িয়ে ইউরোপে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চাচ্ছে।
সবুজ রূপান্তরে শিল্প, শ্রমিক ও নীতিনির্ধারকের হিসাব
এই ঘোষণা ইউরোপের নীতিনির্ধারকদের জন্য পুরোনো প্রশ্নগুলো আবার সামনে এনে দিয়েছে—কীভাবে ভারী শিল্পে কার্বন কমিয়ে আবার শিল্প ও কর্মসংস্থানও ধরে রাখা যায়। যে সব শহর কারখানাভিত্তিক অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে, সেখানে একটি প্ল্যান্ট বন্ধ মানে স্থানীয় ব্যবসা, বাসাবাড়ি ভাড়া, সরকারি সেবা—সব কিছুর ওপর ধাক্কা। স্থানীয় ইউনিয়ন ও মেয়ররা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের জন্য পুনর্বাসন বা পুনঃপ্রশিক্ষণের কী পরিকল্পনা আছে; অন্য কারখানায় কতজনকে স্থানান্তর করা সম্ভব। কোম্পানি যদিও বলছে, তারা রিসাইক্লিং ও উচ্চ দক্ষ প্ল্যান্টে বিনিয়োগ বাড়াবে, তবু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের কাছে তা এখনো দূরের প্রতিশ্রুতি।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিদ্যুতের দাম অস্থির থাকলে এবং চাহিদা দ্রুত না ফিরলে অন্য অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত কোম্পানিও একই ধরনের পুনর্গঠনে যেতে পারে। অন্যদিকে, গাড়ি নির্মাতা থেকে শুরু করে নির্মাণ ও প্রযুক্তি কোম্পানি—সবাইই এখন কম কার্বন ফুটপ্রিন্টের কাঁচামাল চাইছে; ফলে ইউরোপে ‘গ্রীন অ্যালুমিনিয়াম’-এর বাজারও বাড়তে পারে। তাই সরকারগুলোকে একদিকে কঠোর জলবায়ু নীতি ধরে রাখার পাশাপাশি, অন্যদিকে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা, সস্তা সবুজ বিদ্যুৎচুক্তি বা কর–প্রণোদনার মাধ্যমে শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে। হাইড্রোর এই ঘোষণা দেখাচ্ছে, সবুজ রূপান্তর শুধু নতুন সোলার বা উইন্ড ফার্ম স্থাপনের গল্প না; বরং পুরোনো শিল্পব্যবস্থাকে নতুন বাস্তবতায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার কঠিন প্রক্রিয়া, যার প্রথম ধাক্কা সইতে হয় কারখানার শ্রমিক আর স্থানীয় সমাজকে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















