মঞ্চে প্রথমবারের মতো ব্যালে, বুতোহ ও শিশু কাবুকি অভিনেতা একসঙ্গে পারফর্ম করতে যাচ্ছেন। কে-ব্যালে অপ্টো–র নতুন পরীক্ষামূলক প্রযোজনায় বুতোহ সংস্থা দাইরাকুদাকান, এর প্রতিষ্ঠাতা আকাজি মারো এবং কাবুকি অভিনেতা ওনোয়ে মাহালো অংশ নিচ্ছেন।
প্রদর্শনীর অনুপ্রেরণা ও মূল ভাবনা
নির্দেশক ক্যাইজি মোরিয়ামা তাঁর কাজটির অনুপ্রেরণা নিয়েছেন ১৯১০ সালে প্রকাশিত কুনিও ইয়ানাগিতার লোককাহিনি সংকলন ‘দ্য লেজেন্ডস অব টোনো’ থেকে। এখানে দীর্ঘ নাকওয়ালা টেংগু দানব, ইয়োকাই প্রাণী ও মৃত আত্মার মতো অতিপ্রাকৃত চরিত্র রয়েছে।
‘এ ড্যান্স রিমেম্বার্ড ইন টোনো’ নামের এই নতুন প্রযোজনায় মোরিয়ামা জীবন ও মৃত্যুর মাঝের অনিশ্চিত জগৎকে নৃত্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করেছেন। নাটকটি ২৬ ডিসেম্বর টোকিওর টাতোমোনো ব্রিলিয়া হলে প্রিমিয়ার হবে।
গল্পের মূল ধারা: এক কামিকাজে পাইলটের শেষ চিঠি
গল্পটি টোনো শহরে থাকা এক কামিকাজে পাইলটকে কেন্দ্র করে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে সে তাঁর বাগদত্তাকে শেষ চিঠি লেখে (অভিনয়: শোয়া ইশিবাশি ও সায়া ওকুবো)। তার পথপ্রদর্শক হয় ‘ছেলে কে’—১৩ বছর বয়সী কাবুকি অভিনেতা ওনোয়ে মাহালো, যিনি তাকে অদ্ভুত সব জগত ও মৃতদের মুখোমুখি নিয়ে যান।
নৃত্যশৈলীর বিরল সমন্বয়
কে-ব্যালে অপ্টো এ বছর একটি বহুস্তরীয় প্রযোজনা তৈরি করেছে, যেখানে ব্যালের পাশাপাশি আধুনিক নৃত্য, কাবুকি এবং বুতোহ একসঙ্গে মিশেছে। বুতোহকে প্রায়ই ‘অ্যান্টি-ব্যালে’ বলা হয়, কারণ এর দেহভঙ্গি ভারী, অদ্ভুত এবং অন্ধকারময়।
মোরিয়ামার ভাবনা ছিল—মাটির দিকে নেমে থাকা বুতোহ-দেহের ভার ও ব্যালের হালকা, আকাশমুখী চলনকে একত্র করে এক শক্তিশালী রূপ তৈরি করা।

অভিনয়শিল্পীদের ভূমিকা
• দাইরাকুদাকানের প্রতিষ্ঠাতা আকাজি মারো (৮৩) বিভিন্ন মৃত্যু-সংক্রান্ত ও অতিপ্রাকৃত চরিত্রে অভিনয় করবেন।
• মুতসুকো তানাকা—প্রথম দিকের বিরল নারী বুতোহশিল্পীদের একজন—এ প্রযোজনায় পাহাড়ের ডাইনির চরিত্রে অভিনয় করছেন। ৩০ বছর পর আবার মারোর সঙ্গে তাঁর একই মঞ্চে কাজ করা এটি।
• মোরিয়ামা নিজে কাঁপ্পা, এক লোককাহিনির সরীসৃপ-রূপী দানব, চরিত্রে অভিনয় করছেন।
সঙ্গীত ও নকশা: লোকজ সুর ও সমসাময়িক শিল্পের মেলবন্ধন
সঙ্গীত পরিচালনায় আছেন শাকুহাচ্চি বাঁশির শিল্পী আকিকাজু নাকামুরা। তিনি মোরিয়ামার সঙ্গে মিলে বিভিন্ন ধারার সুর মিলিয়ে সাউন্ডস্কেপ তৈরি করেছেন।
এ ছাড়া টোনো অঞ্চলের লোকসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ মাসে কিকুচি অংশ নিচ্ছেন। মঞ্চ ও পোশাক নকশা করেছেন ভাস্কর ও বস্ত্রশিল্পী তাকেহিকো সানাদা।
বাস্তব ইতিহাস ও অতিপ্রাকৃত কাহিনির মিল
এই প্রযোজনার ভিত্তি বাস্তব ও কল্পনার সম্মিলনে গড়া। টোনো শহরকে জাপানের ‘লোককাহিনির রাজধানী’ বলা হয়, ইয়ানাগিতার রচিত ১৯১০ সালের সংকলনটির কারণে।
এ প্রযোজনা অনুপ্রাণিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক বাস্তব পাইলটের রেখে যাওয়া চিঠি থেকে। পাশাপাশি এটি ইয়ানাগিতার জন্মের ১৫০ বছর এবং যুদ্ধশেষের ৮০ বছর পূর্তির প্রতি সম্মান জানায়।
মোরিয়ামা বলেন, এক কামিকাজে পাইলটের কণ্ঠে কথা বলা কঠিন। তবে তিনি আশা করেন, এই গল্প মানুষের জীবন সম্পর্কে ভাবতে সাহায্য করবে।
জীবন-মৃত্যু নিয়ে জাপানি ভাবনা
মারোর মতে, গল্পটিতে এমন এক জাপানি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যা জীবন ও মৃত্যুকে একই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখে। তাঁর কথায়, আধুনিক জীবনের ভঙ্গুরতা ও মানবিক স্থিতি হারানোর বিষয়টি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।
মোরিয়ামা নিজেও শৈশবেই মৃত্যুর সীমানা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন—অসুস্থতার সময় দেহের বাইরে থাকার অনুভূতি অথবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খুব কাছাকাছি পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা থেকে। তিনি বলেন, নৃত্যে এমন মুহূর্ত আসে যখন বাস্তবতার ভার থেকে মন মুক্ত হয়ে যায়।

ঐতিহ্যগত শিল্পরূপ ও আধুনিকতার সংলাপ
মোরিয়ামা নো ও কাবুকি ধারার উপাদান নিয়ে কাজ করলেও স্বীকার করেন যে তিনি ঐতিহ্যবাহী শিল্পী নন। কাবুকি অভিনেতা ওনোয়ে বলেন, ব্যালের ভাষা আলাদা হলেও গল্পের সঙ্গে কাবুকির কল্পজগত ও থিমের মিল রয়েছে।
ওনোয়ের জন্য এটি কাবুকির বাইরে তাঁর প্রথম মঞ্চাভিনয়, যা তিনি একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং ও উপভোগ্য বলে মনে করেন।
সারা জাপানে সফর ও লোকনৃত্য পুনরাভিনয়
টোকিওর পর প্রযোজনাটি ইয়ামাগাতা, আকিতা, আওমোরি, ইওয়াতে হয়ে ২০২৬ সালের ২০ জানুয়ারি হোক্কাইডোতে শেষ হবে। টোহোকু অঞ্চলের সফর প্রযোজনাকে তার উৎসের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে—যেখানে শিল্পীরা শিসি-ওদোরি বা ৪০০ বছরের পুরোনো হরিণ নৃত্য পুনরাভিনয় করবেন।
মোরিয়ামা বলেন, নৃত্য মানে জীবন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। নাচলে আত্মা পবিত্র হয়—এ বিশ্বাস তিনি দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করতে চান।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















