১২:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

বদলে যাওয়া শিল্পে তিনি ছিলেন স্থির আলো: ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে শ্রীরাম রাঘবনের স্মৃতি

শ্রীরাম রাঘবনের কাছে ধর্মেন্দ্র শুধু এক অভিনেতা ছিলেন না—তিনি ছিলেন এক অনড় উপস্থিতি। ‘জনি গদ্দার’ থেকে ‘ইক্কিস’—দুই ছবির যাত্রা জুড়ে রাঘবন দেখেছেন এক তারকার সজীবতা, সৃজনশীল ধার, আর শিশুসুলভ উৎসাহ। বদলে যাওয়া হিন্দি সিনেমাতেও তাঁর জায়গা ছিল স্থির, এক বিরল সৌন্দর্যে।

‘জনি গদ্দার’-এ প্রথম সহযোগিতা: একজন অভিনেতার চেয়েও বেশি কিছু

২০০৭ সালে ‘জনি গদ্দার’-এর গল্প শুনে অনেকেই ভেবেছিলেন এটা বোধহয় বি-গ্রেড ধরনের থ্রিলার। কিন্তু রাঘবনের মাথায় শেশাদ্রি চরিত্রে প্রথম নামটাই ছিল ধর্মেন্দ্র—কারণ অপরাধীর ভূমিকাতেও তাঁর চোখে দেখা যেত এক ধরনের মর্যাদা।
জহমু সুগন্ধের পরামর্শে শুরু হয় গল্প পাঠ। ধর্মজি মনোযোগ দিয়ে শোনেন, উচ্ছ্বাসে তালি দেন, আর নিজের মৃত্যু দৃশ্যেও ঠান্ডা মাথায় বলেন—“চালিয়ে যান।”

কিন্তু গল্পের দ্বিতীয় অংশে দুর্বলতা ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি নেই বলেই বলছি না, কিছু একটা মিসিং।” তাঁর ইঙ্গিতেই রাঘবন দল নিয়ে গল্পে নতুন চরিত্র যোগ করেন, আর সেখানেই গল্পের বাঁক বদলায়।

Johnny Gaddaar - Plan to take the delivery

ধর্মেন্দ্র শুধু অভিনয় করতেন না—তিনি গল্পের সহ-লেখক হয়ে উঠতেন। সকালবেলা ফোন করে বলতেন, কোন দৃশ্য কীভাবে ধরলে ভালো হয়। রিহার্সালে লাইন পড়তে পড়তেই চরিত্রটা ভেতরে ঢুকে যেত। তাঁর সেই সহযোগিতার উদ্যমে রাঘবন বারবার বিস্মিত হয়েছিলেন।

ধর্মেন্দ্রর পর্যবেক্ষণ প্রায়শই দৃশ্যকে বাঁচিয়ে দিত। যেমন এক হত্যার দৃশ্যে তিনি কাগজ কাটার ব্লেড দেখে হেসে বলেন—“আমি ধর্মেন্দ্র। আমাকে এটা দিয়ে মারলে আধঘণ্টা লাগবে মরতে। ওই সময়েই আমিই ওকে শেষ করে ফেলব।” পরে ব্যবহৃত হয় বন্দুক—আর দৃশ্যটা আজও স্মরণীয়।

এক সর্বাঙ্গসুন্দর তারকা: অ্যাকশন থেকে কবিতা—সবখানেই অটুট তিনি

শ্রীরাম রাঘবন বলেন, ধর্মেন্দ্রর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর ব্যাপ্তি। অ্যাকশন, ড্রামা, কমেডি—সবখানেই তিনি স্বচ্ছন্দ। ক্লিন্ট ইস্টউড বা জঁ-পল বেলমন্ডোর মতোই তাঁর ছিল বহুপ্রজন্মের দর্শকশ্রোতা।

রাঘবনের শৈশবে, পুণের এক পাড়ায় হাঁটা দূরত্বে ছিল ডজনখানেক সিনেমা হল। ’৭০-এর দশকে বছরে ছয়-আটটি করে ধর্মেন্দ্রর ছবি চলত—এক হলে ‘নয়া জামানা’, অন্য হলে ‘জুগনু’। পুরনো ছবির পুনঃমুক্তিতেও ভিড় লেগে যেত।

Phool Aur Patthar (1966) - IMDb

‘ফুল অর পাথর’-এ তাঁর শার্ট খোলার দৃশ্য তো হয়ে ওঠে হিন্দি সিনেমার ইতিহাস।

তাঁর ক্যারিয়ারে ছিল বৈচিত্র্যের ঝলক—মহিলা-নির্ভর গল্প, নেগেটিভ চরিত্র, সংবেদনশীল নায়ক—সবক্ষেত্রেই তিনি সমান শক্তিশালী। এ কারণেই রাজেশ খান্না বা অমিতাভ বচ্চনের উত্থানেও তাঁর তারকামর্যাদা অটুট ছিল।

‘ইক্কিস’-এ শেষবার: এক স্নিগ্ধ বিদায়ের গল্প

‘জনি গদ্দার’ মুক্তির পর থেকেই ধর্মেন্দ্র বারবার জিজ্ঞেস করতেন—“কবে আবার কাজ করব?” রাঘবনের মনে ইক্কিস-এর বাবা চরিত্রে প্রথমেই আসে তাঁর নাম। যুদ্ধনির্ভর গল্প রাঘবনের পছন্দ নয়, তবু ধর্মেন্দ্রর প্রতি সম্মানই তাঁকে টানল।

শুটিং হয় চণ্ডীগড়, লখনউ, দিল্লি ও পুণেতে। দুইজন সাহায্যকারী নিয়ে চুপচাপ ভ্রমণ করতেন তিনি—যে দৃশ্যই আসুক, ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতেন। ক্লোজ-আপ দেখার সময় তাঁর চোখে থাকত শিশুসুলভ কৌতূহল।

Bollywood legend Dharmendra dies in Mumbai at 89

সংলাপ তিনি উর্দুতে নিজে লিখতেন—নিজের লাইনই নয়, সহ-অভিনেতারটাও। নিয়মিত কবিতা লিখতেন। রাঘবনের ভাষায়—“ইক্কিস-এ তাঁর লেখা একটি কবিতাও ব্যবহার করেছি—‘আজও জি কারদা হ্যায় পিন্দ আপ্নে নূ জানওয়া’। এক আশীর্বাদ ছিল তাঁর সঙ্গে কাজ করা।”

দুবিংয়ের সময় ছবির প্রায় ৭০ শতাংশ দেখে তিনি বলেছিলেন—“খুব বাস্তব লাগছে।” রাঘবন অপেক্ষা করছিলেন—ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর শেষে যেন তিনি বড় পর্দায় নিজের নামটা দেখেন।

কিন্তু নভেম্বরের ২৪ তারিখ সকালে, ইক্কিস-এর পোস্টার প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসে সংবাদ—ধর্মেন্দ্র আর নেই। গোয়ার হোটেল রুমে বসে রাঘবন অনুভব করেছিলেন, ভারতীয় সিনেমা তার অন্যতম রত্নকে হারাল।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বদলে যাওয়া শিল্পে তিনি ছিলেন স্থির আলো: ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে শ্রীরাম রাঘবনের স্মৃতি

০৪:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

শ্রীরাম রাঘবনের কাছে ধর্মেন্দ্র শুধু এক অভিনেতা ছিলেন না—তিনি ছিলেন এক অনড় উপস্থিতি। ‘জনি গদ্দার’ থেকে ‘ইক্কিস’—দুই ছবির যাত্রা জুড়ে রাঘবন দেখেছেন এক তারকার সজীবতা, সৃজনশীল ধার, আর শিশুসুলভ উৎসাহ। বদলে যাওয়া হিন্দি সিনেমাতেও তাঁর জায়গা ছিল স্থির, এক বিরল সৌন্দর্যে।

‘জনি গদ্দার’-এ প্রথম সহযোগিতা: একজন অভিনেতার চেয়েও বেশি কিছু

২০০৭ সালে ‘জনি গদ্দার’-এর গল্প শুনে অনেকেই ভেবেছিলেন এটা বোধহয় বি-গ্রেড ধরনের থ্রিলার। কিন্তু রাঘবনের মাথায় শেশাদ্রি চরিত্রে প্রথম নামটাই ছিল ধর্মেন্দ্র—কারণ অপরাধীর ভূমিকাতেও তাঁর চোখে দেখা যেত এক ধরনের মর্যাদা।
জহমু সুগন্ধের পরামর্শে শুরু হয় গল্প পাঠ। ধর্মজি মনোযোগ দিয়ে শোনেন, উচ্ছ্বাসে তালি দেন, আর নিজের মৃত্যু দৃশ্যেও ঠান্ডা মাথায় বলেন—“চালিয়ে যান।”

কিন্তু গল্পের দ্বিতীয় অংশে দুর্বলতা ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমি নেই বলেই বলছি না, কিছু একটা মিসিং।” তাঁর ইঙ্গিতেই রাঘবন দল নিয়ে গল্পে নতুন চরিত্র যোগ করেন, আর সেখানেই গল্পের বাঁক বদলায়।

Johnny Gaddaar - Plan to take the delivery

ধর্মেন্দ্র শুধু অভিনয় করতেন না—তিনি গল্পের সহ-লেখক হয়ে উঠতেন। সকালবেলা ফোন করে বলতেন, কোন দৃশ্য কীভাবে ধরলে ভালো হয়। রিহার্সালে লাইন পড়তে পড়তেই চরিত্রটা ভেতরে ঢুকে যেত। তাঁর সেই সহযোগিতার উদ্যমে রাঘবন বারবার বিস্মিত হয়েছিলেন।

ধর্মেন্দ্রর পর্যবেক্ষণ প্রায়শই দৃশ্যকে বাঁচিয়ে দিত। যেমন এক হত্যার দৃশ্যে তিনি কাগজ কাটার ব্লেড দেখে হেসে বলেন—“আমি ধর্মেন্দ্র। আমাকে এটা দিয়ে মারলে আধঘণ্টা লাগবে মরতে। ওই সময়েই আমিই ওকে শেষ করে ফেলব।” পরে ব্যবহৃত হয় বন্দুক—আর দৃশ্যটা আজও স্মরণীয়।

এক সর্বাঙ্গসুন্দর তারকা: অ্যাকশন থেকে কবিতা—সবখানেই অটুট তিনি

শ্রীরাম রাঘবন বলেন, ধর্মেন্দ্রর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর ব্যাপ্তি। অ্যাকশন, ড্রামা, কমেডি—সবখানেই তিনি স্বচ্ছন্দ। ক্লিন্ট ইস্টউড বা জঁ-পল বেলমন্ডোর মতোই তাঁর ছিল বহুপ্রজন্মের দর্শকশ্রোতা।

রাঘবনের শৈশবে, পুণের এক পাড়ায় হাঁটা দূরত্বে ছিল ডজনখানেক সিনেমা হল। ’৭০-এর দশকে বছরে ছয়-আটটি করে ধর্মেন্দ্রর ছবি চলত—এক হলে ‘নয়া জামানা’, অন্য হলে ‘জুগনু’। পুরনো ছবির পুনঃমুক্তিতেও ভিড় লেগে যেত।

Phool Aur Patthar (1966) - IMDb

‘ফুল অর পাথর’-এ তাঁর শার্ট খোলার দৃশ্য তো হয়ে ওঠে হিন্দি সিনেমার ইতিহাস।

তাঁর ক্যারিয়ারে ছিল বৈচিত্র্যের ঝলক—মহিলা-নির্ভর গল্প, নেগেটিভ চরিত্র, সংবেদনশীল নায়ক—সবক্ষেত্রেই তিনি সমান শক্তিশালী। এ কারণেই রাজেশ খান্না বা অমিতাভ বচ্চনের উত্থানেও তাঁর তারকামর্যাদা অটুট ছিল।

‘ইক্কিস’-এ শেষবার: এক স্নিগ্ধ বিদায়ের গল্প

‘জনি গদ্দার’ মুক্তির পর থেকেই ধর্মেন্দ্র বারবার জিজ্ঞেস করতেন—“কবে আবার কাজ করব?” রাঘবনের মনে ইক্কিস-এর বাবা চরিত্রে প্রথমেই আসে তাঁর নাম। যুদ্ধনির্ভর গল্প রাঘবনের পছন্দ নয়, তবু ধর্মেন্দ্রর প্রতি সম্মানই তাঁকে টানল।

শুটিং হয় চণ্ডীগড়, লখনউ, দিল্লি ও পুণেতে। দুইজন সাহায্যকারী নিয়ে চুপচাপ ভ্রমণ করতেন তিনি—যে দৃশ্যই আসুক, ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতেন। ক্লোজ-আপ দেখার সময় তাঁর চোখে থাকত শিশুসুলভ কৌতূহল।

Bollywood legend Dharmendra dies in Mumbai at 89

সংলাপ তিনি উর্দুতে নিজে লিখতেন—নিজের লাইনই নয়, সহ-অভিনেতারটাও। নিয়মিত কবিতা লিখতেন। রাঘবনের ভাষায়—“ইক্কিস-এ তাঁর লেখা একটি কবিতাও ব্যবহার করেছি—‘আজও জি কারদা হ্যায় পিন্দ আপ্নে নূ জানওয়া’। এক আশীর্বাদ ছিল তাঁর সঙ্গে কাজ করা।”

দুবিংয়ের সময় ছবির প্রায় ৭০ শতাংশ দেখে তিনি বলেছিলেন—“খুব বাস্তব লাগছে।” রাঘবন অপেক্ষা করছিলেন—ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর শেষে যেন তিনি বড় পর্দায় নিজের নামটা দেখেন।

কিন্তু নভেম্বরের ২৪ তারিখ সকালে, ইক্কিস-এর পোস্টার প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসে সংবাদ—ধর্মেন্দ্র আর নেই। গোয়ার হোটেল রুমে বসে রাঘবন অনুভব করেছিলেন, ভারতীয় সিনেমা তার অন্যতম রত্নকে হারাল।