অপরিচিত এক স্বাদে হইচই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই শরতে মৌচাষিরা এমন এক মধুর সন্ধান পেয়েছেন, যার স্বাদ একেবারেই অচেনা। ওয়াশিংটন ডিসির সুইস দূতাবাসের মৌচাকে কাজ করা মৌচাষি শন কেনেডি প্রথম স্বাদ নিয়েই বুঝে গেলেন—এটি সাধারণ মধু নয়। তাঁর ভাষায়, এই মধুতে নেই পরিচিত মিষ্টি কোমলতা; বরং দাদু-দিদিমার কাশি সর্দির টফির মতো স্বাদ।
লণ্ঠনফ্লাই আক্রমণ ও নতুন মধুর জন্ম
গ্রীষ্মজুড়ে ওয়াশিংটনে ব্যাপক আক্রমণ চালায় লাল-ডানাওয়ালা পাতাচোষা পোকা স্পটেড লণ্ঠনফ্লাই। গাছের রস খেয়ে যে আঠালো ও মিষ্টি স্তর তারা ফেলে যায়—তার নাম হানিডিউ, সহজ ভাষায় ‘পোকার পায়খানা’। দেরি গ্রীষ্মে যখন ফুলের রস কমে যায়, মৌমাছিরা সেই হানিডিউই সংগ্রহ করে ছাঁচে ঢেলে ডানা ঝাপটিয়ে জল কমিয়ে তৈরি করে ফেলে এক নতুন ধরনের মধু—গাঢ় রঙের, অদ্ভুত স্বাদের।

অজানা স্বাদের প্রতি বৈজ্ঞানিক আগ্রহ
২০১৪ সালে চীন থেকে পাথর পরিবহনের কার্গোতে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে লণ্ঠনফ্লাই। পেনসিলভানিয়া থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ মধুর কাহিনি এখন আন্তর্জাতিক আলোচনায়। কোপেনহেগেন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে নমুনা, আবার যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গায় এটি ‘ডুম ব্লুম’ নামে বিক্রি হয়।
আমেরিকান হানি টেস্টিং সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা কার্লা মারিনা মারকিসে বলেন, এই মধুর স্বাদ ধোঁয়াটে, হালকা নোনতা, রজনের মতো, আবার ফলের মতোও লাগে। বেশির ভাগের কাছে এটি “সবচেয়ে অদ্ভুত মধু” হলেও বিজ্ঞানীরা এর উপকারিতা খুঁজছেন।
চমক: মানুকা মধুর সমান ঔষধি গুণ?
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক রবিন আন্ডারউড ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরহাত ওজতুর্ক এখন এ মধুর চিকিৎসাগত গুণ নিয়ে কাজ করছেন। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এটি নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত ম্যানুকা মধুর মতোই শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারে।
তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন—লণ্ঠনফ্লাই উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই ‘স্টম্প অন সাইট’ অভিযান থামানো যাবে না।
মৌচাষিদের উদ্বেগ এবং নতুন বাস্তবতা
ডিসি বীকিপার্স অ্যালায়েন্স জানায়, স্থানীয় মৌচাষিদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল—এই মধু কি তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন নষ্ট করবে? শেষ পর্যন্ত খুব কম মৌচাকেই এটি পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, এর গন্ধ ধোঁয়াটে বারবিকিউয়ের মতো, কেউ বলেন ভেজা মোজার মতো কর্কশ।
যাঁদের মধুতে এই নতুন স্বাদ এসেছে, তাঁরা এটিকে পরিচিত করছেন—“ফল হানি” বলে।

ভোক্তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ক্যাপিটল হিলের একটি দোকানে যখন ডি.সি. হানি গাই ডেল ভস এক ক্রেতাকে নমুনা দিলেন, তিনি প্রথমে জানলেন না এটি ‘পোকা-তৈরি মধু’। স্বাদ নেওয়ার পর যখন সত্যিটা জানলেন, তখনও তিনি কিনতেই সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু বললেন, “বিষয়টা না বললেই হয়!”
বিশেষ সংস্করণ মধুর উন্মাদনা
শন কেনেডি তাঁর মধুকে নাম দিয়েছেন “স্পেশাল এডিশন ২০২৫”। জারে লাগানো সোনালি স্টিকারের মাঝে লাল-ডানাওয়ালা লণ্ঠনফ্লাইয়ের ছবি—এই অনন্য মধুর গল্পই যেন বলে দিচ্ছে।
মেটা বিবরণ (১৫৫ অক্ষরের মধ্যে)
লণ্ঠনফ্লাইয়ের হানিডিউ থেকে তৈরি নতুন গাঢ় মধু যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। স্বাদ অদ্ভুত, গবেষণায় মিলছে সম্ভাব্য ঔষধি গুণ।
সহজে কপি করার জন্য ট্যাগসমূহ
#লণ্ঠনফ্লাইমধু #মৌমাছি #মধুপুর #যুক্তরাষ্ট্র #ওয়াশিংটনডিসি #মৌচাষ #বিজ্ঞানগবেষণা #হানিডিউ #স্পেশালএডিশনমধু #মানুকারসম্ভাবনা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















