০৬:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
কংগ্রেস বৈঠকে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, শশী থারুর সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধ কেন জটিল? ক্ষমতার বৈষম্যই প্রধান বাধা রাডার উত্তেজনা ও চীনকে ঘিরে উদ্বেগ: টোকিও-ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা প্রধানদের ফোনালাপ চীনের খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার উদ্যোগ: সয়াবিন আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর পরিকল্পনা চীন–ফিলিপাইন বৈরিতা ‘ব্যতিক্রম হওয়া উচিত, স্বাভাবিক নয়’: মারকোস নরম মস্তিষ্ক-চিপ নিউরালিংকের বড় ইমপ্লান্ট চ্যালেঞ্জ সমাধানে নতুন সম্ভাবনা ইইউর ‘বৈষম্যমূলক’ ভর্তুকি তদন্তের বিরুদ্ধে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবাদ বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে ১৬ ব্যাংক থেকে ১৪৯ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পিনিং শিল্পে মহাসংকট: ৪০ শতাংশ মিল বন্ধ, চাকরি হারিয়েছেন এক লাখ কর্মী গাজীপুরে চুরির সন্দেহে যুবককে গাছে বেঁধে পেটানো: এক ব্যক্তি আটক

বেনিন ব্রোঞ্জ ফিরল নিজের ঘরে, শুরু নতুন বিরোধ

১২৮ বছর আগে ব্রিটিশ বাহিনী যে বেনিন ব্রোঞ্জ লুট করে নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর এক বড় অংশ অবশেষে নাইজেরিয়ায় ফিরেছে। দেশে ফিরলেও এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো এখন কোথায় রাখা হবে, কে দেখভাল করবে—এসব নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন টানাপোড়েন।


দীর্ঘদিনের দাবি, অবশেষে প্রত্যাবর্তন

ত্রিশের দশক থেকেই নাইজেরিয়া এসব ব্রোঞ্জ ফেরত চাইছিল। পশ্চিমা জাদুঘরগুলো মানতে রাজি হয় গত এক দশকে। জার্মানি, সুইডেন, ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক ব্রোঞ্জ ফিরেছে; আরও কয়েকশো আসবে আগামী বছর।

কিন্তু যেসব আধুনিক জাদুঘরে সেগুলো থাকার কথা, বাস্তবে সেগুলোর অবস্থা খুবই সাধারণ। না আছে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, না আছে ভালো আলোকসজ্জা।


মালিকানা বদলের পর হঠাৎ বদলে গেল পরিকল্পনা

২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ফেরত আসা ব্রোঞ্জগুলোর মালিকানা দিয়ে দেন বেনিন রাজপরিবারের প্রধান, ওবা এওয়ারে দ্বিতীয়ের হাতে। এই সিদ্ধান্তের পরই বদলে যায় সব পরিকল্পনা।

ওবা আগে থেকেই পশ্চিমা অনুদানে তৈরি MOWAA জাদুঘরের বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেন, এটি রাজপরিবার থেকে “আবার লুট করার চেষ্টা”। একসময় যেই জাদুঘর ব্রোঞ্জ প্রদর্শনের কথা ভাবছিল, সেটি এখন আধুনিক শিল্পের দিকে ঝুঁকেছে।

উদ্বোধনের দিন বিক্ষোভকারীরা এসে হৈচৈ করে, জানালায় আঘাত করে, অতিথিদের ভয় দেখায়—ফলে উদ্বোধনই স্থগিত হয়ে যায়।


ওবার স্বপ্ন: নতুন রাজকীয় জাদুঘর

ওবা চান ব্রোঞ্জগুলো তাঁর নিজস্ব “রয়্যাল মিউজিয়াম”-এ প্রদর্শিত হোক। এজন্য একটি পুরনো থিয়েটার ভবন সংস্কারের পরিকল্পনা চলছে। তিনি এটিকে এমনভাবে সাজাতে চান যাতে তরুণরা আগ্রহ নিয়ে আসে—মিউজিয়াম, থিয়েটার আর সিনেমার মতো মিশ্র পরিবেশ।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থ। পশ্চিমা দাতারা ইতিমধ্যে একবার জাদুঘরের জন্য অর্থ দিয়েছে, আর নাইজেরিয়ার স্থানীয় ধনীদের অনুদান বেশি যায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে—সংস্কৃতিতে নয়।


সরকারের ভূমিকায় নতুন সমঝোতা

নাইজেরিয়ার জাদুঘর পরিচালনা সংস্থার প্রধান অলুগবাইল হোলোওয়ে ওবার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছেন। সরকারই ব্রোঞ্জ দেখভাল করবে এবং ভবিষ্যৎ রয়্যাল মিউজিয়ামের কর্মী সরবরাহ করবে।

লাগোসের জাতীয় জাদুঘরে সদ্যফেরা ব্রোঞ্জ দেখে হোলোওয়ের মন্তব্য—
“যেন বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে আবার ফিরে পাওয়া।”

তিনি চান অর্থ সংগ্রহ বেশি হোক দেশের ভেতর থেকেই। তাঁর কথা—
“এটা আমাদের নিজেদের কাজ, বারবার পশ্চিমের কাছে হাত পাতার বিষয় নয়।”

এখন পর্যন্ত ব্রোঞ্জগুলো বিভিন্ন জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা চলছে। স্টোরেজ সুবিধা খুব উন্নত নয়, তবে কর্তৃপক্ষ বলছে ব্রোঞ্জ তো শত শত বছর আগেই এই আবহাওয়ায় টিকে ছিল।


সাধারণ মানুষের আগ্রহ—এখনো বড় প্রশ্ন

শিল্পী ভিক্টর এহিখামেনোর মতে, যারা বেনিন এলাকার নয়, তাদের অনেকেই ব্রোঞ্জকে নিজের ইতিহাস মনে করেন না। তাই মানুষকে আকর্ষণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বেনিন সিটির নতুন প্রদর্শনীতে প্রথম দিন ভিড় থাকলেও পরে দেখা যায়—গাইডরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শনার্থীর অপেক্ষায়।

তবে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা মুগ্ধ।
এক শিক্ষিকা, কুইন ইগ্নিনোমওয়ানহিয়া বললেন—
“লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এগুলো দেখেছিলাম। এখন নিজের দেশে ফিরেছে—এটাই আমার কাছে গর্বের।”

তাঁর ছেলে ম্যাক্স প্রথমবার মিউজিয়ামে এসে ছবি তুলতে ব্যস্ত। তার আশা—
“আরও ব্রোঞ্জ ফিরলে আরও নতুন কিছু দেখার সুযোগ হবে।”

#বেনিন_ব্রোঞ্জ #নাইজেরিয়া #ঐতিহ্য_ফিরে_পাওয়া #সাংস্কৃতিক_ইতিহাস #লুটকৃত_নিদর্শন #রাজকীয়_জাদুঘর #বেনিন_সিটি #আফ্রিকান_শিল্প #ঐতিহ্য_সংরক্ষণ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

কংগ্রেস বৈঠকে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, শশী থারুর সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট

বেনিন ব্রোঞ্জ ফিরল নিজের ঘরে, শুরু নতুন বিরোধ

০৩:৪১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

১২৮ বছর আগে ব্রিটিশ বাহিনী যে বেনিন ব্রোঞ্জ লুট করে নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর এক বড় অংশ অবশেষে নাইজেরিয়ায় ফিরেছে। দেশে ফিরলেও এই ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো এখন কোথায় রাখা হবে, কে দেখভাল করবে—এসব নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন টানাপোড়েন।


দীর্ঘদিনের দাবি, অবশেষে প্রত্যাবর্তন

ত্রিশের দশক থেকেই নাইজেরিয়া এসব ব্রোঞ্জ ফেরত চাইছিল। পশ্চিমা জাদুঘরগুলো মানতে রাজি হয় গত এক দশকে। জার্মানি, সুইডেন, ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক ব্রোঞ্জ ফিরেছে; আরও কয়েকশো আসবে আগামী বছর।

কিন্তু যেসব আধুনিক জাদুঘরে সেগুলো থাকার কথা, বাস্তবে সেগুলোর অবস্থা খুবই সাধারণ। না আছে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, না আছে ভালো আলোকসজ্জা।


মালিকানা বদলের পর হঠাৎ বদলে গেল পরিকল্পনা

২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ফেরত আসা ব্রোঞ্জগুলোর মালিকানা দিয়ে দেন বেনিন রাজপরিবারের প্রধান, ওবা এওয়ারে দ্বিতীয়ের হাতে। এই সিদ্ধান্তের পরই বদলে যায় সব পরিকল্পনা।

ওবা আগে থেকেই পশ্চিমা অনুদানে তৈরি MOWAA জাদুঘরের বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেন, এটি রাজপরিবার থেকে “আবার লুট করার চেষ্টা”। একসময় যেই জাদুঘর ব্রোঞ্জ প্রদর্শনের কথা ভাবছিল, সেটি এখন আধুনিক শিল্পের দিকে ঝুঁকেছে।

উদ্বোধনের দিন বিক্ষোভকারীরা এসে হৈচৈ করে, জানালায় আঘাত করে, অতিথিদের ভয় দেখায়—ফলে উদ্বোধনই স্থগিত হয়ে যায়।


ওবার স্বপ্ন: নতুন রাজকীয় জাদুঘর

ওবা চান ব্রোঞ্জগুলো তাঁর নিজস্ব “রয়্যাল মিউজিয়াম”-এ প্রদর্শিত হোক। এজন্য একটি পুরনো থিয়েটার ভবন সংস্কারের পরিকল্পনা চলছে। তিনি এটিকে এমনভাবে সাজাতে চান যাতে তরুণরা আগ্রহ নিয়ে আসে—মিউজিয়াম, থিয়েটার আর সিনেমার মতো মিশ্র পরিবেশ।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থ। পশ্চিমা দাতারা ইতিমধ্যে একবার জাদুঘরের জন্য অর্থ দিয়েছে, আর নাইজেরিয়ার স্থানীয় ধনীদের অনুদান বেশি যায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে—সংস্কৃতিতে নয়।


সরকারের ভূমিকায় নতুন সমঝোতা

নাইজেরিয়ার জাদুঘর পরিচালনা সংস্থার প্রধান অলুগবাইল হোলোওয়ে ওবার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছেন। সরকারই ব্রোঞ্জ দেখভাল করবে এবং ভবিষ্যৎ রয়্যাল মিউজিয়ামের কর্মী সরবরাহ করবে।

লাগোসের জাতীয় জাদুঘরে সদ্যফেরা ব্রোঞ্জ দেখে হোলোওয়ের মন্তব্য—
“যেন বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে আবার ফিরে পাওয়া।”

তিনি চান অর্থ সংগ্রহ বেশি হোক দেশের ভেতর থেকেই। তাঁর কথা—
“এটা আমাদের নিজেদের কাজ, বারবার পশ্চিমের কাছে হাত পাতার বিষয় নয়।”

এখন পর্যন্ত ব্রোঞ্জগুলো বিভিন্ন জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা চলছে। স্টোরেজ সুবিধা খুব উন্নত নয়, তবে কর্তৃপক্ষ বলছে ব্রোঞ্জ তো শত শত বছর আগেই এই আবহাওয়ায় টিকে ছিল।


সাধারণ মানুষের আগ্রহ—এখনো বড় প্রশ্ন

শিল্পী ভিক্টর এহিখামেনোর মতে, যারা বেনিন এলাকার নয়, তাদের অনেকেই ব্রোঞ্জকে নিজের ইতিহাস মনে করেন না। তাই মানুষকে আকর্ষণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বেনিন সিটির নতুন প্রদর্শনীতে প্রথম দিন ভিড় থাকলেও পরে দেখা যায়—গাইডরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দর্শনার্থীর অপেক্ষায়।

তবে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা মুগ্ধ।
এক শিক্ষিকা, কুইন ইগ্নিনোমওয়ানহিয়া বললেন—
“লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এগুলো দেখেছিলাম। এখন নিজের দেশে ফিরেছে—এটাই আমার কাছে গর্বের।”

তাঁর ছেলে ম্যাক্স প্রথমবার মিউজিয়ামে এসে ছবি তুলতে ব্যস্ত। তার আশা—
“আরও ব্রোঞ্জ ফিরলে আরও নতুন কিছু দেখার সুযোগ হবে।”

#বেনিন_ব্রোঞ্জ #নাইজেরিয়া #ঐতিহ্য_ফিরে_পাওয়া #সাংস্কৃতিক_ইতিহাস #লুটকৃত_নিদর্শন #রাজকীয়_জাদুঘর #বেনিন_সিটি #আফ্রিকান_শিল্প #ঐতিহ্য_সংরক্ষণ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট