ব্রডওয়েতে ফিরে এলো জর্ডান হ্যারিসনের অদ্ভুত, চিন্তাশীল ও অস্বস্তিকরভাবে সময়োপযোগী নাটক ‘মার্জোরি প্রাইম’। প্রযুক্তি আর স্মৃতির দ্বন্দ্বে তৈরি এই পারিবারিক গল্প যেন আমাদের ভবিষ্যৎকে আগেভাগেই আয়নায় দেখিয়ে দেয়।
এআই অবয়বের সঙ্গে একটি বয়স্ক মহিলার আলাপ
নাটকের শুরুতেই ওয়াল্টার নামের এক সুদর্শন তরুণ জানায়, সে যার সঙ্গে কথা বলে ঠিক তার মতোই শোনায়। পরে জানা যায়, সে মানুষ নয়—একটি “প্রাইম”, মানুষের স্মৃতি-নির্ভর এআই অবয়ব। ৮৫ বছরের মার্জোরিকে সঙ্গ দিতে তার মেয়ে টেস আর জামাতা জন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। ওয়াল্টার ছিল মার্জোরির প্রয়াত স্বামী, আর তার ডিজিটাল সংস্করণ ধীরে ধীরে আরও বাস্তব হতে থাকে স্মৃতির খণ্ডে খণ্ডে সাজানো তথ্যের মাধ্যমে।
মার্জোরির স্মৃতি ঝাপসা, সম্পর্ক আরও জটিল
অস্কার–মনোনীত জুন স্কুইব ৯৬ বছর বয়সে মঞ্চ কাঁপানো অভিনয়ে দেখিয়েছেন, বয়স বাড়লেও সংবেদন, রসবোধ আর রাগের ঝলক এখনও কীভাবে বেঁচে থাকে। টেসের সঙ্গে তার সম্পর্ক টানাপড়েনের, আর মায়ের এই নতুন ডিজিটাল সঙ্গীকে তিনি সন্দেহের চোখে দেখেন। প্রশ্ন ওঠে—এই সঙ্গ মানুষকে জাগ্রত রাখে, নাকি শান্ত করে নিঃসঙ্গতার ভেতরে?

এআই কি স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, না মানুষের জায়গা দখল করে?
একসময় প্রকাশ পায় বহু দুঃখের পারিবারিক ইতিহাস—টেসের ভাই ড্যামিয়ানের মৃত্যু, মার্জোরির ভুলে যাওয়া স্মৃতি, আর টেসের নিজের ক্ষত-বিক্ষত অনুভূতি। মার্জোরির মৃত্যুর পর টেস নিজেই তৈরি করে মায়ের একটি প্রাইম সংস্করণ। যেন প্রযুক্তির সাহায্যে সে হারানো সম্পর্ককে আবার নতুন করে লিখতে চায়।
মঞ্চে তীব্র বাস্তবতা আর ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা
সিন্থিয়া নিকসন, ড্যানি বারস্টেইন এবং ক্রিস্টোফার লোভেলের অভিনয় নাটকটিকে আবেগ, বুদ্ধি আর ভয়ের এক অনন্য মিশ্রণে পরিণত করেছে। প্রাইমদের অদ্ভুত মানুষসদৃশ আচরণ, মাঝে মাঝে তথ্য না পেয়ে থেমে যাওয়া—সব মিলিয়ে নাটকটি মনে করিয়ে দেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমা আর বিপদের দিকগুলো।
নাটকের এক পর্যায়ে টেস মন্তব্য করে—মানুষ কখনো আগ্রহী হয়, কখনো হয় না; তবু এআই সব সময় আগ্রহী হওয়ার ভান করে। তাই মানুষ সহজেই প্রতারিত হতে পারে। এই মুহূর্তে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যে চ্যাটবট ব্যবহার করছে, সেসব ভেবেই যেন এই সংলাপ আজ আরও বেশি ভয়ঙ্কর।
শেষ দৃশ্য আমাদের সামনে যে প্রশ্ন তুলে ধরে
যদি প্রযুক্তি নিখুঁত মানব-ক্লোন বানায়, তবে তারা কি সত্যিকারের মানুষ হবে? নাকি শুধু চকচকে, শান্ত, অনুভূতিহীন এক খোলস? নাটকটি বলছে—মানুষের হাসি, ভুল, তীক্ষ্ণতা আর দুঃখই আমাদের মানুষ বানায়। তাই এআই–মানুষ কখনোই মানুষ হবে না।
হেইস থিয়েটারে চলছে ‘মার্জোরি প্রাইম’; শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















