মানুষের ইতিহাসে আগুন শুধু আলো বা উষ্ণতার উৎস নয়, সভ্যতার চালিকাশক্তি। নতুন গবেষণা বলছে, মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল ধারণার চেয়েও অনেক আগে। ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে একটি পুরোনো কাদামাটির খনি থেকে পাওয়া প্রমাণ সেই গল্পই নতুন করে লিখছে।
আগুন আর মানুষের বিবর্তন
চাকা আবিষ্কারের পাশাপাশি আগুন জ্বালানো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে চেনা মুহূর্তগুলোর একটি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরই রান্না সম্ভব হয়, মুক্ত হয় বাড়তি পুষ্টি, ছোট হতে থাকে অন্ত্র। গবেষকদের মতে, এই পরিবর্তনই বড় মস্তিষ্কের মানুষের বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তাই আগুন মানুষ কীভাবে আয়ত্তে আনল, তা জানা নৃতত্ত্ববিদদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

ইস্ট ফার্মে মিলল বিস্ময়কর ইঙ্গিত
পূর্ব ইংল্যান্ডের বার্নহামের ইস্ট ফার্ম এলাকায় পাওয়া স্তরগুলোর বয়স প্রায় চার লাখ বছর। সে সময় সেখানে আধুনিক মানুষ নয়, বাস করত নিয়ানডারথালরা। এখান থেকে পাওয়া পাথরের যন্ত্রপাতি জানায়, জায়গাটি অন্তত দুই দফা বসতির সাক্ষী। দ্বিতীয় দফার বসতিতেই মিলেছে আগুন জ্বালানোর স্পষ্ট চিহ্ন।
মানুষের হাতেই আগুন
মাটির কিছু অংশ এমনভাবে পোড়া যে তা স্বাভাবিক দাবানলের ফল নয়। আশপাশে পাওয়া পাথরের যন্ত্রেও রয়েছে তাপে পোড়ার দাগ। গবেষকেরা চৌম্বক ও রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, এই তাপ ছিল পরিকল্পিত মানব আগুনের ফল। পরীক্ষাগারে একই ধরনের মাটিকে দীর্ঘ সময় উচ্চ তাপে রেখে মিল পাওয়া গেছে সেই প্রাচীন পোড়া মাটির সঙ্গে।

পাইরাইটের ঝিলিক
সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার দুটি পাইরাইট পাথর। এই খনিজ পাথরে আঘাত করলে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়। এলাকায় স্বাভাবিকভাবে পাইরাইট না থাকায় গবেষকেরা নিশ্চিত, এগুলো দূর থেকে এনে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। অর্থাৎ মানুষ শুধু আগুন ধরে রাখেনি, নতুন করে আগুন তৈরি করতেও শিখেছিল।
ইতিহাসের সময়রেখা বদলে গেল
আফ্রিকায় আগুন ব্যবহারের প্রমাণ মিললেও এত দিন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন জ্বালানোর সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন ছিল প্রায় পঞ্চাশ হাজার বছরের। ইস্ট ফার্মের এই আবিষ্কার সেই সময়সীমা বহু গুণ পিছিয়ে দিল। আগুনের জন্মকথা তাই আজ আর কার্টুনের দৃশ্য নয়, শক্ত প্রমাণে ভর করে নতুন ইতিহাস।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















