উপহার মোড়ানোর কাজটাকে আমরা যতই ছোটখাটো ঝামেলা ভাবি, বড়দিন এলেই সেটাই হয়ে ওঠে আবেগ, বিরক্তি আর আনন্দের এক লুকোনো নাট্যমঞ্চ।
মোড়ানোর বিরক্তি আর শুরু
আঠালো টেপের কোণা খুঁজতে খুঁজতে কত সময় যে নষ্ট হয়, তার হিসেব নেই। টেপ উঠল তো কুণ্ডলী পাকিয়ে আবার ভাঁজ পড়ে। কাগজ কেটে হয় খুব বেশি, নয় খুব কম। বাড়তি কাগজ ফেলতেও মন চায় না, ঢুকে যায় পুরোনো বড়দিনের কাগজে ঠাসা কোনো ড্রয়ারে। এই অগোছালো শুরুর মধ্যেই শুরু হয় বড়দিনের উপহার নাটকের প্রথম অঙ্ক।

একশো বছরেরও আগে, ক্যানসাস সিটির হল ভাইদের হাতে জন্ম নিয়েছিল সাজানো উপহার কাগজ। তখন টিস্যু কাগজের অভাব, তাই খামের ভেতরের নকশা করা কাগজই হয়ে উঠল মোড়ক। মন্দার সময়ে সাধারণ উপহারকেও আলাদা করে তুলেছিল এই কাগজ। আজ বড়দিন ঘিরে উপহার মোড়ানোর শিল্পে খরচ হয় বিপুল অর্থ আর অগণিত গাছ। তবু প্রতিটি কাগজ যেন একটি গল্প বলে।
যত্নের প্রমাণ
মোড়ানোর কাজটা ক্লান্তিকর, তবু সেটাই প্রমাণ করে যত্ন। অনলাইনে ক্লিক করে কেনা উপহার হলেও, ভাঁজ আর কোণায় লেগে থাকা বিরক্তি জানান দেয়, প্রাপকের প্রতি মমতা আছে। কখনো আবার বাড়তি সাজের পরামর্শ আসে, হাতে বানানো ছোট মালা বা অলংকার যোগ করার কথা, যা শুনে অনেকেই হাসেন।
গাছের নিচে জমা হওয়া মোড়ানো উপহারের স্তূপ নিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় অঙ্ক। অদ্ভুত আকারের উপহার কৌতূহল বাড়ায়। স্পষ্ট জিনিসও রহস্যে ঢাকা থাকে। বই হলেও কোন বই, মোজা হলেও কতটা রুচিসম্মত, তা জানা যায় না মোড়ক খোলা পর্যন্ত।

খোলার মুহূর্ত
খোলা হয় তৃতীয় অঙ্কে। কেউ ধীরে ধীরে কাগজ ছাড়ায়, আবার কেউ উন্মাদনার সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলে। শিশুদের কাছে তো কাগজ ছেঁড়াই আসল আনন্দ। ছোটদের জন্য পুরোনো খেলনাও নতুন হয়ে ওঠে কাগজের জাদুতে।
প্রতিক্রিয়ার চূড়া
চতুর্থ অঙ্কে আসে সত্যিকারের পরীক্ষা। এক মুহূর্তের জন্য শুধু প্রাপকই জানে ভেতরে কী আছে, বাকিরা দেখে তার মুখ। খুশি, হতাশা, বিস্ময় সবই তখন প্রকাশ পায়। শিশুরা এখানে সবচেয়ে সৎ, অপছন্দ হলে লুকোতে পারে না।
শেষ অঙ্কের হিসাব
সবশেষে মেঝেতে ছড়ানো কাগজ কুড়োনোর পালা। হরিণ ছাপা টুকরোগুলো যেন যুদ্ধশেষের ধ্বংসাবশেষ। তখনই আসে বর্জ্য আর পরিবেশের ভাবনা। তবু সাহিত্যের এক বিখ্যাত বড়দিনের গল্প মনে করিয়ে দেয়, উপহারের চেয়ে অনুভূতিই বড়। মোড়কের ভেতর থাকা চমক আর ভালোবাসাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















