মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্ন্যান্সের উদ্যোগে ‘ফিরে দেখা বিজয় ’৭১’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নির্বাচিত অংশ প্রদর্শন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও স্বাধীনতার সংগ্রামের স্মৃতিচারণ দিয়ে আলোচনা পর্বের সূচনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা
নিউজিল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়ে ইঞ্জিনিয়ার সফিকুর রহমান অনু মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই ঘোষণাই বাঙালিকে চূড়ান্ত সংগ্রামের পথে এগিয়ে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অকল্যান্ড থেকে অংশ নেওয়া প্রফেসর ড. শ্যামল দাস মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে এসব শক্তির অবদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে।

গণহত্যার বিচার ও স্বীকৃতির দাবি
মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জিসিডিজির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, এই অপরাধগুলোর বিচার এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, যা দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রদর্শনের পর প্রফেসর ড. এম এ রশিদ মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেন। নিউজিল্যান্ড থেকে যুক্ত হয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ৫ আগস্টের পর জামায়াত ও জঙ্গি সমর্থিত ইউনূস সরকার একই কৌশলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
বাকশাল ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন
কানাডার টরন্টো থেকে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনিরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশে বাকশাল গঠনের তাৎপর্য ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তরুণ প্রজন্ম বাকশাল নিয়ে আরও গবেষণা করবে এবং এ বিষয়ে উত্থাপিত সমালোচনার যুক্তিসংগত জবাব দেবে।
সংস্কৃতি ও সাম্প্রতিক আঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরিফা রহমান রুমা বলেন, ১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তানি শাসকরা যেভাবে বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল, ৫ আগস্টের পর একইভাবে বাঙালি সংস্কৃতির নানা ধারায় ধারাবাহিক আঘাত আসছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের ওপর হামলার উদাহরণ তুলে ধরেন।

নারীর ভূমিকা ও বর্তমান বাস্তবতা
সবশেষে বাংলাদেশ থেকে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী রোকেয়া প্রাচী। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নারীর ত্যাগ ও বীরত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালে নারীরা যেভাবে সরাসরি সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, বর্তমান সময়েও সেই ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের অপেক্ষায় বাংলাদেশের নারী সমাজ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, একাত্তরের মতোই স্বাধীন বাংলাদেশে নারী সমাজ আজও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, যার দ্রুত অবসান জরুরি। অবৈধ জঙ্গি সমর্থক ইউনূস সরকারকে বিদায় করতে না পারলে এই নির্যাতন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা করেন জিসিডিজির ডিরেক্টর ডা. কাজী মাসুদ। অনুষ্ঠানটি জিসিডিজির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















