থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিতর্কিত সীমান্তে সংঘর্ষ নতুন করে তীব্র হয়েছে। মঙ্গলবার দুই দেশই জানিয়ে দিয়েছে, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা কোনো ছাড় দেবে না। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে উত্তেজনা বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে।
ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ
সোমবারের নতুন সংঘর্ষের দায় নিয়ে দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি আদৌ টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হয়েছে।
হুন সেনের পাল্টা আক্রমণের ব্যাখ্যা
কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মান দেখাতে দেশটি চব্বিশ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিল এবং ওই সময়ে সীমান্ত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর রাতের আঁধারে থাই বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানান, শান্তি কম্বোডিয়ার প্রয়োজন, কিন্তু ভূখণ্ড রক্ষায় তারা বাধ্য হয়েই প্রতিরোধে নামছে। তার দাবি, শক্ত প্রতিরক্ষা ও অস্ত্রের কারণে সীমান্তে কম্বোডিয়ার বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
থাইল্যান্ডের সামরিক তৎপরতা
থাইল্যান্ডের সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে। ত্রাত প্রদেশে নৌবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি অভিযান শিগগিরই শেষ হওয়ার কথা, যার লক্ষ্য সীমান্ত এলাকা থেকে কম্বোডীয় সেনাদের হটানো। ব্যাংককের অভিযোগ, কম্বোডিয়া গোলন্দাজ কামান, রকেট লঞ্চার এবং বোমা বহনকারী ড্রোন ব্যবহার করে থাই বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।

সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল সুরাসান্ত কংসিরি বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় প্রয়োজনে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বক্তব্যে স্পষ্ট, এই প্রশ্নে থাইল্যান্ড কোনো আপসের পথে হাঁটবে না।
বেসামরিক হতাহত ও পাল্টা অভিযোগ
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর ও বেআইনি হামলার অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, সোমবার থেকে অন্তত নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং বিশজন গুরুতর আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ড জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদের তিনজন সেনা নিহত এবং উনত্রিশজন আহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, সার্বভৌমত্বের অজুহাতে বেসামরিক গ্রামে সামরিক হামলা চালানো উচিত নয়। তার এই মন্তব্য সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
গণ উচ্ছেদ ও পুরনো ক্ষতের স্মৃতি
উভয় দেশই জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েক লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত মাসে এক থাই সেনা স্থলমাইনে আহত হওয়ার পর উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ব্যাংককের অভিযোগ, ওই মাইনটি সম্প্রতি কম্বোডিয়া পেতে রেখেছিল। সোমবারের সংঘর্ষ জুলাইয়ের পর সবচেয়ে ভয়াবহ, তখন পাঁচ দিনের গোলাবর্ষণে অন্তত আটচল্লিশ জন নিহত এবং তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল, এরপর ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আসে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















