০২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা দক্ষিণ চীন সাগরে ভেসে থেকেও বেঁচে ফিরলেন ইন্দোনেশীয় জেলে, দশ দিনের লড়াই শেষে সারাওয়াকে উদ্ধার যুদ্ধের মাঝেও জীবন বাঁচানোর লড়াই: সুদানের হাসপাতালের ভেতরের কঠিন বাস্তবতা বাংলাদেশী, পাকিস্তানীসহ ৪৯ জন আটক মালয়েশিয়ায় রোবটের হাতে সবুজ বিপ্লব, নগর কৃষিতে নতুন দিগন্ত লাগোসের নাচ থামেনি মন্দার মধ্যেও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় কাঁপছে রাশিয়ার তেল সাম্রাজ্য, বিশ্ব জ্বালানি মানচিত্রে বড় পালাবদলের ইঙ্গিত বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ কেন বন্ধ করলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার? বিদেশের অফিসেও ভারতীয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয়: প্যারিসে কাজ করা যুবকের ভিডিও ঘিরে তুমুল বিতর্ক সিডনির বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে রক্তপাত, বাবা–ছেলের হামলায় নিহত ষোল

সিডনির বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে রক্তপাত, বাবা–ছেলের হামলায় নিহত ষোল

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার সাক্ষী হলো সিডনি। বন্ডি বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব চলাকালে বন্দুকধারীদের হামলায় এক শিশুসহ মোট ষোল জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অন্তত চল্লিশ জন। অস্ট্রেলীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলার পেছনে ছিল বাবা ও ছেলে।

ঘটনার ভয়াবহতা

রোববার সন্ধ্যায় সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি বিচের পাশের একটি ছোট পার্কে হনুক্কা উৎসব চলছিল। সেখানে প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হঠাৎ গুলির শব্দে পুরো এলাকা আতঙ্কে ভরে যায়। প্রায় দশ মিনিট ধরে চলা এই হামলায় মানুষজন সৈকত ছেড়ে চারদিকে ছুটতে থাকে। বালু ও আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক আর চিৎকার।

বাবা ও ছেলের পরিচয়

পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। পঞ্চাশ বছর বয়সী বাবা ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আর চব্বিশ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ষোল জনে। নিহতদের বয়স দশ থেকে সাতাশি বছরের মধ্যে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক শিশু, একজন ধর্মগুরু এবং হামলাকারীদের একজন।

তদন্ত ও অস্ত্রের তথ্য

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার জানান, ঘটনাটিকে লক্ষ্যভিত্তিক ইহুদিবিরোধী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিহত বাবা দুই হাজার পনেরো সাল থেকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী ছিলেন এবং তাঁর কাছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের হাতে রাইফেল ও শটগান দেখা গেছে। পুলিশ তাঁদের নাগরিকত্ব প্রকাশ করেনি এবং তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

নীরব বন্ডি আর শোকের আবহ

ঘটনার পরদিন সকালে বন্ডি বিচ ছিল অস্বাভাবিক নীরব। যেখানে প্রতিদিন সাঁতারু, সার্ফার আর দৌড়বিদে ভরে থাকে, সেখানে ছিল শুধুই শোক। বন্ডি প্যাভিলিয়নের সামনে ফুল, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের পতাকা দিয়ে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। মানুষ এসে নীরবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী।

নাগরিকের সাহসী ভূমিকা

এই হামলার মধ্যেই একজন সাধারণ মানুষ অস্ত্রধারীকে ঝাঁপিয়ে ধরে নিরস্ত্র করেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপে বহু প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর চিকিৎসা সহায়তায় অনলাইনে তহবিল সংগ্রহে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে।

সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি একে জাতির জন্য অন্ধকার মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ইহুদিবিদ্বেষ ও সন্ত্রাস দমনে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে লন্ডন, নিউইয়র্কসহ বড় শহরগুলোতে হনুক্কা উপলক্ষে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

ইহুদিবিদ্বেষ ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিরোধী হামলার সংখ্যা বেড়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বাস করেন, যাদের বড় অংশ সিডনির পূর্বাঞ্চলে। এই হামলা সেই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

#বন্ডি_বিচ #অস্ট্রেলিয়া #গুলিবর্ষণ #ইহুদি_উৎসব #হনুক্কা #সন্ত্রাস #বিশ্বসংবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা

সিডনির বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে রক্তপাত, বাবা–ছেলের হামলায় নিহত ষোল

১১:৫৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার সাক্ষী হলো সিডনি। বন্ডি বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব চলাকালে বন্দুকধারীদের হামলায় এক শিশুসহ মোট ষোল জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অন্তত চল্লিশ জন। অস্ট্রেলীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলার পেছনে ছিল বাবা ও ছেলে।

ঘটনার ভয়াবহতা

রোববার সন্ধ্যায় সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি বিচের পাশের একটি ছোট পার্কে হনুক্কা উৎসব চলছিল। সেখানে প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হঠাৎ গুলির শব্দে পুরো এলাকা আতঙ্কে ভরে যায়। প্রায় দশ মিনিট ধরে চলা এই হামলায় মানুষজন সৈকত ছেড়ে চারদিকে ছুটতে থাকে। বালু ও আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক আর চিৎকার।

বাবা ও ছেলের পরিচয়

পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। পঞ্চাশ বছর বয়সী বাবা ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আর চব্বিশ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ষোল জনে। নিহতদের বয়স দশ থেকে সাতাশি বছরের মধ্যে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক শিশু, একজন ধর্মগুরু এবং হামলাকারীদের একজন।

তদন্ত ও অস্ত্রের তথ্য

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার জানান, ঘটনাটিকে লক্ষ্যভিত্তিক ইহুদিবিরোধী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিহত বাবা দুই হাজার পনেরো সাল থেকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারী ছিলেন এবং তাঁর কাছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ভিডিও ফুটেজে হামলাকারীদের হাতে রাইফেল ও শটগান দেখা গেছে। পুলিশ তাঁদের নাগরিকত্ব প্রকাশ করেনি এবং তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

নীরব বন্ডি আর শোকের আবহ

ঘটনার পরদিন সকালে বন্ডি বিচ ছিল অস্বাভাবিক নীরব। যেখানে প্রতিদিন সাঁতারু, সার্ফার আর দৌড়বিদে ভরে থাকে, সেখানে ছিল শুধুই শোক। বন্ডি প্যাভিলিয়নের সামনে ফুল, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের পতাকা দিয়ে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। মানুষ এসে নীরবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী।

নাগরিকের সাহসী ভূমিকা

এই হামলার মধ্যেই একজন সাধারণ মানুষ অস্ত্রধারীকে ঝাঁপিয়ে ধরে নিরস্ত্র করেন। তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপে বহু প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। তিনি নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁর চিকিৎসা সহায়তায় অনলাইনে তহবিল সংগ্রহে বিপুল অর্থ জমা পড়েছে।

সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি একে জাতির জন্য অন্ধকার মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ইহুদিবিদ্বেষ ও সন্ত্রাস দমনে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে লন্ডন, নিউইয়র্কসহ বড় শহরগুলোতে হনুক্কা উপলক্ষে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

ইহুদিবিদ্বেষ ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিরোধী হামলার সংখ্যা বেড়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রবণতা আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বাস করেন, যাদের বড় অংশ সিডনির পূর্বাঞ্চলে। এই হামলা সেই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

#বন্ডি_বিচ #অস্ট্রেলিয়া #গুলিবর্ষণ #ইহুদি_উৎসব #হনুক্কা #সন্ত্রাস #বিশ্বসংবাদ