০২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা দক্ষিণ চীন সাগরে ভেসে থেকেও বেঁচে ফিরলেন ইন্দোনেশীয় জেলে, দশ দিনের লড়াই শেষে সারাওয়াকে উদ্ধার যুদ্ধের মাঝেও জীবন বাঁচানোর লড়াই: সুদানের হাসপাতালের ভেতরের কঠিন বাস্তবতা বাংলাদেশী, পাকিস্তানীসহ ৪৯ জন আটক মালয়েশিয়ায় রোবটের হাতে সবুজ বিপ্লব, নগর কৃষিতে নতুন দিগন্ত লাগোসের নাচ থামেনি মন্দার মধ্যেও ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় কাঁপছে রাশিয়ার তেল সাম্রাজ্য, বিশ্ব জ্বালানি মানচিত্রে বড় পালাবদলের ইঙ্গিত বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ কেন বন্ধ করলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার? বিদেশের অফিসেও ভারতীয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয়: প্যারিসে কাজ করা যুবকের ভিডিও ঘিরে তুমুল বিতর্ক সিডনির বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে রক্তপাত, বাবা–ছেলের হামলায় নিহত ষোল

বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা

বৈশ্বিক সংকটের বাস্তব চিত্র

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি তিনজন নারীর একজন—বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৮৪ কোটি নারী—নিজের জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সংখ্যা কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং জীবনের সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হওয়ার বাস্তব চিত্র। জাতিসংঘ নারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, যা বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ২ শতাংশের সমান। কিছু দেশে এই ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা অনেক দেশের এক বছরের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের চেয়েও বেশি।

পরিসংখ্যানের আড়ালে নারীর জীবন

প্রতিটি পরিসংখ্যানের আড়ালে রয়েছেন একজন নারী, যার নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর কাজ করা, শেখা ও স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ। শারীরিক ও মানসিক—এই দুই ধরনের নিরাপত্তাই ব্যক্তিগত অগ্রগতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি। অর্থনীতি গড়ে ওঠে মানুষের হাতেই, আর মানুষ তখনই বিকশিত হতে পারে, যখন তারা নিরাপদ থাকে এবং নিজেকে নিরাপদ মনে করে। নিরাপত্তার অভাব শুধু ব্যক্তিগত ভয় তৈরি করে না, এটি সমাজের উৎপাদনশীলতা ও সম্ভাবনাকেও সীমিত করে দেয়।

সহিংসতার প্রভাব পরিবার থেকে অর্থনীতি পর্যন্ত

সহিংসতা এই ভিত্তিকেই ভেঙে দেয়। এর প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকে না; পরিবার, সমাজ এবং পুরো অর্থনীতির ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করে। সহিংসতার কারণে পড়াশোনা করা, কাজ করা এমনকি ঘরে, জনসমাগমে বা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। হয়রানি—যা এখনো অত্যন্ত সাধারণ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অন্যতম রূপ—নারীদের আকাঙ্ক্ষা ও আত্মবিশ্বাসকে স্তব্ধ করে দেয় এবং উৎপাদনশীলতা, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলে।

গবেষণায় উঠে আসা অর্থনৈতিক ক্ষতি

বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এই ক্ষতির বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। পাপুয়া নিউগিনির একটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কারণে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি ও কর্মী পরিবর্তনের ফলে নিয়োগকর্তাদের বার্ষিক বেতন ব্যয়ের ৩ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। পেরুতে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির কারণে উৎপাদনশীলতা ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এর অর্থ প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের উৎপাদন ক্ষতি, যা উন্নয়নের গতি শ্লথ করে এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেয়।

পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক উদ্যোগ

তবে এই অন্ধকার বাস্তবতার মধ্যেও আশার জায়গা রয়েছে। ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে সঠিক নীতি, সমন্বিত উদ্যোগ এবং সামাজিক অঙ্গীকার থাকলে পরিবর্তন সম্ভব। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সরকার ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্বে এমন উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যায় এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্বব্যাংকের কৌশল ও বাস্তবায়ন

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জেন্ডার কৌশলের আওতায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন ও সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং ভুক্তভোগী সহায়তা কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে ৯০টির বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় কাজ করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ প্রমাণ করে যে সহিংসতার কোনো স্থান নেই এবং নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে সবার জন্য সমবণ্টিত প্রবৃদ্ধির পথ খুলে যায়।

বাংলাদেশে ব্রাকের ভূমিকা

এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোগও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ব্রাক দীর্ঘদিন ধরে কিশোরী ও নারীদের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ সামাজিক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমাতে কাজ করে যাচ্ছে। ব্রাকের কর্মসূচিগুলো নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব উদ্যোগ দেখায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে নারীরা শুধু নিজেদের জীবনই বদলান না, বরং পরিবার ও সমাজের উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত হন।

নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নটি কেবল সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয় নয়; এটি সরাসরি অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গেও যুক্ত। যখন নারীরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন, আয় করতে পারেন এবং শিশুসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার পান, তখন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি কমে এবং সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। জ্বালানি, পরিবহন ও নগর নিরাপত্তার মতো খাতে বিনিয়োগ নারীদের জীবনে সরাসরি ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের একক দায়িত্ব নয়। এর জন্য বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা দেখায়, কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, অনুপস্থিতি কমে এবং নারী কর্মীদের ধরে রাখা সহজ হয়।

এগিয়ে যাওয়ার পথ

এই ১৬ দিনের আন্দোলনের সময় একটি বিষয় নতুন করে স্মরণ করা জরুরি—নারীরা যখন নিরাপদভাবে বাঁচতে ও কাজ করতে পারেন, তখন পরিবার, ব্যবসা ও অর্থনীতি—সবাই লাভবান হয়। তবে এই অগ্রগতি একা সম্ভব নয় এবং একা টেকসইও হবে না। প্রমাণিত সমাধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান ঘটে।

একসঙ্গে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে নিরাপত্তাই হবে সুযোগের মূল চাবিকাঠি, আর প্রতিটি নারী ও প্রতিটি সম্প্রদায় তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা

বিশ্বজুড়ে যৌন সহিংসতায় আক্রান্ত ৮৪ কোটি নারী: নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্রাকের ভূমিকা

১২:৩৬:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বৈশ্বিক সংকটের বাস্তব চিত্র

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি তিনজন নারীর একজন—বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৮৪ কোটি নারী—নিজের জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই সংখ্যা কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং জীবনের সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন হওয়ার বাস্তব চিত্র। জাতিসংঘ নারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, যা বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ২ শতাংশের সমান। কিছু দেশে এই ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা অনেক দেশের এক বছরের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের চেয়েও বেশি।

পরিসংখ্যানের আড়ালে নারীর জীবন

প্রতিটি পরিসংখ্যানের আড়ালে রয়েছেন একজন নারী, যার নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর কাজ করা, শেখা ও স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ। শারীরিক ও মানসিক—এই দুই ধরনের নিরাপত্তাই ব্যক্তিগত অগ্রগতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি। অর্থনীতি গড়ে ওঠে মানুষের হাতেই, আর মানুষ তখনই বিকশিত হতে পারে, যখন তারা নিরাপদ থাকে এবং নিজেকে নিরাপদ মনে করে। নিরাপত্তার অভাব শুধু ব্যক্তিগত ভয় তৈরি করে না, এটি সমাজের উৎপাদনশীলতা ও সম্ভাবনাকেও সীমিত করে দেয়।

সহিংসতার প্রভাব পরিবার থেকে অর্থনীতি পর্যন্ত

সহিংসতা এই ভিত্তিকেই ভেঙে দেয়। এর প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ থাকে না; পরিবার, সমাজ এবং পুরো অর্থনীতির ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করে। সহিংসতার কারণে পড়াশোনা করা, কাজ করা এমনকি ঘরে, জনসমাগমে বা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। হয়রানি—যা এখনো অত্যন্ত সাধারণ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অন্যতম রূপ—নারীদের আকাঙ্ক্ষা ও আত্মবিশ্বাসকে স্তব্ধ করে দেয় এবং উৎপাদনশীলতা, মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে ফেলে।

গবেষণায় উঠে আসা অর্থনৈতিক ক্ষতি

বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এই ক্ষতির বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। পাপুয়া নিউগিনির একটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কারণে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি ও কর্মী পরিবর্তনের ফলে নিয়োগকর্তাদের বার্ষিক বেতন ব্যয়ের ৩ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। পেরুতে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির কারণে উৎপাদনশীলতা ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এর অর্থ প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের উৎপাদন ক্ষতি, যা উন্নয়নের গতি শ্লথ করে এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দেয়।

পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও বৈশ্বিক উদ্যোগ

তবে এই অন্ধকার বাস্তবতার মধ্যেও আশার জায়গা রয়েছে। ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে সঠিক নীতি, সমন্বিত উদ্যোগ এবং সামাজিক অঙ্গীকার থাকলে পরিবর্তন সম্ভব। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সরকার ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্বে এমন উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যায় এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কার্যকর সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্বব্যাংকের কৌশল ও বাস্তবায়ন

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জেন্ডার কৌশলের আওতায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন ও সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং ভুক্তভোগী সহায়তা কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি দেশে ৯০টির বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় কাজ করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ প্রমাণ করে যে সহিংসতার কোনো স্থান নেই এবং নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে সবার জন্য সমবণ্টিত প্রবৃদ্ধির পথ খুলে যায়।

বাংলাদেশে ব্রাকের ভূমিকা

এই বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোগও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ব্রাক দীর্ঘদিন ধরে কিশোরী ও নারীদের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ সামাজিক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমাতে কাজ করে যাচ্ছে। ব্রাকের কর্মসূচিগুলো নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব উদ্যোগ দেখায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে নারীরা শুধু নিজেদের জীবনই বদলান না, বরং পরিবার ও সমাজের উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত হন।

নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নটি কেবল সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয় নয়; এটি সরাসরি অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গেও যুক্ত। যখন নারীরা নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারেন, আয় করতে পারেন এবং শিশুসেবা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার পান, তখন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি কমে এবং সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। জ্বালানি, পরিবহন ও নগর নিরাপত্তার মতো খাতে বিনিয়োগ নারীদের জীবনে সরাসরি ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজন

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের একক দায়িত্ব নয়। এর জন্য বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের সম্মিলিত ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতা দেখায়, কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, অনুপস্থিতি কমে এবং নারী কর্মীদের ধরে রাখা সহজ হয়।

এগিয়ে যাওয়ার পথ

এই ১৬ দিনের আন্দোলনের সময় একটি বিষয় নতুন করে স্মরণ করা জরুরি—নারীরা যখন নিরাপদভাবে বাঁচতে ও কাজ করতে পারেন, তখন পরিবার, ব্যবসা ও অর্থনীতি—সবাই লাভবান হয়। তবে এই অগ্রগতি একা সম্ভব নয় এবং একা টেকসইও হবে না। প্রমাণিত সমাধানে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে নারী ও কিশোরীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান ঘটে।

একসঙ্গে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে নিরাপত্তাই হবে সুযোগের মূল চাবিকাঠি, আর প্রতিটি নারী ও প্রতিটি সম্প্রদায় তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।