বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎসগুলোর একটি জলবিদ্যুৎ এখন ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে কখনো খরা, কখনো অতিবৃষ্টি ও বন্যা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বিপর্যস্ত করছে। ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের তোকান্তিন্স নদীতে অবস্থিত তুকুরুই বাঁধ তারই বড় উদাহরণ, যেখানে সময় আর প্রকৃতির আঘাতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে এসেছে
জলবায়ুর চাপে বিদ্যুৎ উৎপাদন
প্রায় চার দশক আগে নির্মিত তুকুরুই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প একসময় ছিল ব্রাজিলের শক্তি নিরাপত্তার প্রতীক। কিন্তু দীর্ঘ খরা, অস্বাভাবিক বৃষ্টি ও নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও পানির অভাবে টারবাইন ঘোরে না, আবার কোথাও অতিবৃষ্টিতে বন্যা ও ভূমিধসে যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ব্রাজিলে গত বছর জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে প্রায় তিন শতাংশ। দেশটির বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লেও জলবিদ্যুৎ থেকে পাওয়া শক্তি মোট সক্ষমতার অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। শুধু ব্রাজিল নয়, কানাডা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একই সংকটে পড়েছে।
বিশ্বজুড়ে কমছে জলবিদ্যুৎ নির্ভরতা
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতিহাসের অন্যতম বড় পতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিস্তৃত আকারে এই সংকট আগে দেখা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন শুধু ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, বরং বর্তমানের বাস্তবতা।

এই পরিস্থিতিতে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোকে বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। ব্রাজিলের মতো দেশ সৌর ও বায়ু শক্তির দিকে দ্রুত ঝুঁকছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির মোট বিদ্যুতের উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে এই দুই উৎস থেকে, যা আগে কখনো ঘটেনি।
পুরোনো বাঁধ সংস্কার না নতুন বাঁধ
জলবিদ্যুৎ নিয়ে বিতর্কও তীব্র হচ্ছে। পরিবেশবাদীদের একাংশের মতে, নতুন বাঁধ নির্মাণের চেয়ে পুরোনো বাঁধ সংস্কারই হওয়া উচিত। কারণ বড় বাঁধ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে, জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অন্যদিকে শক্তি খাতের প্রতিনিধিরা বলছেন, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে জলবিদ্যুৎ এখনো গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে নতুন ধরনের জলবিদ্যুৎ ব্যবস্থার সম্ভাবনাও দেখানো হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, চরম আবহাওয়ার যুগে জলবিদ্যুৎ আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নেই।
এই টানাপোড়েনে বিশ্ব এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিচ্ছন্ন শক্তির পুরোনো ভরসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে জলবায়ু বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই।



সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















