০৬:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ওয়ার্নার ব্রাদার্স লটে নেটফ্লিক্স শীর্ষদের উপস্থিতি: স্টুডিওর ভবিষ্যৎ নিয়ে লড়াই আরও তীব্র ক্যারিবীয় ছোট দ্বীপে বিপন্ন ইগুয়ানার ‘লাভ নেস্ট’: সংরক্ষণ প্রকল্পে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে ক্যালিফোর্নিয়ার ইভানপাহ বিতর্ক আবার সামনে: ‘স্ট্র্যান্ডেড’ সৌর সম্পদের খরচ কে দেবে? হাঁটিয়ে আনা হয়েছিল মোয়াই, ইস্টার দ্বীপের পাথর মূর্তির রহস্যে নতুন ব্যাখ্যা টেসলা-ধাঁচের ড্রাইভার-অ্যাসিস্টে সীমা টানতে নতুন মার্কিন বিল ফোনের পর্দায় বন্দী মানুষ, মঞ্চে একাকিত্বের নতুন ভাষা বন্ডি বিচে হনুক্কাহ উৎসবে ভয়াবহ হামলা, মুহূর্তেই আনন্দের আসর রক্তাক্ত বন্ডি বিচে রক্তাক্ত হামলা, উগ্র মতাদর্শের ছায়া দেখছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী দুই দিনের আলোচনায় ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের শান্তি-আলোচক দল মার্কিন সহায়তা কমায় থমকে গেল শিশুর জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা, কেনিয়ায় গভীর পুষ্টি সংকট

ইউক্রেন যুদ্ধ: ‘খারাপ চুক্তি’ মেনে নেওয়ার চেয়ে ‘চুক্তি না হওয়া’ ভালো—ইউরোপের সতর্কতা

দ্রুত সমঝোতা নয়, নিরাপত্তা-গ্যারান্টি চাই

ইউরোপের একাধিক দেশের নেতা স্পষ্ট করে বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তড়িঘড়ি একটি ‘শান্তি চুক্তি’ হলে সেটি ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাঁদের বক্তব্য—যে কোনো সমঝোতায় যদি দখলদারিত্বকে পুরস্কৃত করা হয়, বা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে তা কিয়েভ ও ইউরোপের পূর্ব সীমান্তের জন্য স্থায়ী বিপদের দরজা খুলে দেবে। এই অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতির চাপ বাড়ছে এবং ইউরোপ ভাবছে—ওয়াশিংটন সমর্থন কমালে কাকে কতটা অর্থ, অস্ত্র ও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

ইউরোপীয় রাজনীতিকরা এটিকে শুধু ‘সিজফায়ার’ নয়, ‘নিরাপত্তা স্থাপত্য’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, বাস্তবসম্মত নজরদারি ও কার্যকর প্রয়োগব্যবস্থা ছাড়া যুদ্ধবিরতি মানে সাময়িক বিরতি—যা পরিস্থিতি বদলালে ভেঙে পড়তে পারে। তখন ইউক্রেন আরও খারাপ অবস্থায় দ্বিতীয় দফা আক্রমণের মুখে পড়বে, আর ইউরোপকেও দেখাতে হবে—যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াই তারা কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

U.S. Offers Ukraine Security Guarantee in Bid to Break Russia Peace-Talks Deadlock - WSJ

ইউরোপের বড় ভয়—‘শান্তি’ যেন কাগজে কলমে থাকে, কিন্তু মাঠে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। যে প্রস্তাবগুলোতে মস্কোর সুবিধা স্থায়ী হয়ে যায় এবং বিনিময়ে এমন প্রতিশ্রুতি আসে যেগুলো যাচাই করা কঠিন—সেগুলো নিয়ে ইউরোপ সতর্ক। তাদের কাছে খরচটা খুব বাস্তব: বহু বছর বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যয়, সীমান্তদেশগুলোর ওপর বাড়তি চাপ, এবং নিজেদের রাজনীতিতে গভীর বিভাজন।

টেকসই সমঝোতার শর্তগুলো কী

ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, যে কোনো সমাধান ‘ন্যায়সঙ্গত’ ও ‘টেকসই’ হতে হবে এবং কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব। শুধু শক্ত ভাষা ব্যবহার করলেই হবে না—শর্তগুলো এমন হতে হবে, যাতে ইউক্রেন বাস্তবে টিকে থাকতে পারে। এখানে নজরদারি, প্রয়োগ, আর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মানদণ্ড—সবকিছুই মূল প্রশ্ন।

U.S. and Ukraine Try to Break Impasse Over Peace Deal With Russia - WSJ

আরেকটি বড় ইস্যু যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া: পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং যুদ্ধ থামলেও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা অর্থায়ন কীভাবে চলবে। ইউরোপের অনেক দেশ আরও বেশি করতে রাজি—কিন্তু তারা চাইছে না এমন কোনো ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির দায় নিতে, যা কয়েক মাস বা এক-দুই বছরের মধ্যে আবার ভেঙে পড়বে। পর্দার আড়ালে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন—কে কতটা অর্থ দেবে, আর যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ কমলে গ্যারান্টি দেবে কে।

এই বিতর্ক শুধু রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, ইউরোপের সক্ষমতা নিয়েও। ইউরোপ এড়াতে চায় এমন পরিস্থিতি, যেখানে তারা ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায় পেয়ে যাবে, কিন্তু প্রয়োজনীয় উৎপাদন, সরবরাহ-ব্যবস্থা ও কমান্ড কাঠামো তৈরি করতে পারবে না। সে কারণেই আলোচনায় তারা এমন সমঝোতা চায়, যা ঝুঁকি কমায়—ঝুঁকি স্থানান্তর করে না।

অর্থ, জব্দ সম্পদ, আর রাজনীতির হিসাব

EU freezes Russian assets ahead of pivotal Ukraine talks

ইউরোপ ইতিমধ্যে রাশিয়ার সম্পদ জব্দসহ বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আলোচনা তীব্র হচ্ছে—জব্দ সম্পদ কি ইউক্রেনের যুদ্ধ-সহায়তা ও পুনর্গঠনে ব্যবহার করা যাবে। সমর্থকদের যুক্তি, এতে ইউক্রেনের স্থিতি বাড়বে এবং ইউরোপের করদাতাদের ওপর স্থায়ী জরুরি-চাপ কমবে। তবে বিরোধীরা বলছেন, আইনি জটিলতা ও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রভাবের ঝুঁকি আছে।

একই সময়ে ইউরোপীয় সরকারগুলো নিজেদের জনগণকে একতাবদ্ধ রাখতে লড়ছে। যুদ্ধ ক্লান্তি, মূল্যস্ফীতি, বাজেট চাপ—সবই রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। বহু দেশে ডান ও বাম উভয় প্রান্তই এই ইস্যুতে বিভাজন তৈরি করেছে। নেতাদের আশঙ্কা, দুর্বল চুক্তি হলে জনমনে হতাশা আরও বাড়বে—বিশেষ করে যদি এক-দুই বছরের মধ্যে নতুন করে সংকট তৈরি হয়।

As Europe's power shrinks, its fear is growing – and the result is huge mistakes | Nathalie Tocci | The Guardian

তাই এখন ইউরোপের বার্তা এক ধরনের সতর্ক লেবেল: দ্রুততা কখনও নিরাপত্তার বিকল্প নয়। সামনের দিনগুলোর কূটনীতি দেখাবে, এই সতর্কতা আলোচনার কাঠামো বদলায় কি না, নাকি ইউরোপকে এমন সমঝোতার অর্থ ও দায় বহন করতে বলা হবে, যা তারা তৈরি করেনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওয়ার্নার ব্রাদার্স লটে নেটফ্লিক্স শীর্ষদের উপস্থিতি: স্টুডিওর ভবিষ্যৎ নিয়ে লড়াই আরও তীব্র

ইউক্রেন যুদ্ধ: ‘খারাপ চুক্তি’ মেনে নেওয়ার চেয়ে ‘চুক্তি না হওয়া’ ভালো—ইউরোপের সতর্কতা

০৫:৪০:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

দ্রুত সমঝোতা নয়, নিরাপত্তা-গ্যারান্টি চাই

ইউরোপের একাধিক দেশের নেতা স্পষ্ট করে বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তড়িঘড়ি একটি ‘শান্তি চুক্তি’ হলে সেটি ভবিষ্যতে আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাঁদের বক্তব্য—যে কোনো সমঝোতায় যদি দখলদারিত্বকে পুরস্কৃত করা হয়, বা ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে তা কিয়েভ ও ইউরোপের পূর্ব সীমান্তের জন্য স্থায়ী বিপদের দরজা খুলে দেবে। এই অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতির চাপ বাড়ছে এবং ইউরোপ ভাবছে—ওয়াশিংটন সমর্থন কমালে কাকে কতটা অর্থ, অস্ত্র ও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

ইউরোপীয় রাজনীতিকরা এটিকে শুধু ‘সিজফায়ার’ নয়, ‘নিরাপত্তা স্থাপত্য’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, বাস্তবসম্মত নজরদারি ও কার্যকর প্রয়োগব্যবস্থা ছাড়া যুদ্ধবিরতি মানে সাময়িক বিরতি—যা পরিস্থিতি বদলালে ভেঙে পড়তে পারে। তখন ইউক্রেন আরও খারাপ অবস্থায় দ্বিতীয় দফা আক্রমণের মুখে পড়বে, আর ইউরোপকেও দেখাতে হবে—যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াই তারা কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

U.S. Offers Ukraine Security Guarantee in Bid to Break Russia Peace-Talks Deadlock - WSJ

ইউরোপের বড় ভয়—‘শান্তি’ যেন কাগজে কলমে থাকে, কিন্তু মাঠে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। যে প্রস্তাবগুলোতে মস্কোর সুবিধা স্থায়ী হয়ে যায় এবং বিনিময়ে এমন প্রতিশ্রুতি আসে যেগুলো যাচাই করা কঠিন—সেগুলো নিয়ে ইউরোপ সতর্ক। তাদের কাছে খরচটা খুব বাস্তব: বহু বছর বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যয়, সীমান্তদেশগুলোর ওপর বাড়তি চাপ, এবং নিজেদের রাজনীতিতে গভীর বিভাজন।

টেকসই সমঝোতার শর্তগুলো কী

ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, যে কোনো সমাধান ‘ন্যায়সঙ্গত’ ও ‘টেকসই’ হতে হবে এবং কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব। শুধু শক্ত ভাষা ব্যবহার করলেই হবে না—শর্তগুলো এমন হতে হবে, যাতে ইউক্রেন বাস্তবে টিকে থাকতে পারে। এখানে নজরদারি, প্রয়োগ, আর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মানদণ্ড—সবকিছুই মূল প্রশ্ন।

U.S. and Ukraine Try to Break Impasse Over Peace Deal With Russia - WSJ

আরেকটি বড় ইস্যু যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া: পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং যুদ্ধ থামলেও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা অর্থায়ন কীভাবে চলবে। ইউরোপের অনেক দেশ আরও বেশি করতে রাজি—কিন্তু তারা চাইছে না এমন কোনো ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির দায় নিতে, যা কয়েক মাস বা এক-দুই বছরের মধ্যে আবার ভেঙে পড়বে। পর্দার আড়ালে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন—কে কতটা অর্থ দেবে, আর যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ কমলে গ্যারান্টি দেবে কে।

এই বিতর্ক শুধু রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, ইউরোপের সক্ষমতা নিয়েও। ইউরোপ এড়াতে চায় এমন পরিস্থিতি, যেখানে তারা ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায় পেয়ে যাবে, কিন্তু প্রয়োজনীয় উৎপাদন, সরবরাহ-ব্যবস্থা ও কমান্ড কাঠামো তৈরি করতে পারবে না। সে কারণেই আলোচনায় তারা এমন সমঝোতা চায়, যা ঝুঁকি কমায়—ঝুঁকি স্থানান্তর করে না।

অর্থ, জব্দ সম্পদ, আর রাজনীতির হিসাব

EU freezes Russian assets ahead of pivotal Ukraine talks

ইউরোপ ইতিমধ্যে রাশিয়ার সম্পদ জব্দসহ বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আলোচনা তীব্র হচ্ছে—জব্দ সম্পদ কি ইউক্রেনের যুদ্ধ-সহায়তা ও পুনর্গঠনে ব্যবহার করা যাবে। সমর্থকদের যুক্তি, এতে ইউক্রেনের স্থিতি বাড়বে এবং ইউরোপের করদাতাদের ওপর স্থায়ী জরুরি-চাপ কমবে। তবে বিরোধীরা বলছেন, আইনি জটিলতা ও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রভাবের ঝুঁকি আছে।

একই সময়ে ইউরোপীয় সরকারগুলো নিজেদের জনগণকে একতাবদ্ধ রাখতে লড়ছে। যুদ্ধ ক্লান্তি, মূল্যস্ফীতি, বাজেট চাপ—সবই রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। বহু দেশে ডান ও বাম উভয় প্রান্তই এই ইস্যুতে বিভাজন তৈরি করেছে। নেতাদের আশঙ্কা, দুর্বল চুক্তি হলে জনমনে হতাশা আরও বাড়বে—বিশেষ করে যদি এক-দুই বছরের মধ্যে নতুন করে সংকট তৈরি হয়।

As Europe's power shrinks, its fear is growing – and the result is huge mistakes | Nathalie Tocci | The Guardian

তাই এখন ইউরোপের বার্তা এক ধরনের সতর্ক লেবেল: দ্রুততা কখনও নিরাপত্তার বিকল্প নয়। সামনের দিনগুলোর কূটনীতি দেখাবে, এই সতর্কতা আলোচনার কাঠামো বদলায় কি না, নাকি ইউরোপকে এমন সমঝোতার অর্থ ও দায় বহন করতে বলা হবে, যা তারা তৈরি করেনি।