স্থানান্তর ও নিরাপদ আবাস—কীভাবে বদলাল ভাগ্য
ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি সংরক্ষণ প্রকল্প দেখাচ্ছে বাস্তব ফল—অত্যন্ত বিপন্ন লেসার অ্যান্টিলিয়ান ইগুয়ানা এখন অ্যাঙ্গুইলার কাছে একটি ছোট দ্বীপে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রিকলি পেয়ার ইস্ট কেই নামের ওই দ্বীপটিতে একসময় এই প্রজাতির ইগুয়ানা ছিল না বললেই চলে। এখন সেটিই হয়ে উঠছে প্রজননের নিরাপদ আশ্রয়। সংরক্ষণকর্মীরা বলছেন, এটি দ্বীপজীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে বিরল এক ইতিবাচক উদাহরণ।
বিজ্ঞানী ও স্থানীয় পরিবেশ সংগঠনগুলো প্রথমে অ্যাঙ্গুইলায় “বিশুদ্ধ” লেসার অ্যান্টিলিয়ান ইগুয়ানা খুঁজে বের করেন। পরে জেনেটিক পরীক্ষায় নিশ্চিত করে তাদের স্থানান্তর করা হয়। ছোট, শ্বাস নেওয়া যায় এমন ব্যাগে করে নৌকায় করে দ্বীপে নিয়ে যাওয়া—এই প্রক্রিয়াটি শুনতে সাধারণ মনে হলেও এটি ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। লক্ষ্য ছিল শিকারি-শূন্য পরিবেশে তাদের বাঁচা ও বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। আগে যেখানে নীরবতা ছিল, সেখানে এখন ইগুয়ানাদের চলাফেরা, গর্ত খোঁড়া, প্রজননের চিহ্ন—সবই দেখা যায়। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই পরিবর্তন শুধু সংখ্যায় নয়; পুরো আবাসের “জীবন্ত” হয়ে ওঠায়ও ধরা পড়ে।

এই প্রজাতির সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হলো ইনভেসিভ গ্রিন ইগুয়ানার সঙ্গে সংকরায়ন। গ্রিন ইগুয়ানা বেশি দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে। ফলে স্থানীয় প্রজাতির জেনেটিক লাইন দুর্বল হয়ে যায় এবং অনেক দ্বীপে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়। দ্বীপ পরিবেশে এ ধরনের চাপ খুব দ্রুত বড় ক্ষতি করতে পারে।
জেনেটিক বৈচিত্র্য বাড়াতে ডোমিনিকা থেকে কিছু স্ত্রী ইগুয়ানা আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়। ডোমিনিকায় এই প্রজাতির তুলনামূলক বড় জনসংখ্যা রয়েছে। লক্ষ্য শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়—স্বাস্থ্যকর জিনপুল ধরে রাখা, যাতে ভবিষ্যতে ছোট ফাউন্ডার গ্রুপের কারণে দুর্বলতা তৈরি না হয়। সংরক্ষণকর্মীরা বলছেন, একবারের উদ্ধার নয়—এটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ।
স্থানীয় মানুষের জন্য এটি পরিচয়ের গল্পও। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় প্রাণী না থাকলেও স্থানীয় অনন্য প্রজাতিই তাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। যখন উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার চোখে দেখা যায়, তখন শিক্ষাব্যবস্থা ও কমিউনিটি সমর্থনও শক্ত হয়।

এক প্রজাতির বাইরে কেন গুরুত্বপূর্ণ
দ্বীপভিত্তিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বিশ্বজুড়ে বাড়ছে, কারণ দ্বীপে শিকারি নিয়ন্ত্রণ এবং ইনভেসিভ প্রজাতি দমন তুলনামূলকভাবে সহজ। কোনো নিরাপদ দ্বীপে একটি প্রজাতির স্থিতিশীল জনসংখ্যা গড়ে উঠলে তা “ব্যাকআপ” হিসেবে কাজ করতে পারে—ঝড়, রোগ, বা অন্য দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয় হলে টিকে থাকার বীমা।
এখানে বিজ্ঞান ও কমিউনিটির যুগল ভূমিকা স্পষ্ট। জেনেটিক পরীক্ষা, ট্যাগিং, মনিটরিং—এসব প্রযুক্তিনির্ভর। কিন্তু স্থানীয় অংশগ্রহণ না থাকলে ফান্ডিং সাইকেল বা নীতি বদলে প্রকল্প থেমে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে লাভ শুধু ইগুয়ানার সংখ্যা নয়; একটি পুনরাবৃত্তিযোগ্য মডেলও তৈরি হয়—যা অন্য বিপন্ন দ্বীপ প্রজাতির ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে জলবায়ুর চাপ ও ভূমি ব্যবহারের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক সংরক্ষণ প্রকল্প আরও দরকার হবে, আবার সংঘাতও বাড়তে পারে—পর্যটন ও উন্নয়ন বনাম আবাস সংরক্ষণ। আপাতত প্রিকলি পেয়ার ইস্ট একটি নীরব উদাহরণ—সঠিক পরিকল্পনায় সংরক্ষণ কাজ করলে ফল পাওয়া যায়।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















