অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় বন্ডি বিচ। রোববার সন্ধ্যায় সেখানে ছিল আলো ও আনন্দের আয়োজন। ইহুদি সম্প্রদায়ের হনুক্কাহ উৎসব ঘিরে শিশুদের মুখে হাসি, গান, খাবার আর উৎসবের রঙে ভরে উঠেছিল সমুদ্রতীর। কিন্তু সেই উৎসবই অল্প সময়ের মধ্যে পরিণত হয় বিভীষিকায়।

আনন্দ থেকে আতঙ্কে রূপ নেওয়া সন্ধ্যা

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, উৎসব শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। প্রায় দশ থেকে বিশ মিনিট ধরে দুই বন্দুকধারী নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। নারী, পুরুষ, শিশুসহ অসংখ্য মানুষ আতঙ্কে দৌড়াতে থাকে। বালুর ওপর পড়ে থাকে জুতা, ব্যাগসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। ঘটনাস্থল দ্রুত রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।

হতাহতের সংখ্যা ও পুলিশের ভূমিকা

এই হামলায় অন্তত ষোলজন নিহত হয়েছেন বলে সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক দশ বছর বয়সী শিশু ও একজন ধর্মীয় নেতা। আহত হয়েছেন অন্তত চল্লিশজন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে এক হামলাকারী ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং আরেকজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়।

হামলাকারীদের পরিচয় ও প্রস্তুতি

পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত হয় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং ঘরে তৈরি বিস্ফোরক। অভিযুক্তরা আগে থেকেই এসব অস্ত্র জোগাড় করেছিল। সন্দেহভাজনদের একজন বৈধ অস্ত্রের মালিক ছিলেন এবং একটি বন্দুক ক্লাবের সদস্য ছিলেন বলেও জানানো হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত গাড়ি থেকে বিস্ফোরক ও উগ্রবাদী প্রতীকের উপস্থিতির তথ্যও মিলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

ঘটনার সময় অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে সমুদ্রে ছুটে যান, কেউ কেউ আশ্রয় নেন আশপাশের ভবনে। এক কিশোরী ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে সুইমিং পুলে আশ্রয় নেন এবং অপরিচিত একজনের ফোন ব্যবহার করে পরিবারকে খবর দেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গুলির শব্দ থামার পর বাইরে তাকিয়ে তিনি মাটিতে পড়ে থাকা মরদেহ দেখতে পান, যা তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।

নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর শত শত পুলিশ ও জরুরি সেবাকর্মী এলাকায় তল্লাশি চালায়। বন্ডি বিচ ও আশপাশের এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা এই হামলাকে গভীর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংঘাতের প্রভাব সমাজে বিভাজন ও সহিংসতা বাড়াচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি

পুলিশ হামলাকারীদের বাসস্থান ও অস্থায়ী ঠিকানায় অভিযান চালিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখছে হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত নেটওয়ার্ক বা উগ্রবাদী যোগাযোগ ছিল কি না। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।