০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪১) নির্বাচন নিয়ে ভারতের ‘নসিহতে’ বাংলাদেশের তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন? স্যাচুরেটেড চর্বি নিয়ে বিতর্ক: স্বাস্থ্যঝুঁকি নাকি ভুল বোঝাবুঝি জরিপ: জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট একের পর এক দেশে রাজনীতি ওলটপালট করছে জুলাইযোদ্ধাদের মৃত্যু ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সামান্তা শারমিন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২৪০ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ১ রাজধানীর আবাসিক হোটেল থেকে জাতীয় পার্টির নেতার মরদেহ উদ্ধার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেই স্বাভাবিক জীবন চলবে: পুলিশকে নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের বরিশালে তিন ঘণ্টায় তিন লাশ, আতঙ্কে নগরী ও আশপাশের এলাকা এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমির মৃত্যু: সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশের প্রাথমিক তথ্য

শুল্কের চাপেও ভারতের রপ্তানি উত্থান, বাণিজ্য আলোচনায় দিল্লির হাত শক্ত

মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ধাক্কা সামলিয়ে নভেম্বর মাসে ভারতের রপ্তানি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সরকারি বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি এক বছরে প্রায় বাইশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল উনিশ শতাংশেরও বেশি। এতে টানা এক দশকের মধ্যে নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড গড়েছে ভারত। এই অগ্রগতি ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় নয়াদিল্লিকে বাড়তি কৌশলগত সুবিধা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পুনরুদ্ধার
গত আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে পঞ্চাশ শতাংশে উন্নীত করার পর ভারতের রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রগামী রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তবে নভেম্বরের হিসাব সেই ধারা ভেঙে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক ছাড় না পাওয়ার পরও এই পুনরুদ্ধার প্রমাণ করছে যে ভারত বিকল্প বাজার ও খাতভিত্তিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চাপ সামলাতে পারছে।

বাণিজ্য আলোচনায় কৌশলগত সুবিধা
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, রপ্তানিতে এই উত্থান এবং দেশের ভেতরে শক্তিশালী চাহিদা দিল্লির ওপর দ্রুত সমঝোতার চাপ কমিয়েছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোয় ভারত এখন পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে পঁচিশ শতাংশে নামানোর দাবিতে জোরালো অবস্থান নিতে পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি কমানো এই যুক্তিকে শক্ত করেছে।

ইলেকট্রনিক্স ও উৎপাদনে জোর
যুক্তরাষ্ট্রগামী রপ্তানির বড় অংশ এসেছে শুল্কমুক্ত খাত থেকে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্য। এপ্রিল থেকে নভেম্বর সময়ে ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় আটত্রিশ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন নির্মাতাদের ভারতে উৎপাদন সম্প্রসারণ এই প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে তৈরি অধিকাংশ স্মার্টফোন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে, যা ভারতের উৎপাদন কৌশলের দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সেবা খাত ও মুদ্রার প্রভাব
পণ্যের পাশাপাশি সেবা রপ্তানিও ভারতের জন্য সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে। নভেম্বর মাসে সেবা রপ্তানি হয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা বড় ধরনের সেবা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে চলতি বছরে রুপির মান ডলারের বিপরীতে কমে যাওয়ায় শুল্কের চাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে, ফলে রপ্তানিকারকেরা দামের প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবিতে অনড় ভারত
উন্নত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দাবিতে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য আমদানি ও জেনেটিক ভাবে পরিবর্তিত ফসলের অনুমতির প্রশ্নে ছাড় দিতে নারাজ দিল্লি। সাম্প্রতিক ফোনালাপ ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি, যদিও কর্মকর্তারা একটি কাঠামোগত চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪১)

শুল্কের চাপেও ভারতের রপ্তানি উত্থান, বাণিজ্য আলোচনায় দিল্লির হাত শক্ত

০৪:৪০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ধাক্কা সামলিয়ে নভেম্বর মাসে ভারতের রপ্তানি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। সরকারি বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি এক বছরে প্রায় বাইশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল উনিশ শতাংশেরও বেশি। এতে টানা এক দশকের মধ্যে নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড গড়েছে ভারত। এই অগ্রগতি ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় নয়াদিল্লিকে বাড়তি কৌশলগত সুবিধা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পুনরুদ্ধার
গত আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে পঞ্চাশ শতাংশে উন্নীত করার পর ভারতের রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রগামী রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তবে নভেম্বরের হিসাব সেই ধারা ভেঙে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক ছাড় না পাওয়ার পরও এই পুনরুদ্ধার প্রমাণ করছে যে ভারত বিকল্প বাজার ও খাতভিত্তিক বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চাপ সামলাতে পারছে।

বাণিজ্য আলোচনায় কৌশলগত সুবিধা
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, রপ্তানিতে এই উত্থান এবং দেশের ভেতরে শক্তিশালী চাহিদা দিল্লির ওপর দ্রুত সমঝোতার চাপ কমিয়েছে। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোয় ভারত এখন পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে পঁচিশ শতাংশে নামানোর দাবিতে জোরালো অবস্থান নিতে পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি কমানো এই যুক্তিকে শক্ত করেছে।

ইলেকট্রনিক্স ও উৎপাদনে জোর
যুক্তরাষ্ট্রগামী রপ্তানির বড় অংশ এসেছে শুল্কমুক্ত খাত থেকে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক পণ্য। এপ্রিল থেকে নভেম্বর সময়ে ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় আটত্রিশ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বখ্যাত স্মার্টফোন নির্মাতাদের ভারতে উৎপাদন সম্প্রসারণ এই প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারতে তৈরি অধিকাংশ স্মার্টফোন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে, যা ভারতের উৎপাদন কৌশলের দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সেবা খাত ও মুদ্রার প্রভাব
পণ্যের পাশাপাশি সেবা রপ্তানিও ভারতের জন্য সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছে। নভেম্বর মাসে সেবা রপ্তানি হয়েছে প্রায় পঁয়ত্রিশ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, যা বড় ধরনের সেবা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে চলতি বছরে রুপির মান ডলারের বিপরীতে কমে যাওয়ায় শুল্কের চাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে, ফলে রপ্তানিকারকেরা দামের প্রতিযোগিতায় সুবিধা পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবিতে অনড় ভারত
উন্নত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দাবিতে কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য আমদানি ও জেনেটিক ভাবে পরিবর্তিত ফসলের অনুমতির প্রশ্নে ছাড় দিতে নারাজ দিল্লি। সাম্প্রতিক ফোনালাপ ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি, যদিও কর্মকর্তারা একটি কাঠামোগত চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলছেন।