সারসংক্ষেপ
ছাত্রনেতা হত্যার ঘটনায় নির্বাচনপূর্ব অস্থিরতা
প্রতিবাদে গণমাধ্যম কার্যালয়, রাজনৈতিক স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ
সরকার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে
ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর (রয়টার্স) — জনপ্রিয় এক ছাত্রনেতার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাতভর বিক্ষোভের পর শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন করে অস্থিরতা ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেখানে নিহত ওই নেতা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
শুক্রবার সকালে দেশের অনেক স্থানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় জাতীয় পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তাঁরা স্লোগান দেন এবং ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দেন।
১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মুসলিম-প্রধান এই দক্ষিণ এশীয় দেশের বাসিন্দারা জানান, দিনের পরের অংশে আবারও সহিংসতা ছড়াতে পারে বলে তাঁরা উদ্বিগ্ন।
গত বছর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও দিনের পরের অংশে সহিংসতার আশঙ্কার কথা বলেছে।
তবে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার জাতীয় মসজিদে খেলাফত মজলিস নামে একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের ডাকে প্রায় দেড় হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেন।
নিহত ৩২ বছর বয়সী শরীফ ওসমান হাদি ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চ বা প্ল্যাটফর্ম ফর রেভল্যুশনের মুখপাত্র। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। নির্বাচনী প্রচার শুরু করার সময় গত শুক্রবার ঢাকায় মুখোশধারী হামলাকারীরা তাঁকে মাথায় গুলি করে।
ভারতবিরোধী বক্তব্যে পরিচিত হাদিকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছয় দিন থাকার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
ঢাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা দেশের বৃহত্তম দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সেনা মোতায়েন করা হয় এবং ভেতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন দমকলকর্মীরা।
সরকারের বক্তব্য
শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।
সংস্কার বিলম্বিত হওয়া নিয়ে নতুন করে আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশ নিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অস্থিরতার হুঁশিয়ারির মধ্যে সরকার চাপের মুখে রয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘কয়েকটি প্রান্তিক গোষ্ঠীর’ দ্বারা সংঘটিত সব ধরনের গণহিংসার বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যারা বিশৃঙ্খলায় বাঁচে এবং শান্তিকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের হাতে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।
ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও নিউ এজের কার্যালয়ে হামলার জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানে সত্যের ওপর হামলা। পূর্ণ বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় আলাদা এক ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও নিন্দা জানিয়েছে সরকার এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছে।
এর আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস শনিবারকে শরীফ ওসমান হাদির স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরেও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিক্ষোভকারীরা ভারতের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায়।
এই অস্থিরতা এমন সময় দেখা দিয়েছে, যখন চলতি সপ্তাহে নতুন করে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বুধবার ঢাকায় শত শত বিক্ষোভকারী ভারতের হাইকমিশনের দিকে মিছিল করে ভারতবিরোধী স্লোগান দেন এবং একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার দাবি জানান।
সারাক্ষণ ডেস্ক 



















